Home আন্তর্জাতিক বিতর্কিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান ফিলিস্তিনের

বিতর্কিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান ফিলিস্তিনের

1304
0
SHARE

আলোচিত ও বিতর্কিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার বাহরাইনে দুই দিনের এক কর্মশালায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও জামাতা জ্যারেড কুশনার ‘শান্তির জন্য সমৃদ্ধি’ শীর্ষক এ পরিকল্পনা ঘোষণা

প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক বিনিয়োগের কথা বলা হলেও পরিকল্পনার রাজনৈতিক অংশ পরে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের কথিত এ শান্তি পরিকল্পনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন। আর জাতিসংঘ বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র পথ।

যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার অধিকৃত পশ্চিম তীরে রাস্তায় নামে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। পশ্চিম তীরের পাশাপাশি এ দিন গাজার খান ইউনুস এবং বেথেলহেমসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করে শত শত মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল-বিরোধী স্লোগান দেয়ার পাশাপাশি ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেন তারা। এসময় বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী।

একইদিন ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বাহরাইনেও বিক্ষোভ করে শত শত মানুষ। ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে ইসরাইল-বিরোধী স্লোগান দেয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানান তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্দোলকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এতে আহত হন অনেকে।

বাইরে তীব্র বিক্ষোভ আর কঠোর সমালোচনার মধ্যেই রাজধানী মানামার একটি হোটেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও জামাতা জ্যারেড কুশনারের নেতৃত্বে শুরু হয় দুই দিনের অর্থনৈতিক কর্মশালা।

এই কর্মশালায় বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করেন কুশনার। ‘শান্তির জন্য সমৃদ্ধি’ শীর্ষক এই পরিকল্পনায় মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল বিনিয়োগের ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, এর মাধ্যমে রাস্তা উন্নয়ন, সীমান্ত ক্রসিং, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পর্যটন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করা হবে। এসব প্রকল্পে লাখ লাখ ফিলিস্তিনির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হলেও, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বা ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

জ্যারেড কুশনার বলেন, ফিলিস্তিনিদের বলতে চাই, শুধু মাত্র আপনাদের জন্যই এই কর্মশালার আয়োজন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সমাধান ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কখনোই সম্ভব নয়। ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে ফিলিস্তিনিদের সব ধরনের সহায়তা করা হবে। আমি আজকে রাজনৈতিক কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসি নি। শুধু ফিলিস্তিনিদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে এসেছি। অনেকেই আমাদের এই প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনা করছে। আমি তাদের বলতে চাই, এটা শুধু একটা চুক্তি নয়, এটি তাদের উন্নয়নের সেরা সুযোগ। মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এটি বড় একটা সুযোগ। এই চুক্তি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য বদলে যাবে। এখানকার মানুষ উন্নত জীবন পাবে। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ পরিকল্পনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন। তারা বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এ মিথ্যার ফুলঝুড়ি মন ভোলাতে পারবে না ফিলিস্তিনিদের। দেশটির স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেন, মানামায় অর্থনৈতিক কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইসমাইল হানিয়া বলেন, ট্রাম্পের ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। ফিলিস্তিনের একবিন্দু মাটিও ছেড়ে দেবো না। তারা রাজনৈতিক ইস্যুকে অর্থনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে। অর্থের লোভ দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। সবার আগে, ইসরাইলের অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিনকে মুছে ফেলার যে ষড়যন্ত্র চলছে তা কোনোদিনই সফল হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজে দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের এ সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানান তিনি।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত বন্ধে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে রাজনৈতিক সমাধানে না আসা খুবই দুঃখজনক। আমি মনে করি, দীর্ঘ দিনের এ সঙ্কট নিরসন দ্বিরাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র পথ। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সব পক্ষের শান্তিপূর্ণ স্বহাবস্থান সবার আগে জরুরি।

ইসরাইলের পেশি-শক্তি আর অবরোধের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়েছে ফিলিস্তিন। বর্তমানে দেশটির জিডিপি শূণ্যের কোঠায়। মোট বেকারত্ব ৩১ শতাংশ। এক্ষেত্রে গাজার চিত্র আরো ভয়াবহ। সেখানকার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ ত্রাণের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনের এই অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।