Home এইমাত্র বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

239
0
SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সাংবাদিক সম্মেলন বলেছেন, তার ভারত সফরের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন গতির সঞ্চার এবং ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক বিশেষ উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান এবং ভারত সফর শেষে দু’টি সফরের কার্যক্রম এবং ফলাফল নিয়ে আজ গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে গত ২২-এ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যান। নিউইয়র্ক থেকে ফেরার একদিন পরই তিনি সরকারি সফরে ভারত গিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে এবারের অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানসম্মত শিক্ষা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। এ ছাড়া, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট তথা এসডিজি ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অন্যান্যবারের মত এবারও তিনি বাংলায় ভাষণ দেন। তার ভাষণে বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের অভাবনীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ ও অর্জিত সাফল্যের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এ ছাড়া, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং শান্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় বক্তব্যে স্থান পায়।

এই অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশ পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক চুক্তি অনুস্বাক্ষর এবং মানব পাচার সংক্রান্ত পালেরমো প্রোটোকল অনুসমর্থন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমি নতুন করে ৪ দফা প্রস্তাব পেশ করেছি। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে: ১। রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারে তাদের আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে।

২। বৈষম্যমূলক আইন ও রীতিসমূহ বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে।

৩। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উত্তর রাখাইন রাজ্যে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

৪। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একটি শান্তিপূর্ণ ও বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সকল রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ২৩-এ সেপ্টেম্বর আমি স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ‘হাই লেভেল প্লেনারি অন ইউনিভারসেল হেলথ কভারেজ’ সভার একটি প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অসামান্য সাফল্য বিশেষ করে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করি। এই প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ ছাড়াও ইউনিভারসেল হেলথ কভারেজ বিষয়ক এই সভার মূল প্লেনারিতে আমি বক্তব্য দিই।

একই দিন আমি ক্লাইমেট এ্যাকশন সামিট শীর্ষক একটি সভায় অংশগ্রহণ করি। এতে আমি জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিককালে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর কথা উল্লেখ করেছি। পাশাপাশি ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০-সহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সার্বিক কার্যক্রম ও পরিকল্পনা তুলে ধরি।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ২৪-এ সেপ্টেম্বর আমি গ্লোবাল কমিশন অন এডাপটেশনের আয়োজনে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট নানা সমস্যা এবং করণীয় নিয়ে এই সভায় আলোচনা হয়। ঢাকায় গ্লোবাল কমিশন অন এডাপটেশনের একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, এদিন বাংলাদেশ এবং ওআইসি-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গা ক্রাইসিস : এ ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টেও আমি অংশগ্রহণ করি। এতে ওআইসি-এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। এ সভায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এবং ওআইসি’র মহাসচিব বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওইদিন সন্ধ্যায় আমি মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত ‘লিডারশিপ মেটার্স- রিলিভেন্স অফ মহাত্মা গান্ধী ইন দ্য কনটেম্পরারি ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে মূল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বেশ কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এতে অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর আমি ‘লিডারস্ ডায়লগ ফোর অন লোকালাইজিং দ্যা এসডিজি’স’ শীর্ষক সভায় অংশগ্রহণ করি। আমি আর ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে এই সভা পরিচালনা করি। এই সভায় আমি এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের অঙ্গীকার, চলমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসমূহ তুলে ধরি।

একই দিনে আমি কাউন্সিল অন ফরেন রিলিশন্স-সিএফআর-এর সদস্যগণের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করি।
তিনি বলেন, আমার বক্তব্যে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে অভাবনীয় উন্নয়নের বর্ণনা প্রদানের পাশাপাশি, শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান, ডিজিটাল বাংলাদেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন এবং রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করি। এছাড়া, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর আমি ইউএস চেম্বার অফ কমার্স আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ হতে আগত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যবসায়ীগণ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সূচনা ফাউন্ডেশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ-এর সহযোগিতায় ‘মেন্টাল হেলথ এন্ড ডিজিবিলিটিজ’ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্ট আয়োজন করে। এই অধিবেশনে তাঁর সঙ্গে ভূটানের প্রধানমন্ত্রী ও নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন। এই সভায় সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরি।

