Home আইন আদালত মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে মামলা

মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে মামলা

295
0
SHARE

বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে ‘কার্নেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় আনা গাড়ি জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধন করে ব্যবহারের অভিযোগে মামলা হয়েছে । দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এর পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার মামলাটি করেন।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘মামলায় মুসা বিন শমসেরের সাথে আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।’

তারা হলেন- বিআরটিএ ভোলা জেলা সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. আইয়ুব আনছারী (বর্তমানে ঝালকাঠিতে কর্মরত), গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অটো ডিফাইন ও ফিয়াজ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ওয়াহিদুর রহমান, মুসা বিন শমসেরের শ্যালক মো. ফারুক-উজ-জামান এবং ‘কার্নেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় গাড়ি আনা ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী ফরিদ নাবির।

আন্তর্জাতিক একটি সনদ অনুযায়ী যে সুবিধায় পর্যটকরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে শুল্ক না দিয়েই গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারেন, তাকে ‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ বলা হয়। নির্দিষ্ট একটি সময়ের (সাধারণত কয়েক মাস) জন্য এই সুবিধা পান পর্যটকরা। এই গাড়ি বিক্রি কিংবা হস্তান্তর করা যায় না।

‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় আনা একটি রেঞ্জ রোভার জিপ গাড়ি ২০১৭ সালে ঢাকায় মুসা বিন শমসেরের ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। ওই গাড়িটি মুসার শ্যালক ফারুক উজ-জামানের নামে ভোলায় নিবন্ধিত।

গাড়িটি উদ্ধারের পর শুল্ক গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, ভোলা বিআরটিএ’র কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া কাগজ দিয়ে ওই গাড়ি নিবন্ধন এবং বেনামে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

গাড়িটি জব্দের পর মুসাকে কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। শুল্ক গোয়েন্দারা বলেছিলেন, মুসা বিন শমসের ১৭ লাখ টাকা শুল্ক পরিশোধ দেখিয়ে ভুয়া বিল অব এন্ট্রি প্রদর্শন করে গাড়িটি বেনামে রেজিস্ট্রেশন করেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই গাড়িতে ২ কোটি ১৭ লাখ টাকার শুল্ক প্রযোজ্য।

ওই তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মুসার বিরুদ্ধে মামলা করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সুপারিশ করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

দুই বছর পর সেই মামলা হল। এজাহারে বলা হয়েছে, মামলার আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই মুসা বিন শমসেরের সম্পদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে।

জনশক্তি রপ্তানি দিয়ে মুসার ব্যবসার শুরু হলেও তার পরিচয় দিতে গিয়ে অস্ত্র ব্যবসার কথাই বেশি আসে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। বিলাসী জীবন-যাপনের কারণে বিদেশি গণমাধ্যমে অনেক সময় তাকে বলা হয় ‘প্রিন্স অব বাংলাদেশ’।

১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ী।

একটি দৈনিকে সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরের ৫১ হাজার কোটি টাকা থাকার খবর ছাপা হয়েছিল। তবে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর দুই বছর আগে মুসা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশে বসে কেউ এত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না।

মুসার বিরুদ্ধে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে, যার অনুসন্ধান করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।