Home জাতীয় মীরজাফররা আর যেন ক্ষমতায় না আসে: শেখ হাসিনা

মীরজাফররা আর যেন ক্ষমতায় না আসে: শেখ হাসিনা

547
0
SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে মীরজাফর-মোশতাকের মতো বেইমানদের জন্ম হয়েছে বারবার। খুনি জিয়ার মতো খুনিরাও বারবার এসেছে। ভবিষ্যতে এদের মতো এ দেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে; মোশতাক, জিয়ার মতো মীরজাফররা আর যেন কোনোদিন ক্ষমতায় না আসতে পারে, দেশের উন্নয়ন আর যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। সে দায়িত্ব এদেশের জনগণকে নিতে হবে, তরুণ প্রজন্মকে নিতে হবে; প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘তোমাদের যা বলার ছিল, বলছে তা আজ বাংলাদেশ’ শিরোনামে এ আলোচনা সভা করে আওয়ামী লীগ। সভার শুরুতে শোকাবহ ১৫ আগস্টে নিহত সব শহীদ, জাতীয় চার নেতা, ১৪ ডিসেম্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বেলা ৩টায় শুরু হলেও আলোচনা সভায় নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই আসতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার মধ্যে পুরো মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জায়গা না হওয়ায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে মিলনায়তনের বাইরে অবস্থান করতে দেখা গেছে। বেলা ৩টায় অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মিলনায়তন মুখরিত করে তোলেন।

১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জিয়াউর রহমান খুনের সঙ্গে জড়িত, ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়া যদি জড়িতই না থাকে তাহলে মোশতাক তাকে কেন সেনাপ্রধান বানাল? বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আন্দোলনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতাপরবর্তী ১৫ আগস্টের পর ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল জিয়াউর রহমান। কিন্তু সত্যকে কখনও কেউ একেবারে মুছে ফেলতে পারে না। আজকে সেটা প্রমাণ হয়েছে বিশ্বের কাছে। আজ তা প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের কাছে। আজকের প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে কেউ পারবে না এটা মুছে ফেলতে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল থেকে শুরু করে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বানায়। জাতির পিতার হত্যাকারী আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠিয়েছিল খুনি জিয়া। পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতাবিরোধী গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং শাহ আজিজদের রাষ্ট্রপতি বানানো হয়। যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাই চায়নি, সে হল প্রধানমন্ত্রী।

সেই রাজাকার বাহিনী, আলবদর বাহিনী, যারা এ বুদ্ধিজীবীদের ঘরে গিয়ে গিয়ে ধরে নিয়ে এসে হত্যা করেছে তাদের বানাল মন্ত্রী। তারা মন্ত্রী হয়ে দেশকে ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, তাদের হাত দিয়েই খালেদা জিয়ার ব্যবসা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা। তার ছেলেই সাজাপ্রাপ্ত। আর নিজে তো এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেই আছে। একটা দেশের মানুষের জন্য দরদ নাই এবং এ দেশটা যে এত লাখো শহীদের রক্তের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, এ বিষয়ে তাদের কোনোরকম কোনো সহানুভূতি ছিল না। তাদের ওই পাকিস্তানের প্রতি যে বহুল আনুগত্য, সেই আনুগত্যই তারা দেখিয়ে গেছে। তাদেরই তোষামোদী, চাটুকারিতা করে গেছে এবং তারা করে যাচ্ছে এখনও।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল মতিন খসরু, ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি সেন, বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন- আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশের মানুষের জীবনযাপনে আওয়ামী লীগ যে পরিকল্পনা করে দিয়েছে, সেটা ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে। আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করব, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও আমরা উদযাপন করব।

শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর এ দেশের মানুষ কষ্ট ভোগ করেছে। এরপর আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তাদের কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সেগুলোর সৃষ্টি করেছে। পরে আমরা যখন সরকারে এলাম, তারপর শুরু হল অগ্নিসন্ত্রাসের তাণ্ডব। যার মধ্যে এতটুকু মনুষ্যত্ব থাকে সে কি পারে জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করতে? এটাই নাকি খালেদা জিয়ার আন্দোলন ছিল! অর্থাৎ খুন, হত্যা ছাড়া এরা আর কিছুই জানে না। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের পেটোয়া বাহিনী বানিয়েছে। শুরু করল জিয়া, তার পদাঙ্ক অনুসরণ করল খালেদা জিয়া।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশটাকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া, এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু আল্লাহর রহমতে, এখন বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা তার সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করে এ বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই এ রক্ত কখনও বৃথা যায় না, বৃথা যেতে পারে না। আজ আমরা যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বুদ্ধিজীবীরা জীবন দিয়ে গেছেন এ দেশের জন্য, যাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে- তাদের নামটাও তো মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু সেটা মুছে ফেলতে পারেনি। কারণ আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যায় না, কখনোই বৃথা যায়নি। সেটাই প্রমাণ হয়েছে এখন বাংলাদেশে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৪ বছরের পাকিস্তানি বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশের আপামর জনসাধারণকে সংগঠিত করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জামায়াতসহ ধর্মান্ধ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুট করে। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে তারা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলীসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে।

এ স্বাধীন বাংলাদেশ জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। এ স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে, সেভাবে এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বসভায় যেন বাংলাদেশ তার মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে, তাহলেই শহীদের আত্মত্যাগ এবং তাদের যে মহান অবদান, সেটা চিরভাস্কর হয়ে থাকবে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বাংলাদেশকে সেভাবেই আমরা গড়ে তুলতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রত্যেকটা লক্ষ্যই হচ্ছে, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশকে যেন আর কোনো দিন কারও কাছে হাত পেতে চলতে না হয়। এ দেশের মানুষ যেন খাদ্যের অভাবে কষ্ট না পায়। জাতির পিতা আমাদের সংবিধান দিয়ে গেছেন, সেই সংবিধানে যে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে, সেই অধিকারগুলো সুরক্ষিত করা এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এটাই আমাদের লক্ষ্য। এ দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হচ্ছে একটা জাতিরাষ্ট্র। একটা ভাষার দেশ আমাদের এবং সংগ্রাম করে স্বাধীনতা এনেছি। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। এ কথাটা আমাদের ভুললে চলবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সব পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।