Home এইমাত্র জোটের গুরুত্ব বুঝতে পারছে ঐক্যফ্রন্ট

জোটের গুরুত্ব বুঝতে পারছে ঐক্যফ্রন্ট

644
0
SHARE

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে মতভিন্নতা দেখা যায়। শপথ প্রসঙ্গে জোটের দলগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হতে থাকে। একটি দল জোটও ছেড়ে যায়। বাকিরা যে যার মতো কর্মসূচি দিচ্ছে। তবে ঈদুল আজহার আগে ও পরে জোটের কয়েকজন নেতাকে একসঙ্গে দেখা যায়। এই নেতারা বলছেন, জোটের দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার গুরুত্ব তারা আবার অনুধাবন করছেন।

গত এপ্রিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে কয়েকটি কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে সে মাসেই বিএনপির শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়া নিয়ে জোটের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। জোটের নেতারা প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের সেসব কর্মসূচি আর হয়নি। এরপরে অবশ্য এ জোটের কোনো কার্যক্রমই ছিল না।

ঈদুল ফিতরের পরে ১০ জুন ঐক্যফ্রন্টের একটি বৈঠক হলেও জোটের আহ্বায়ক ও কামাল হোসেন উপস্থিত না থাকায় সেখানে ফলপ্রসূ কিছু হয়নি। এরপরে তারা আর একসঙ্গে হননি। পৃথক পৃথক কর্মসূচি দিয়ে তারা রাজনীতির মাঠে আছেন।

গত ১০ জুলাই ঐক্যফ্রন্টের নানান অসংগতির কথা উল্লেখ করে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। তিনি অবশ্য তার মাসখানেক আগে জোট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। তবে এ নেতার জোট ছাড়া নিয়ে অন্যদের তেমন একটা মাথা ব্যথা দেখা যায়নি।

এ ছাড়া গত ২২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ড. কামাল হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ঐক্যফ্রন্ট হয়েছিল। সে মূল লক্ষ্য তো আমাদের থাকবেই। ওটা ইলেকশনের ব্যাপারে একটা উদ্যোগ ছিল।’

ঈদুল আজহার আগে ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির নেতা আবদুল মঈন খান ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। রব চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে তাঁকে দেখতে যান ঐক্যফ্রন্টের এসব নেতারা। বিএনপির এক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সেখানে জোট প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়। মির্জা ফখরুল ও সুব্রত চৌধুরী উভয়েই জোটকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে কথা বলেছেন। দূরত্ব আর বাড়ানো যাবে না বলে নেতারা ভাবছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সামনের বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের বিষয়টি গুরুত্ব পেতে যারে বলে জানায় বিএনপির এই সূত্র।

এ ছাড়া ঈদের পরদিন মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির নেতা মঈন খানের বাসায় কূটনীতিকদের নৈশভোজে গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না অংশ নেন। সেখানেও কিছু কথা হয়েছে বলে জোট সূত্রে জানা যায়।

এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, জোটগতভাবে আবার কিছু হবে বলে তাঁর জানা নেই। ঈদের আগে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে বলেন, ‘ঈদের পরদিন মঈন খানের বাসায় গিয়েছি। সেখানে নিজেদের মধ্যে কিছু কথা হয়েছে। আবার বসা যায় কিনা সেসব কথা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে বিএনপি তো এখন একাই চলছে। বিএনপি যদি বলে তারা বসতে চায়, তখন সেটা কিছু একটা মিন করে। আমরা তো চাই এটা হোক। কিন্তু বিএনপি চায় কিনা জানি না।’

জোটের গুরুত্ব রয়েছে জানিয়ে মান্না বলেন, ‘আমাদের তো আন্দোলন করতেই হবে, এক হতেই হবে। আলোচনা আসবে। কিন্তু একটা-দুইটা বৈঠক সেরকম কোনো সিগন্যাল দিচ্ছে না। জোটটা কার্যকর হলে ভালো। চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ লাগবে।’

ঐক্যফ্রন্ট আছে এবং থাকবে বলে জানান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রবের বাসায় আলোচনা কিছু হয়েছে। প্রত্যেক দল আলাদাভাবে কাজ করছে। আমরা চাই সব দলের মধ্যে গতি আসুক। জোটাকে আমরা সম্প্রসারিত করতে চাই। অনানুষ্ঠানিকভাবে কথাবার্তা হয়েছে। তবে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে বসব।’

গত বছরের অক্টোবরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই সরকার বিরোধী বড় জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শুরু থেকেই সেখানে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদ জোটের বৈঠকসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। তবে নির্বাচনের পর থেকে তাঁদের আর দেখা যায়নি। ঐক্যফ্রন্টের এক শীর্ষ নেতা জানান, নির্বাচনের আগে ও পরে এ দুজনের সঙ্গে অন্যদের মতপার্থক্য দেখা দেয়। এ ছাড়া তাঁরা নির্বাচনের পরপরই একসঙ্গে মামলা করতে চেয়েছিলেন। মতপার্থক্য বাড়তে থাকায় তাঁরা জোটে আসা থেকে বিরত থেকেছেন। বিএনপির এক সূত্র জানায়, এ দুই নেতাকেও জোটে এখন প্রয়োজন বলে ভাবছেন কেউ কেউ। তাঁদের ফেরানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা তো অনেক দিন যাই না। মহাসচিবকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। উনিই প্রতিনিধিত্ব করবেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ আমি। অন্য কোনো ব্যাপারে মনোযোগ দিতে পারছি না। দলের কর্মসূচিতে থাকছি। ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে এখন আমি জড়িত নই।’ যদি তাঁকে ডাকা হয় তাহলে যাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, অবশ্যই তিনি যাবেন। তবে জোটের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শুরু থেকে এর সঙ্গে ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তাঁর কাছে জোটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক বিষয়গুলো তিনি অবগত নন। তবে বলেন, ‘একটু অপেক্ষা করেন। ঐক্যফ্রন্ট কতগুলো রুটিন কাজ করবে তাতে ঐক্যটা দৃঢ় হবে। জোটের এখনো প্রয়োজনীয়তা আছে।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদের জোটে ফেরানোর বিষয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, এটা বিএনপির নিজস্ব বিষয়।