Home খেলা পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের বাংলাদেশ দল

পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের বাংলাদেশ দল

678
0
SHARE

পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। দলের মূল ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহিম পারিবারিক কারণে পাকিস্তানে কোনো ধরনের ক্রিকেটেই অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। ফলে কিছুটা পিছিয়ে থেকে সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

পিছিয়ে থেকে কোনো সিরিজ শুরু করা বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। ভারত সিরিজের একদম আগ মুহূর্তে সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা বড় এক ধাক্কা হয়ে এসেছিল। তামিম ইকবালও ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়িয়েছিলেন সফর থেকে। কিন্তু ভারতের মাটিতে প্রথম জয় দিয়ে সেটা উতরে এসেছিল দল। পাকিস্তান সিরিজেও কি এমন কিছু করা সম্ভব হবে বাংলাদেশের পক্ষে? পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম জয় পাওয়ার মতো দল কি গড়তে পেরেছে নির্বাচকেরা?

সিরিজের দল এক নজরে দেখে নেওয়া যাক-অধিনায়ক হিসেবে আছেন ভারতে দলে নেতৃত্ব দেওয়া মাহমুদউল্লাহ। তাঁর সঙ্গী হিসেবে এবার মুশফিক না থাকলেও এবার অন্তত আছেন তামিম ইকবাল। মাহমুদউল্লাহর বাদবাকি সঙ্গী হিসেবে আছেন সৌম্য সরকার, নাঈম শেখ, নাজমুল হোসেন, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান, আমিনুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন ও হাসান মাহমুদ।

এ দলের দিকে তাকালে তিনটি দিক নজরে আসে। প্রথমেই দলের বোলিং আক্রমণের দিকে নজর দেওয়া যাক। ভারত সিরিজের স্কোয়াড থেকে কিছু পরিবর্তন এসেছে এ ক্ষেত্রে- বাঁহাতি পেসার আবু হায়দারের বদলে সুযোগ মিলেছে তরুণ হাসান মাহমুদের। বিপিএলে ১০ উইকেট পাওয়া এই পেসারের গতি নজর কেড়েছে। ২০ উইকেট করে পেয়ে দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে দেননি মোস্তাফিজ ও রুবেল। দেশি পেসারদের মধ্যে উইকেট পাওয়ায় এরপর শহিদুল ইসলাম (১৯), মেহেদী হাসান (১৮) ও এবাদত (১৪) থাকলেও নির্বাচকেরা অভিজ্ঞতার দিকে ঝুঁকেছেন।

এ কারণেই ১২ উইকেট পাওয়া আল আমিন ও ১৪ ম্যাচে ৯ উইকেট পাওয়া শফিউল জায়গা ধরে রেখেছেন। বাংলাদেশ দলের জন্য শঙ্কার বিষয় হলো বিপিএলে মোস্তাফিজ-রুবেল বাদে বাকি তিন পেসারের ইকোনমি রেট। আল আমিন এই বিপিএলে ওভার প্রতি ৯.৪৭ রান দিয়েছেন। হাসানের খরচ ৯.২০ করে। আর ৪৭.৮৮ গড়ে এক একটি উইকেট পাওয়া শফিউল প্রতি ওভারে রান দিয়েছেন ৮.৯৭ করে।

দলে স্পিনার হিসেবে আছেন লেগ স্পিনার আমিনুল ও দুই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান ও আফিফ হোসেন। মেহেদী ৬.৭৬ ইকোনমিতে ১২ উইকেট পেয়েছেন, ৭ উইকেট পাওয়া আফিফ সে তুলনায় বেশ খরচে। ওভারপ্রতি ৯.২৩ রান দিয়েছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। কিন্তু দলের জন্য চিন্তার বিষয় আমিনুলের ফর্ম। মাত্র ৬ ম্যাচ খেলেছেন এই লেগ স্পিনার, তাতে উইকেট মাত্র ৪টি।

বিপিএলের পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে পাকিস্তান সিরিজের এ ব্যাটসম্যানরাই ডাক পান। তামিম, লিটন, নাঈম, সৌম্য, আফিফ, মিঠুন ও নাজমুল সবাই রানের মাঝে ছিলেন। অধিকাংশই শীর্ষ রান সংগ্রাহকদের মধ্যে ছিলেন। অন্যরা দলের প্রয়োজন বুঝে ভালো স্ট্রাইকরেটে রান তুলতে পেরেছেন। কিন্তু দলে থাকা ব্যাটসম্যানদের মাঝে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মাত্র দুজন। একজন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, অন্যজন মিঠুন। বাদ বাকি সবাই কার্যত ওপেনার বা প্রথম তিনের ব্যাটসম্যান।