ইভেন্টের দ্বিতীয় পর্বে সূচনা ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ হোসেইনের সঞ্চালনায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের অধিবেশনকালে বিশ্ব সম্প্রদায় আমাকে দু’টি আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত করে। এগুলো হলো- গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনেশন এন্ড ইমুনাইজেশন (জিএভিআই) প্রবর্তিত ‘ভ্যাকসিন হিরো’ এবং ইউনিসেফের ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা স্কিল ডেভেলেপমেন্ট ফর দ্যা ইয়ুথ’ সম্মাননা। তিনি বাংলাদেশের জনগণ এবং শিশুদের উদ্দেশ্যে এসব সম্মাননা উৎসর্গ করেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, এবারের অধিবেশন চলাকালে তিনি বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। যাঁদের সঙ্গে বৈঠক হয়, তাঁরা হলেন-কুইন ম্যাক্সিমা অফ নেদারল্যান্ড, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুট চান-ও-চা, এক্সন মবিল এল এন জি মার্কেট ডেভেলপমেন্ট-এর চেয়ারম্যান আলেক্স ভি ভলকভ, গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের সভাপতি ইরিনা বোকোভা, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চিফ প্রসিকিউটর ফাটো বেনসৌডা, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বিল গেটস্, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টোনিও গুটারেস।

তিনি জানান, অধিবেশন চলাকালে জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে একই টেবিলে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত অভ্যর্থনায়ও অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশীদের একটি সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন।
শেখ হাসিনা জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ওয়াল স্টিট জার্নাল, ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ২৯ সেপ্টেম্বর ভয়েজ অফ আমেরিকার বাংলা সার্ভিস তাঁর সাক্ষাতকার গ্রহণ করে। এছাড়া, ওইদিন নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

ভারত সফর সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম(ডব্লিউইএফ)-এর আয়োজনে ইন্ডিয়া ইকোনোমিক সামিটে অংশগ্রহণ করতে তিনি গত ৩ থেকে ৬ অক্টোবর নয়াদিল্লি সফর করেন। বর্তমান মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতে এটিই ছিল তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর।

তিনি বলেন, গত ৫ অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে হায়দ্রাবাদ হাউজে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ, জনযোগাযোগ, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। এসময় তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের পূর্ব প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে জানান যে, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তিনি এ সমস্যার দ্রুত সমাধানে আগ্রহী। বৈঠকে আমি মুহুরি নদীর সীমান্ত নির্ধারণের বিষয়ে প্রস্তাব করলে তিনি জানান যে, এ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তার সরকার সচেষ্ট।

রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এবং এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনিষ্পন্ন সমুদ্র সীমা বিরোধের নিষ্পত্তির অনুরোধ জানালে তিনি এ সমস্যা নিরসনে তাঁর আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার ব্যাপারে তার সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

আসামের এনআরসির প্রসঙ্গে তিনি জানান এর আইনগত প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ। সুষ্ঠুভাবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এনআরসি নিয়ে এখনও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়নি এবং ভবিষ্যতেও এ নিয়ে কোন ধরনের কিছু ঘটতে দেওয়া হবে না। যারা এ তালিকা হতে বাদ পড়েছেন তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি যৌথভাবে বাংলাদেশে তিনটি প্রকল্পর উদ্বোধন করেন। প্রকল্প গুলো হচ্ছে- ১) বাংলাদেশ হতে ভারতের ত্রিপুরায় বাল্ক এলপিজি রপ্তানি। ২) রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকায় বিবেকানন্দ ভবন ছাত্রাবাস। ৩) খুলনায় অবস্থিত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-এ স্থাপিত বাংলাদেশ-ভারত পেশাজীবী দক্ষতা উন্নয়ন ইনস্টিটিউট।

