Home জাতীয় বিজয় অর্জনের স্বপ্নরেখা

বিজয় অর্জনের স্বপ্নরেখা

487
0
SHARE

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৪৮ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে ২০১৯ সালে। এ বছরের বিজয় দিবসে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, উন্নয়নের গতিধারার একটি সচল পথ নির্মাণ হয়েছে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা লাভের পর বিজয় অর্জন-পরবর্তী বাংলাদেশ উন্নয়ন ভাবনার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি বাঙালির ‘মুক্তি’ অর্জনের কথা স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন। মুক্তির বিষয়টি একটি বহুমাত্রিক বিষয় হিসেবেই তিনি তার ঘোষণায় উল্লেখ করেছিলেন।

বহুমাত্রিক এ শব্দটির বিশদ ব্যাখ্যা করার জন্য অনেক বড় ক্যানভাস দরকার। স্বল্প পরিসরে বিশ্লেষণ করলে, নিদেনপক্ষে বাঙালির সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসন থেকে মুক্তির কথাই তিনি বলেছেন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম।

যে ক্ষেত্রে একটি ধ্বংসস্তূপের ওপর বঙ্গবন্ধুকে দেশ পরিচালনার কাজে হাত দিতে হয়। এ ধ্বংসস্তূপের মাঝেও তিনি বাঙালি জাতির উদ্দেশে সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন এবং বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকাকালে মাত্র তিনটি আর্থিক বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিপ্লবের আহ্বান জানান। ওই বিপ্লবের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথটি সুগম হতে শুরু করে।

১৯৯৬ সালে স্বাধীনতার পক্ষশক্তি জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসার পর দেশটিকে আবার বাঙালির মুক্তির পথে পরিচালনা কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আবার ক্ষমতা লাভ করার পর ১০/১১ বছরে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ লাভ হয়েছে।

পাশাপাশি অপসংস্কৃতি ও ধর্মান্ধতা পরিহার করে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার মূল শিকড় খুঁজে নিয়ে সামাজিক সংস্কৃতির ভিত্তিটি দৃঢ় করার পথে বিশ্বব্যাপী রোল মডেল হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

ইউনেস্কোর মাধ্যমে আমাদের ইতিহাসের দুটো অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রচার লাভ করেছে। আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের সামনে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। যে কোনো জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা রক্ষার জন্য এটি একটি প্রতীকী দিন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ঘোষণায় বিশ্বের ঐতিহ্যিক প্রামাণিক দলিল হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে, যা অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। মানুষের অধিকার আদায়ের অন্যতম শর্ত এ ভাষণ।

উন্নয়নের সচলতায় বাঁধ ভেঙেছে অনেক ক্ষেত্রের। শুরুতেই বলি, আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা বিজয় অর্জন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় পতাকা ওড়াচ্ছে। আমাদের মেয়েরা ফুটবল খেলে বিজয় ছিনিয়ে আনছে। ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। মেয়েদের ঘরে আটকে রাখার সামাজিক পর্দা ভেঙে বেরিয়ে আসার এই উন্নয়ন এক অভূতপূর্ব যাত্রা। ক’দিন আগে এসএ গেমসে আমাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তরুণ দীপু চাকমা স্বর্ণজয় করে নেপালের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামষ্টিক প্রবৃদ্ধি ৭৩ গুণ বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৫ গুণ, ৮৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে এবং ৭৫ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানির সুবিধা পাচ্ছে। শিক্ষার সুযোগ বেড়েছে। আমাদের সামনে উন্নয়নের দৃষ্টান্ত পদ্মা সেতু সচল বেগে গড়ে উঠছে।

৪৮তম বিজয় দিবসে এমন অসংখ্য অর্জন আমাদের সামনে দৃশ্যমান। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাত্রা বেড়ে মানুষের সামনে সুদিনের যাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি, এ যাত্রাপথ বন্ধ হবে না। আমাদের বিশ্বাস, বাঙালি যখন তার সংস্কৃতির উৎসমূল খুঁজে পেয়েছে, তখন উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের বাঙালির সন্তান দুধে-ভাতে বেড়ে ওঠার যাত্রা অব্যাহত রাখবে। প্রসারিত হবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মূলধারা।