Home এইমাত্র আ’লীগের দুর্নীতির কথা অন্য কাউকে বলতে হচ্ছে না : মির্জা ফখরুল

আ’লীগের দুর্নীতির কথা অন্য কাউকে বলতে হচ্ছে না : মির্জা ফখরুল

225
0
SHARE

১২ বছরে লুটপাট করে দেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে * আ’লীগ-যুবলীগ নেতারাই ক্যাসিনো চালাচ্ছে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। আওয়ামী লীগের যে দুঃশাসন-দুর্নীতি-নির্যাতন-নিপীড়ন সেটি এখন অন্য কাউকে বলতে হচ্ছে না, নিজে নিজেই বাতাসে কল নড়া শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সারা দেশে আওয়ামী লীগের লোকেরা, যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতারা নিজেরা নিজেদের দুর্নীতির প্রমাণ করছেন। নিজেরাই প্রমাণ করেছে- তারা বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শুক্রবার এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধন হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্রলীগের নেতা যারা দাবি করে তারা মানসপুত্র, নেত্রীর সবচেয়ে প্রিয় সন্তান, তারাই ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। পত্রিকায় এসেছে- ঢাকা শহরে ৬০টি ক্যাসিনো চালাচ্ছে যুবলীগ-আওয়ামী লীগের নেতারা। নিজেরা ধরা পড়ে গেছে, এখন অন্য কারও দোষ ধরতে চায়।

তিনি বলেন, এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে, দেশ দুর্নীতিতে পূর্ণ হয়েছে। সরকার সেখানে মদদ দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ সেখানে মদদ দিচ্ছে। প্রমাণিত হয়ে গেছে- এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ। প্রমাণিত হয়ে গেছে গত ১২ বছরে এই দেশ লুটপাট করে শ্মশানে পরিণত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দুর্নীতির তথ্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কী অবস্থায় দেশকে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ, যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর যাকে আমরা সবসময় সম্মান করি, মাথার উপরে রাখি তিনি ঘুষ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়লেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের ভাইস চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছে এবং আন্দোলন করছে যে, ভর্তি হচ্ছে বিনা পরীক্ষায় অর্থাৎ সেখানেও দুর্নীতি চলছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সবাই রাস্তায় নেমে গেছে। তারাও সেখানে আন্দোলন করছে। গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন নেমে পড়েছে- এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত। দেশের মানুষ তাহলে যাবে কোথায়? এদের কারা নিয়োগ দিয়েছে? এই সরকার। বেছে বেছে সবচাইতে খারাপ লোকগুলোকে নিয়ে তারা ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিয়োগ দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার কথায় কথায় বলে, আমরা উন্নয়ন করছি, সিঙ্গাপুর বানিয়ে দিলাম। বাংলাদেশে এখন সবচাইতে বেশি বেকার- প্রায় ৪ কোটি শিক্ষিত বেকার। কৃষক ধানের দাম পায় না। ৫শ’ টাকায় ধান বিক্রি হয় না, ধান পুড়িয়ে দেন। দুধ বিক্রি হয় না, দুধ ফেলে দেন। পাটের দাম পায় না। এক অসহায়-অনিশ্চয়তা, নিদারুণ পরিবেশে দেশের মানুষ বাস করছে। চতুর্দিকে অশান্তি, চতুর্দিকে অনিশ্চয়তা, চতুর্দিকে অস্থিতিশীলতা, চতুর্দিকে ভয়-ত্রাস।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ওনাকে ১৭ মাস বন্দি করে রেখেছে। অসুস্থ, হাঁটতে পারেন না, এখন সাপোর্ট দিয়ে উঠতে-চলতে হয়। তার সুচিকিৎসা হচ্ছে না হাসপাতালে। বারবার বলেছি, তাকে সুচিকিৎসার জন্য মুক্তি দিতে হবে। তার পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা দয়া ভিক্ষা করছি না। যেটা আইনগতভাবে ন্যায্য প্রাপ্য, সেই জামিন চাচ্ছি আদালতের কাছে। আদালতে বাধা দিচ্ছে সরকার যাতে দেশনেত্রী রেরোতে না পারে। এই অন্যায়, অবিচার জনগণ বরদাশত করতে না। জনগণ আজ জেগে উঠতে শুরু করেছে।

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দাবি-দাওয়ার কথাগুলো বলছি। অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, অবিলম্বে এই সংসদ বাতিল করুন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দিন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বাদ দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে এসে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিন। অন্যথায় দেশের মানুষ কোনোদিন আপনাদের ক্ষমা করবে না।

রোহিঙ্গা ও আসামের নাগরিকপঞ্জি আরেক বিপদ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, চারদিকে বিপদ। ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসে আছে দুই বছর ধরে। মাদার অব হিউম্যানিটি দুই বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেন নাই। উপরন্তু আরও বিপদ। আসামের নতুন নাগরিকপঞ্জিতে ১৯ লাখ লোক বাদ পড়েছে। আসামের মন্ত্রীরা যখন বলে এসব লোক বাংলাদেশি, তাদের ফেরত পাঠাতে হবে- তখন নিশ্চয়ই এটা আমার সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলছি, আমাদের কোনো মানুষ ১৯৭১ সালের পর ভারতে যায় নাই। কেন যাবে? আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকে ওদের চেয়ে অনেক ভালো আছি। আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কথা বলছে না। সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা কেড়ে নিয়ে দেশকে ‘নতজানু’ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, যুবদলের মোরতাজুল করীম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়ন, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর, রফিকুল ইসলাম মজনু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মাওলা শাহিন, রেজাউল করীম পল প্রমুখ।