Home এইমাত্র কেউ গুজবে কান দেবেন না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কেউ গুজবে কান দেবেন না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

598
0
SHARE

কোনো প্রকার গুজবে কর্ণপাত না করে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্‌বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে।

মঙ্গলবার সকালে লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্সে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য দেশবাসীকে তাদের বাড়িঘর এবং চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখারও আহ্‌বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দয়া করে কেউ গুজবে কান দেবেন না এবং আইনকে নিজের হাতে তুলে নেবেন না, বরং যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের পুলিশে সোপর্দ করুন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। তিনি বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে একজন মাকে পিটিয়ে মেরে ফেলল, আজ সেই

মায়ের শিশুটির কী অবস্থা? কাজেই সবার কাছে আমার আবেদন, আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যদি আপনারা কাউকে দোষী মনে করেন, তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার দরকার নেই বরং তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিন।’

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজব শুনে কোনো নিরপরাধ মানুষকে মেরে ফেলা গর্হিত কাজ, এটা হত্যাকান্ডের শামিল। এ প্রসঙ্গে তিনি পত্রপত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পত্রপত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কাছে আমার একটা অনুরোধ, প্রকৃত ঘটনা না জেনে সংবাদ পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না।’

মশা ঠেকাতে সবাইকে

সচেতন হওয়ার আহ্‌বান

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে সক্রিয় হওয়ার এবং মশার বংশ বিস্তার রোধে বাড়ি, কর্মস্থল ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখার আহ্‌বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিশেষ জরুরি বৈঠকে যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্‌বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবাইকে আহ্‌বান করব, নিজের ঘরবাড়ি, আশপাশের রাস্তাঘাট যেন পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন থাকে, সে ব্যপারে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়। সবাই যদি পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে আমরা এখান থেকে রক্ষা পেতে পারব।’

বৈঠকের শুরুতেই দলের সভাপতি শেখ হাসিনা টেলিকনফারেন্সে বলেন, ‘ইদানীং একটি উপদ্রব দেখা দিয়েছে- ডেঙ্গু। ডেঙ্গুজ্বরটা যখন শুরু হয়, তখন আমরা দেখেছি, বিশেষ করে শহর এলাকায়, ঢাকা শহরের এর বিস্তার ছিল।

‘তবে এটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদের সময় মানুষ বাড়িতে যাবে। যারা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বা যাদের শরীরে এই বীজটা রয়ে গেছে, তারা আবার নিজ নিজ এলাকায় গেলে সেখানে যদি মশা কামড় দেয়, তাহলে হয়তো অন্য কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।’

দুধ বিতর্কের পেছনে

‘কারসাজি’ কী না, সন্দেহ

বিএসটিআই নিবন্ধিত পাস্তুরিত দুধে ‘মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান’ থাকার অভিযোগের পেছনে ‘আমদানিকারকদের কারসাজি’ আছে কী না- সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিশেষ জরুরি বৈঠকে যুক্ত হয়ে সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গের সঙ্গে পাস্তুরিত দুধ নিয়েও কথা বলেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘আমি লক্ষ করলাম, হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই দুধ পরীক্ষা করে একজন বলে দিল যে, দুধ ব্যবহারযোগ্য নয়। সঙ্গে সঙ্গে রিট করা হয়। সে কারণে বলে দেয়া হয় পাঁচ সপ্তাহ দুধ ব্যবহার করা যাবে না বা পাস্তুরিত করা যাবে না!’

সরকার যখন দুধের খামার করে গ্রামের মানুষকে স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করছে, পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে জোর দিচ্ছে, তখনই ‘হঠাৎ একেকটা তথ্য দিয়ে’ দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচির পথে কেন ‘বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে’- সেই প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এখানে আমার মনে হচ্ছে আমদানিকারক যারা, তাদের কোনো কারসাজি আছে কী না, এটাও দেখা উচিত বা তারা কোনোভাবে উৎসাহিত করছে কী না।’

দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নিয়ে ‘গুজব ছড়িয়ে’ রপ্তানি কাজে সমস্যা সৃষ্টি করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘যারা এই বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত দেন, তাদেরও ভাবা উচিত, ভেবে দেখা উচিত যে হঠাৎ একটা কথা বলে গুজব ছড়িয়ে আমাদের রপ্তানি কাজে সমস্যা সৃষ্টি করা, দেশের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাক- এই আতঙ্ক সৃষ্টি করা বা দেশে উৎপাদিত পণ্যের মান সম্পর্কে কথা বললে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

কমনওয়েলথে নেতৃত্ব

দেয়ার আহ্‌বান

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও কমনওয়েলথ ‘বস্নু চার্টার’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে কমনওয়েলথে নেতৃত্ব দেয়ার আহ্‌বান জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি।

লন্ডনের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এই আহ্‌বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বর্তমানে লন্ডনে আছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেছেন, কমনওয়েলথ বস্নু চার্টার এবং জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয়া উচিত।’

‘কমনওয়েলথ বস্নু চার্টার’ মহাসাগর-সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান এবং টেকসই মহাসাগর উন্নয়নের লক্ষ্যে কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত ৫৩টি সদস্য দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার একটি অঙ্গীকারনামা।

প্রেস সচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ মহাসচিবের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন এবং বলেছেন, তার সরকার এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও কমনওয়েলথ মহাসচিব তথ্য প্রযুক্তি খাত এবং এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয়

দেয়া বিরাট বোঝা

মিয়ানমার থেকে জোর করে বাস্তুচু্যত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়াটা বাংলাদেশের জন্য ‘এক বিরাট বোঝা’ হিসেবে উলেস্নখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ঢাকা দীর্ঘায়িত এই রোহিঙ্গা সমস্যাকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করতে চায়।

লন্ডনের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় লর্ড আহমেদ অব উইম্বলডন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া আমাদের জন্য এক বিরাট বোঝা। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এটির সমাধান করতে চাই।’ প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এ কথা জানান।

লর্ড আহমেদ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ এবং জাতিসংঘবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।