শেখ হাসিনা বলেন, এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং বিনিময় করা হয়। এগুলো হচ্ছে: ১) এমওইউ অন কোঅপারেশন ইন ইয়ুথ মেটারস। ২) দ্যা কালচারাল এক্সেঞ্জ প্রোগ্রাম (সিইপি) বিটুইন বাংলাদেশ এন্ড ইন্ডিয়া। ৩) দ্যা এসওপি অফ এগ্রিমেন্ট অন দ্যা ইয়ুজ অফ চট্টগ্রাম এন্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অফ গুডস টু ফ্রম ইন্ডিয়া। ৪) এমওইউ ফর প্রোভাইডিং কোস্টাল সার্ভলেন্স সিস্টেম। ৫) এমওইউ ফর এস্টাবলিস্টমেন্ট অফ পার্মানেন্ট অফিস অফ এক্সিম ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। ৬) এমওইউ অন উইথড্রওয়েল অফ ১.৮২ কিউসেক ওয়াটার ফ্রম ফেনী রিভার বাই সাপ্লাইং টু সাবরুম টাউন, ত্রিপুরা, ইন্ডিয়া। ৭) এন্ড মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্টেন্ডিং বিটুইন দ্যা ইউনির্ভাসিটি অফ হায়দ্রাবাদ এন্ড ইউনির্ভাসিটি অফ ঢাকা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি আগামী বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উৎসবে যোগদানের জন্য বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করি।

তিনি বলেন, একই দিন সন্ধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে আমি সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় তিনি আমাকে অভিনন্দন জানান। ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতিকে আমি বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে সকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি জানান যে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান সকল অনিষ্পন্ন বিষয়সমূহ সমাধানের জন্য একান্ত আগ্রহী। বৈঠককালে চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের নতুন মিশন খোলার বিষয়ে ভারত সরকারের সম্মতি আছে বলে জয়শঙ্কর আমাকে জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া, ঢাকা-চেন্নাই, ঢাকা-মুম্বাই রুটে নতুন বিমান চলাচলের বিষয়ে আমি প্রস্তাব দিয়েছি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহের যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আমাদের সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সফরকালে কোলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি আঞ্চলিক এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য আমাকে ‘ঠাকুর পিস এওয়ার্ড-২০১৮’ প্রদান করে। আমি এ পুরস্কার দেশবাসীকে উৎসর্গ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ৩ অক্টোবর ওয়ার্ল্ড ইকোমোমিক ফোরাম (্ডব্লিউইএফ)-এর আয়োজনে ইন্ডিয়া ইকোমোমিক সামিট-এর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস কাউন্সিল-এর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে কান্ট্রি স্ট্রাটেজি ডায়লগে আমি অংশগ্রহণ করি।
তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস কাউন্সিল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ফোরাম। এ সময় আমি বাংলাদেশের সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরি এবং বাংলাদেশের বিদ্যমান বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কথা উল্লেখ করে এখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ৪ অক্টোবর আমি বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস ফোরামের উদ্বোধন করি। এ সময়ে ভারতের বাণিজ্য ও রেলমন্ত্রী পিযুশ গয়ালসহ ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এখানেও আমি ভারতের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বেশি করে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, ওইদিন বিকেলে আমি ইন্ডিয়া ইকোমোমিক সামিট-এর সমাপনী অধিবেশনে অংশগ্রহণ করি। এ অধিবেশনে আমি দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে সম্পর্ক সুসংহত করতে আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যৌথ প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওইদিন সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী হ্যাঙ সুয়ি কিয়েত আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয় আমাদের আলোচনায় স্থান পায়। তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ৬ অক্টোবর ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে আমার আলোচনা হয়। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, ভারতীয় কংগ্রেসের উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, এর আগে গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় নয়াদিল্লীস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় আমি যোগদান করি। এ সংবর্ধনা সভায় বাংলাদেশে সমবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : বাসস