Home এইমাত্র জিয়া-এরশাদকে রাষ্ট্রপতি বলা বৈধ নয়: প্রধানমন্ত্রী

জিয়া-এরশাদকে রাষ্ট্রপতি বলা বৈধ নয়: প্রধানমন্ত্রী

311
0
SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উচ্চ আদালত জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। অবৈধ যখন ঘোষণা করেছেন, তখন তাদের দু’জনের কেউই আর রাষ্ট্রপতি থাকেন না, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তাদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা বৈধ নয়, এটাই বাস্তবতা। কারণ এই একটি রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার সুযোগ হয়েছে।

রোববার সংসদে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খবর বাসসের

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর আমাকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই-উতরাই অতিক্রম করতে হয়েছে। জেনারেল জিয়া ৩২ নম্বরের বাড়িতে আমাকে ঢুকতেই দেননি, এটাই বাস্তবতা। এরশাদ প্রথমে মার্শাল ল’ জারি করে পরে নিজেই ক্ষমতা দখল করে নেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা হত্যার পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন, এরপর এরশাদও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন ভণ্ডুল করতে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। সে সময় রওশন এরশাদ এগিয়ে আসেন। জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল এবং অন্য কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ নেয়। অনেক বাধা অতিক্রম করে তখন নির্বাচন করতে আমরা সক্ষম হই, যদিও এই নির্বাচন নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেন। নির্বাচনে যদি জনগণের অংশগ্রহণ না থাকত তাহলে আমরা তো সরকারে টিকে থাকতে পারতাম না। জনগণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল এবং ভোট দিয়েছিল বলেই আমরা ৫ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে সংসদের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশগ্রহণ করেছে, অথচ এই সংসদকে অবৈধ বলেও বিএনপির সদস্যরা শেষ পর্যন্ত সংসদে এসেছেন।

তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই আমরা সরকার গঠন করে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। গত ১০ বছরে দেশ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার প্রার্থী হন। তখন এরশাদ দেশের বাইরে গিয়ে বলেছিলেন সাত্তার তাদের প্রার্থী। আমরা এটার প্রতিবাদ করেছিলাম। তখন খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেননি। সাত্তার সাহেব ছিলেন তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে হঠাৎ করে সাত্তার সাহেবের বিরুদ্ধে একটা বিবৃতি দেন। ১৯৮২ সালে এরশাদের ক্ষমতা দখলের সুযোগ করে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বিনিময়ে এরশাদ সাহেব তাকে দুটি বাড়ি এবং নগদ ১০ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। জিয়ার মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলা হয় কিন্তু বিএনপি কোনোদিনও এই মামলা পরিচালনা করেনি। পরে জিয়াউর রহমান হত্যার জন্য খালেদা জিয়া এরশাদকে দায়ী করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এক মিলিটারি ডিক্টেটরের পরিবর্তে আরেক মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতায় আসুক এটা আমাদের কাম্য ছিল না, এজন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দল এর প্রতিবাদ করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেনারেল এরশাদের ব্যবহার, আচার-আচরণ অনেক অমায়িক ছিল। মানুষের প্রতি তার দরদ ছিল। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরে জিয়া ক্ষমতায় আসেন। তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিলেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেননি। যেটা জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় এসে করেছেন।

নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে এরশাদের সঙ্গে সংলাপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় আমাদের ১৪ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা ছিল। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তাদের মুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে জনসভায় গুলিবর্ষণসহ এরশাদের আমলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিভিন্ন অত্যাচার এবং তার নিজের কারাবরণের কথাও উল্লেখ করেন।

১৯৮৬ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নির্বাচন যদি অবাধ, নিরপেক্ষ হতো তাহলে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকত এবং এরশাদকেও বিতর্কিত হতে হতো না। নিজেই আবার পরে সংসদ ভেঙে দিয়ে আবারো বিতর্কের মুখে পড়েন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে প্রায় কোনো দলই অংশগ্রহণ করেনি। এরপরই আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং জনগণের আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। একই ধরনের নির্বাচন খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় থাকতে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি করেছিলেন। তখনও কোনো দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তিনি ওই নির্বাচনে জয়লাভ করে নিজেকে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও জনগণ তাকে দেড় মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি।

তিনি বলেন, জনসমর্থন না থাকলে অর্থাৎ সত্যিকার অর্থেই যদি জনগণ ভোট দিয়ে না থাকে তাহলে ওই নির্বাচনে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে নানা চড়াই- উতরাই পেরিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদসহ বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি সুষমা স্বরাজের আত্মার শান্তি কামনা করে বলেন, ভারত-বাংলাদেশের স্থলসীমানা চুক্তির বিলটি তিনিই ভারতের সংসদে উত্থাপন করেন এবং দলমত নির্বিশেষে সব সদস্য এই বিলটি পাস করেন।