Home জাতীয় রোহিঙ্গারা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গারা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

1116
0
SHARE

রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত না পাঠাতে পারলে আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে তিনটি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। চুক্তির একটিতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে, দুই বছরে মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার নানা তালবাহানা সৃষ্টি করে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য নুর মোহাম্মদ। জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, মায়ানমারের ১১ লক্ষাধিক নাগরিক অনির্দিষ্টকালের জন্য অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্থান করা দুরুহ ব্যাপার।

তিনি বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এই সকল বাস্তুচ্যুত অধিবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই অসন্তুষ্টিতে ভুগছে। তাদের অনেক অভাব অভিযোগ রয়েছে। এদেরকে অতিদ্রুত ফেরত না পাঠাতে পারলে আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে আমরা প্রথম থেকেই একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগিরকদের ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমারে তৈরি ঘরবাড়ি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পর্যব্ক্ষেণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছর আগস্টে মিয়ানমার সফর করেন। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করার জন্য ইতোমধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে দু’দেশের সন্মতিক্রমে প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে গত বছর ২৫ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকরা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি হয়নি। ফলে ২৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়নি।

‘বিএনপি-জামাতের সময় দেশ দুর্নীতির চক্রে নিপাতিত’ সরকারি দলের সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, যখন বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্বাসন এবং পুনর্গঠনের কাজ করছিলেন ঠিক সে সময়েই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে আমাদের অগ্রগতি রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২১ বছর ধরে চলে সামরিক ও স্বৈরাশাসকের লুটপাট তন্ত্র। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। এরপর দেশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।

তিন আরো জানান, ক্ষমতায় এসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক ইস্যু দ্রুততার সাথে সমাধান করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এই অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতির চক্রে নিপাতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের নামে তারেক জিয়া চালাতে থাকে লুটপাট। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের প্রায় সবগুলোতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদে দুই তৃতীয়াংশের অধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। আমরা আবার দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য মনোনিবেশ করি। ২০০৯ সাল থেকে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বিগত ১০ বছর ধরে এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।

‘পাঁচ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থান’ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আমাদের সরকার আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সরকার দেশের বেকারত্ব দূর করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মকে মানব সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০)-এর কৌশল ও লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি জানান, টেকসই উপায়ে মাঝারি ও চরম দারিদ্র্য নিরসনের সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রকৃত মজুরি প্রদান। এই লক্ষ্যে এই সব বেকার তরুণদের মানবসম্পদ হিসেবে উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে আমরা বেকার যুবকদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি।

‘বিদ্যুৎখাতের অগ্রগতি’ বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিদ্যুত অপরিহার্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্বপূর্ণ খাত ছিল বিদ্যুত। ৯ম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন বিদ্যুত উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ক্যাপটিভসহ ২১ হাজার ৬২৯ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

তিনি আরো জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর হতে বিদ্যুত খাতের উন্নয়নও স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা প্রায় ১২ হাজার হতে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকায় বর্তমানে সারাদেশে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। তবে গ্রীষ্মকালে সঞ্চালন ও বিতরণ নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতা, গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য মাঝে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটে।