চেক ডিজঅনারের শাস্তি দ্বিগুণ করা হচ্ছে। বর্তমানে চেক ডিজঅনারের (চেক প্রত্যাখ্যান) শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড। এ মেয়াদ বাড়িয়ে দুই বছর করা হচ্ছে।
শুধু কারাদণ্ডই নয়, চেক ডিজঅনারের জরিমানাও তিন গুণ থেকে বাড়িয়ে চার গুণ করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত ‘বিনিময়যোগ্য দলিল আইন, ২০২০’ এর খসড়ায় এ শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৮৮১ সালে প্রণীত ‘দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট’ আইন রহিত করার জন্য নতুন এ আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিনিময়যোগ্য দলিলের মধ্যে আছে, চেক, মানিঅর্ডার, ও অঙ্গীকারপত্র।
নতুন করে এ আইন প্রণয়নের বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়, ‘দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট’ রহিত করে পরিমার্জনপূর্বক সময়োপযোগী করে নতুনভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’ প্রস্তাবিত আইনটির খসড়ায় ১৭টি অধ্যায় ও ১৪৩টি অনুচ্ছেদ আছে। আছে অনেক ধারা ও উপধারাও। আইনটির মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৬। এ আইনের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামতের ওপর ভিত্তি করে আইনটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
এ আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সব বিনিময়যোগ্য দলিল এ আইনের বিধানগুলোর দ্বারা পরিচালিত হবে। এই আইনের পরিপন্থী অন্য কোনো বিধি বা রীতিনীতি বিনিময়যোগ্য দলিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।’ আইনের খসড়ায় অপর্যাপ্ত তহবিল থাকার কারণে নির্দিষ্ট চেকগুলো প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে দণ্ড বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, ‘হিসাবে অপর্যাপ্ত তহবিল ইত্যাদি জনিত কারণে চেক প্রত্যাখ্যান। যেক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি তার কোনো ব্যাংকের হিসাবে অপর কোনো ব্যক্তিকে যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধের জন্য চেক লিখিয়া দিলেন, কিন্তু তার হিসাবে অবশিষ্ট যে টাকা আছে তা দিয়ে লিখিত চেক সমন্বয় করার মতো পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় কিংবা ওই হিসাব হতে টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাংকের সাথে যে পরিমাণ টাকার চুক্তি করা হয়েছে তা অতিক্রান্ত হওয়ায় কিংবা স্বেচ্ছায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লেনদেন স্থগিত/হিসাব বন্ধ করার কারণে ব্যাংক কর্তৃক ওই চেকটি অপরিশোধিত হয়ে ফেরত এলে, ওই ব্যক্তি এর দ্বারা অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলিয়া বিবেচিত হবে এবং এজন্য এই আইনে বিপরীতে কোনো বিধানের অবর্তমানে, সর্বনি¤œ ৬ (ছয়) মাস হতে সর্বোচ্চ ২ (দুই) বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ডে অথবা চেকে লিখিত অর্থের চার গুণ অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ’
তবে শর্ত থাকে যে, এই ধারার কোনো কিছুই প্রযোজ্য হইবে না যদি না-
(ক) চেকটি আদিষ্ট হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বা এর কার্যকারিতার মেয়াদকালের মধ্যে, যাহা পূর্বে সংঘটিত হয়, উহার মধ্যে চেকটি ব্যাংকের কাছে উপস্থাপিত হয়।
(খ) চেকটি অপরিশোধিত অবস্থায় ফেরত প্রদানের বিষয়ে ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেকের প্রাপক বা ক্ষেত্র মতে এর যথাবিহিত ধারক উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ পরিশোধের দাবি জানাইয়া চেকের আদেশকর্তাকে লিখিত নোটিশ প্রদান করেন, এবং
(গ) উক্ত নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেকের আদেশকর্তা এর প্রাপক বা ক্ষেত্রমত উহার যথাবিহিত ধারককে চেকে উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হন।’
আইনে বলা হয়েছে, আদায়কৃত জরিমানা উহার ধারককে পরিশোধ করতে হবে।
এই আইনে কোনো কিছুই ধারককে, চেকের অপরিশোধিত অংশ আদায়ের জন্য দেওয়ানি মোকদ্দমা করিবার অধিকার হতে বঞ্চিত করবে না।
কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে চেক গ্রহণ করবে না বা রাখবে না।
আপিলের ক্ষেত্রে বাধা-নিষেধ সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছেÑ ‘ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ১৩৮ এর যেকোনো উপধারার আওতায় প্রদত্ত রায়ের বিপরীতে আপিল করিবার পূর্বে প্রত্যাখ্যাত চেকের পরিমাণের ৫০% অর্থ রায় প্রদানকারী আদালতের নিকট জমা প্রদান করতে হবে। ’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রস্তাবিত এই আইনের বিষয়ে গতকাল এ প্রতিবেদকে বলেছেন, ‘সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পুরনো আইনটি বাতিল করে নতুন করে আইন প্রণয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্তমান চেক ডিজঅনারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। তাই প্রস্তাবিত আইনে শাস্তি বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।