Home আন্তর্জাতিক উত্তর আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ফোবানাতে আবার বিভক্তি

উত্তর আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ফোবানাতে আবার বিভক্তি

1288
0
SHARE

দৃঢ় নেতৃত্বের অভাবে ফোবানাতে আবার বিভক্তি, আবার ভাঙ্গন

উত্তর আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ফোবানাতে আবার শুরু হয়েছে বিভক্তি, ভাঙ্গন, কোন্দল, দলাদলি, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্বাচন আর কাদা ছড়াছড়ি। অথচ গত দশ বছরে ফোবানাতে কোন বিভক্তি দেখা যায়নি। শোনা যায় যে ফোবানাতে দৃঢ় নেতৃত্বের অভাবে আজ তার এই দৈন্যদশা। গত সম্মেলনের বাৎসরিক সভার আগের রাতে তথাকথিত গিরিংগিবাজ সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেয় যে তারও আগের বছর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মতৈক্য থেকে সরে এসে তাঁরা বেইমানের মতন কাজ করবেন এবং যাকে কথা দেয়া হয়েছিল তাঁকে বাদ দিয়ে প্রাক্তন একজন চেয়ারম্যানকে আবারও চেয়ারম্যান করবেন। এতে স্বভাবতই সাধারণ সদস্যরা যারপরনাই আশ্চর্য হন তবে এই গিরিংগিবাজ সিন্ডিকেটের শেকড় এতই গভীর যে তাদের কথা মতই এই পুতুল চেয়ারম্যানকে চেয়ারে বসানো হয়। বর্তমান চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত জীবনে একজন সৎ এবং স্বজ্জন ব্যক্তি বটেন তবে নেত্বৃত্বের ব্যাপারে তিনি মানসিকভাবে অস্বাভাবিক দূর্বল। এত বড় সংগঠন চালানোর জন্য যে দৃঢ় নেত্বৃত্ব, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, জ্ঞান, তাঁর কিছুই যেন তাঁর মধ্যে নেই। তিনি নিজেকে সব সময় ফোবানা প্রেমিক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। ভাবখানা এমন যেন তিনি ছাড়া আর কেউ ফোবানাকে ভালোবাসে না! তাঁর এই মন্তব্যে যে প্রাক্তন চেয়ারম্যানরা আড়ালে হাসাহাসি করেন তা তিনি জানেন না। তিনি কথা বলতে প্রচুর পছন্দ করেন, মিটিং করলে নিজেই নিয়ে নেন সিংহভাগ সময়। তিনি এতই দূর্বল যে নিজে কোনদিন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত তিনি তাঁর পছন্দ মত কিছু প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের সাথে আগে শলা পরামর্শ করে নেন তারপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর বন্ধুরাও তাঁকে চাটুকারদের মতন বুদ্ধি দেন। বিশেষ করে তাঁর শহর এবং পাশের শহরের দুজন প্রাক্তন চেয়ারম্যান তাঁর চেলার মতন সব কথাতেই সায় দেন। এটাই নাকি তাঁর বিশাল শক্তি। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ দ্বিমত প্রকাশ করলেই তাঁর গোস্যা হয় এবং তিনি অভিমান করেন, মন খারাপ করেন, একে ওকে নালিশ শুরু করেন। তিনি চান সব সময় সবাই তাঁর সাথে একমত হবেন, তাকে প্রচুর প্রশংসা করবেন। কেউ যদি তাঁকে একবার সামান্য প্রশংসা করে কথা বলেন, তা হলেই তিনি গদ্গদ হয়ে যান। তিনি অবশ্য গর্ব করে বলেন যে তিনি প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের শ্রদ্ধা করেন বিধায় তাদের সাথে আলাপ না করে কোন সিদ্ধান্ত নেন না। কিন্তু তাঁর এই ব্যবহারে যে তাঁর দেউলিয়াত্ব কতটুকু প্রকাশ পায় তা তিনি ঠাহর করতে পারেন না। কারো এই কথা বিশ্বাস না হলে তাঁকে ফোন করে ফোবানা সম্পর্কে একটি কঠিন প্রশ্ন করুন, দেখবেন তিনি সরাসরি জবাব দিতে পারবেন না।

তাঁর এই নেত্বৃত্বের অভাবে আরেকজন দাঁড়িয়ে গেছেন ফোবানার নাম নিয়ে একই শহরে। অদ্ভুত এক সার্কাস! ফোবানার একটি ট্রেডমার্ক আছে। সেই ট্রেডমার্কের ভিত্তিতে শুধু একটি মাত্র সংগঠন ফোবানা পরিচালনা করতে পারবে, সম্মেলন করতে পারবে উত্তর আমেরিকায়। কে শোনে কার কথা? অর্থের জোরই বড় জোর। যেখানে ফোবানার মূল দল নাসাউ কলিসিয়ামের মতন বিশাল জায়গায় ফোবানা সম্মেলনের আয়োজন করছে, সেখানে আরেক দল একটি হোটেলে ছোট্ট একটি বলরুমে গোটা কয়েক শত মানুষ নিয়ে আরেকটি ফোবানা করার ঘোষণা দিয়ে বসে আছে। তারা অন্য যে কোন নামে সম্মেলন করতে পারতেন। কিন্তু ফোবানা নামের আকর্ষণ তারা ছাড়তে পারে নি।

ফোবানা দ্রুত হারিয়ে ফেলছে তার জৌলুশ। হারিয়ে ফেলছে তার লক্ষ্য। নোঙরহীন নৌকার মতন এদিক ওদিক যেন ভাসছে এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি। অথচ এই সংগঠনটিই হতে পারত উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় সংগঠন। এখন কতিপয় হলুদ সাংবাদিক পেছন থেকে উস্কানি দেন, মাঝে মাঝে উস্কানিমূলক লেখা ছাপেন ফোবানাকে নিয়ে, মাঝে মাঝে তাদের পছন্দের কয়েকজন নেতার গুণগান করে লেখা ছাপান পয়সার বিনিময়ে। এখন তারাও ফোবানা নিয়ে পলিটিক্স করেন। যেন কোন পরিত্রাণ নেই এদের হাত থেকে।

সুস্থ চিন্তার, মন মানসিকতার ভদ্র কিছু নেতা যদি না এগিয়ে আসেন হাল ধরতে এই ফোবানার তবে এর ভবিষ্যৎ একেবারেই অন্ধকার মনে হচ্ছে। নতুন কিছু নেতা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছেন অর্থের জোরে। তারা নিজেরা ব্যবসায়ী তাই মনে করেন ফোবানাও হতে হবে আরেক ব্যবসা। তাদের কথা ফোবানা হচ্ছে আমেরিকাকে নিয়ে, এখানে বাংলাদেশের কোন স্থান নেই। অথচ বাংলাদেশের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের আলোয় আলোকিত বাংলাদেশের ইতিহাসকে এই উত্তর আমেরিকায় তুলে ধরার সাথে সাথে বাংলাদেশের সাথে একটি বন্ধন সৃষ্টিই ফোবানার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ওই স্টেজে গিয়ে বক্তৃতা দেয়া, সেলিব্রিটিদের সাথে সেলফি তোলা, খবরের কাগজে ছবি ছাপানো আর সিঙ্গারা সমুচা খেয়ে নিউ ইয়র্কে মাঝে মাঝে সংবাদ সম্মেলন করার জন্য ফোবানা করার দরকার আছে কি? এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।

এবার মূল ফোবানার আয়োজকেরা নিউ ইয়র্কের নাসাউ কলিসিয়ামে এক অভুতপূর্ব সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এমন ফোবানা আগে কখনো হয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। সেই রকম একটা সংগঠনের নেতৃত্ব যে এমন নড়বড়ে তা বাস্তবেই অকল্পনীয়। কথিত আছে যে ফোবানার তথাকথিত নেতারা অপেক্ষায় আছেন কবে বাৎসরিক সভা হবে আর কবে আবার নির্বাচন হবে। কিন্তু সম্মেলনের আয়োজকদের যে অর্থ সংকুলান করতে প্রাণ ওষ্ঠাগত তাতে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই! এই হচ্ছে ফোবানার মূল চিত্র। এই বছর নতুন সংগঠন যোগ করার জন্য নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। ফোবানার ওয়েবসাইটে দু চারটা ছবি দেয়া ছাড়া হয়নি আর কোন কাজ। এমনকি শোনা যাচ্ছে যে অনেক মূল্যবান তথ্য যেমন মিটিং-এর মিনিটস, এমেন্ডমেন্ট তাও নাকি ওয়েব সাইটে দেয়া হয়নি। ফোবানার অনেক নেতারাই আবার রাজনীতির সাথে খুব ভালোভাবে জড়িত। ফোবানাতে রাজনীতি না নিয়ে এলেও তাদের সময় নেই ফোবানাকে নিয়ে ভাবার। অথচ তাঁরাই ফোবানার গুরুত্বপূর্ন স্থান গুলো দখল করে বসে আছেন। সব মিলিয়ে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।

ফোবানাকে ভালোবাসে, ফোবানার ভালো চায় এমন মানুষ এখনও আছে। তারা চায় এই সংগঠন আরো সুসংগঠিত হোক, শুধু একটি মাত্র ফোবানা থাকুক এবং সবাই মিলে বছরে মাত্র একটি সম্মেলন হোক উত্তর আমেরিকায় মহা ধুমধাম করে। তারা চায় মুছে যাক ফোবানার সব দূর্নাম, বয়ে যাক ঐক্যের সুবাতাস।

মনিরুজ্জামান খান
নর্থ আমেরিকা প্রতিনিধি