প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ জুলাই তার চীন সফর শুরু করছেন। এ সফরে তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেবেন। লিওয়ানিং প্রদেশের দালিয়ান শহরে এই শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলন শেষে তিনি বেইজিং যাবেন। ৩-৪ জুলাই দু’দেশের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এ সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুটি প্রাধান্য পাবে। প্রধানমন্ত্রী তার এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার গড়িমসি করছে। রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেলেও শুধু চীনের (এবং রাশিয়ার) কারণে মিয়ানমার নানা ফন্দি-ফিকির করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো থাকলেও চীন শুধু ব্যবসায়িক ও তার নিজস্ব স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বন করেছে। বাংলাদেশের পাশে সেভাবে চীন দাঁড়ায়নি। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর বাংলাদেশের জন্য একটা সম্ভাবনা তৈরি করবে।
চীনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এটা বোঝাতে হবে যে, চীন যদি মিয়ানমারের ওপর কিছুটা হলেও চাপ প্রয়োগ করে এ সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী না হয়, তাহলে তা চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রকারান্তরে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের’ (ওবিওআর) যে মহাপরিকল্পনা, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও নানা সংকট তৈরি করবে।
চীন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম শক্তি। এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে চীনের একটি বড় ভূমিকা আছে। বাংলাদেশ চায় চীন তার এ ভূমিকাটা পালন করুক। মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘকাল তাদের আশ্রয় দিতে পারে না।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফেরত নিতে বাধ্য। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওআইসির ১৪তম শীর্ষ সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান সমর্থন পেয়েছে।
ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আবুধাবি সম্মেলনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করারও একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অতীতে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের, বিশেষ করে বসনিয়ার এবং হুতু-তুতসি গণহত্যাকারীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার হয়েছে।
বাংলাদেশ এই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা গণহত্যাকারীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারের কথা বলেছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফরে বাংলাদেশের জন্য চীনা নেতাদের এটা বোঝানোর একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে যে, রোহিঙ্গা সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে মিয়ানমারের নেতাদের বিচারের দাবি আরও শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশের তখন করার কিছু থাকবে না। একমাত্র চীনই পারে মিয়ানমারকে বোঝাতে।