Home অর্থ-বাণিজ্য শিল্প ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর ১ জানুয়ারি থেকে

শিল্প ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর ১ জানুয়ারি থেকে

680
0
SHARE

অবশেষে ঋণের সুদহার বেঁধে দেয়া হচ্ছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকেই সব উৎপাদনশীল শিল্প খাতের মেয়াদি ও চলতি মূলধন নতুন ও পুরনো ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর করতে হবে। গতকাল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে পরিপালনের জন্য বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে নিশ্চিত করে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, উৎপাদনশীল শিল্প খাতের এক অঙ্কের সুদহার আগামী ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর করা হবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সহায়ক হিসেবে পরিচালনা পর্ষদ এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে।

Ad by Valueimpression
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো: নাছের জানিয়েছেন, নতুন পুরাতন সবক্ষেত্রেই উৎপাদনীল শিল্প ঋণের সুদহার এক অঙ্কে অর্থাৎ ৯ শতাংশ কার্যকর করা হবে। পুরনো কেউ এ খাতে ১২ শতাংশে ঋণ নিলে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সেই ঋণও ৯ শতাংশে চলে আসবে। তবে, ৯ শতাংশ কার্যকর হওয়ার পর কেউ যদি আবার ঋণখেলাপি হন, তাহলে ওই ক্ষেত্রে সুদহার আরো ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ঋণখেলাপির জন্য তখন ঋণের সুদহার হবে ১১ শতাংশ। তিনি বলেন, শুধু সিঙ্গেল ডিজিট নিয়েই সার্কুলার করা হবে না; এর সাথে সহায়ক আরো একগুচ্ছ সার্কুলার জারি করা হবে। সাশ্রয়ী তহবিল পেতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও কিছু নির্দেশনা থাকবে। যেমন, আগে বলা হয়েছিল সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ সরকারি ব্যাংক ও ৫০ শতাংশ পাবে বেসরকারি ব্যাংক।

এ ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬ শতাংশে আমানত রাখতে বাধ্য করার জন্য সার্কুলার জারি করা হবে। বলা হবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫০ শতাংশ তহবিল বেসরকারি ব্যাংকে বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এ নির্দেশনা পরিপালন করে সে জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মনিটরিং করবে। এর ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আমানত পেয়ে যাবে সাশ্রয়ী হারে।

জানা গেছে, এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এক অঙ্কের সুদহার কার্যকরের পর সম্ভাব্য পরিস্থিতির দায় কেউ একা নিতে চাননি। যে কারণে এ বিষয়ে গতকাল জরুরি ভিত্তিতে পর্ষদ বৈঠক ডেকেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থসচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান, ব্যাংকিং সচিবসহ প্রায় সব পর্ষদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর হলে ব্যাংকিং খাতে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে প্রথমে পর্যালোচনা করা হয়। যেহেতু আগেই অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন এক জানুয়ারি থেকে এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর করা হবে তাই এ হার নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আলোচনা হয়েছে এক অঙ্কের সুদহার কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন হলে ব্যাংকিং খাত যে সমস্যায় পড়বে তার দায় যেন একক ভাবে না পড়ে সে জন্যই পর্ষদের অনুমোদন নেয়া হয়। পর্ষদ অনুমোদন দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক ক্ষেত্রেই ভারমুক্ত হবে বলে ওই সূত্র মনে করে।

জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘ দিন ধরে সমস্যা চলছে। বিশেষ করে অনেকটা আদিষ্ট হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেয়ায় এ সমস্যা অনেকটা বড় আকারে দেখা দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়ে গেছে। যারা আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তাদের বড় একটি অংশ এখন আর ঋণ পরিশোধ করছেন না। চলতি বছরের শুরুতেই ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ নবায়নের ঘোষণা দেয়ায় অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেশি বেড়ে গেছে। এ অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়নের কথা বলে ব্যাংক পরিচালকরাও কম সুবিধা পাননি। সাবেক অর্থমন্ত্রীর শেষ সময়ে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি বেশি কিছু সুবিধা নেয়।

এর মধ্যে একই পরিবারের দুইজনের পরিবর্তে চারজন পরিচালক রাখার দাবি আদায় করে নেয়া হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো অনেকটা পরিবারতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। করপোরেট ট্যাক্স সাড়ে ৪২ শতাংশের পরিবর্তে আড়াই শতাংশ কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়। এক হিসেবে এতে ব্যাংকগুলো ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার সুবিধা পায়। নগদ জমা সংরক্ষণ হারে (সিআআর) এক শতাংশ কমিয়ে নেয়া হয়। এতে ব্যাংকগুলোর হাতে অতিরিক্ত ১১ হাজার ১১২ কোটি টাকা চলে যায়। এভাবে গুনে গুনে ৯টি সুবিধা নেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারেননি তারা।

এ দিকে ব্যাপক ভিত্তিতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো এখন তহবিল সঙ্কটে ভুগছে। এ সঙ্কটের কারণে বেশির ভাগ ব্যাংক ১০ শতাংশের ওপরে আমানত সংগ্রহ করছে। ১০ শতাংশের ওপরে আমানত সংগ্রহ করে তা কিভাবে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করবে তা নিয়ে ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যেই এক ধরনের অস্তিরতা কাজ করছে। এমনি সময়ে ৯ শতাংশ কার্যকর হওয়ায় ব্যাংকগুলো মহাবিপাকে পড়ে যাবে।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে গেলে ৪ শতাংশ সুদে আমানত সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি রয়েছে ৫ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ ৪ শতাংশে আমানত রেখে গ্রাহক কোনো মুনাফা পাবেন না, বরং মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় তার মূলধন হারাবে। এ কারণে ব্যাংকে কেউ আমানত রাখবে না। তিনি বলেন, এমনিতেই ব্যাংকে আমানত সঙ্কট, এরওপর সুদহার কমে গেলে ব্যাংক আরো আমানত হারাবে। সুতরাং এ সিদ্ধান্ত অতীতে যেমন বাস্তবায়ন হয়নি, সামনেও বাস্তবায়ন হবে না বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, তার মতে ব্যাংকিং খাতে বড় সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ কমে গেলে সুদহার আপনা আপনিই কমে যাবে। সুতরাং ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।