দলে তামিম ফিরে আসায় ওপেনিংয়ের একটি জায়গা যে তাঁর এটা নিশ্চিত। এবারের বিপিএল তামিমের দুই দিক দেখিয়েছে। ক্যারিয়ার জুড়ে আগে ২৭.২১ গড়ে রান করা তামিমের গড় এই বিপিএলে ৩৯.৬। আবার তাঁর আগের ১২০.১৪ স্ট্রাইকরেটকে বেশ ভালো মনে হচ্ছে এবারের বিপিএলের স্ট্রাইকরেটের (১০৯.৩৯) এর তুলনায়। তাঁর দল অবশ্য ইনিংস ধরে খেলার দায়িত্ব দিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু জাতীয় দলে তামিম এ ভূমিকা নিলে ইনিংসের শেষ ভাগে ঝড় তোলার মতো কোনো পিঞ্চ হিটার এই স্কোয়াডে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

তামিম একটি জায়গা নিয়ে নেওয়ায় ওপেনিংয়ের বাকি জায়গা নিয়ে লড়াই হবে বেশ কজনের মাঝে। স্ট্রাইকরেটের দিক থেকে তামিমের মতোই হতাশ করেছেন নাঈম (১১৫.৪৩)। কিন্তু ভারতের মাটিতে ৩ ম্যাচে ১৪৩ রান করা একজন ওপেনারকে বসিয়ে রাখা কঠিন। সে ক্ষেত্রে এ বিপিএলে নিজেদের ভূমিকা ভুলে যেতে হবে দুজনের একজনকে। সেটা নাঈম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

সে ক্ষেত্রে লিটনের হয়তো তিনেই নামতে হবে। পুরো বিপিএলে ইনিংস উদ্বোধন করা লিটন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও এ দায়িত্ব পালন করেন। এখন পর্যন্ত ১৯ ম্যাচে ওপেনিংয়ে নামা লিটন মাত্র দুই ম্যাচে তিনে নেমেছেন। কিন্তু সে দুই ইনিংসে কিছু করতে পারেননি। অন্য যে দুই পজিশনে নেমেছেন (৭ ও ৮), সেগুলোতে যে তাঁকে এবার দেখা যাবে না সেটা নিশ্চিত।

এই বিপিএলে প্রতিটি ম্যাচেই লিটনের সঙ্গী ছিলেন আফিফ। ভালো করেছেন সন্দেহ নেই কিন্তু জাতীয় দলে সেখানে নামার সুযোগ নেই তাঁর। জাতীয় দলে সর্বোচ্চ চার নম্বরে নামার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। না হলে ছয় বা সাতই তাঁর পরিচিত জায়গা। তাঁর সেরা ইনিংসটি অবশ্য আটে নেমে! কিন্তু প্রায় দেড় মাস শুরুতে খেলে অভ্যস্ত আফিফকে জাতীয় দলে ব্যাটিং অর্ডারে অনেক পরে নামতে হবে। হুট করে ভিন্ন অর্ডারে নেমে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশি।

শেষ দুই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন নাজমুল হোসেন। জাতীয় দলে দুই টি-টোয়েন্টি ওপেন করা এই ব্যাটসম্যানের মূল একাদশে ডাক পাওয়া কঠিন। এগিয়ে থাকা বাকি চার ওপেনারকে টপকে কোনো ম্যাচে নাজমুল ইনিংস শুরু করছেন, এমনটা দেখার সম্ভাবনা অনেক কম। পুরো ক্যারিয়ারে ইনিংসের শুরুতে নামা এই ব্যাটসম্যানের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে মিডল অর্ডারে ভালো করা কঠিন। যদিও তাঁকে সে কাজেই ডেকে আনা হয়েছে।

এদের মাঝে একমাত্র সৌম্যের পরিস্থিতি ভিন্ন। ৩৭টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হয় ওপেনার বা ওয়ান ডাউনে খেলেছেন সৌম্য। কিন্তু জাতীয় দলে ইদানীং সৌম্যকে মিডল অর্ডারেই নামতে হচ্ছে। বিপিএলেও সেটা মাথায় রেখে খেলেছেন সৌম্য। এ পরিবর্তন সৌম্যের পক্ষেই গেছে। বিপিএলের আগে তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার বড় ম্লান ছিল। ১৬.৫৬ গড় ও ১১৩.২৮ স্ট্রাইক রেট কোনোভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয় দলের টপ বা মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানের জন্য। এবার ৩৩.১ গড়ে রান নিয়েছেন সৌম্য, সেটাও ১৪০.২৫ স্ট্রাইকরেটে।

ফলে দলে চার, পাঁচ বা ছয়ে নামানোর জন্য আরেকটি নাম পাচ্ছে ম্যানেজমেন্ট। স্কোয়াডে স্বীকৃত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের সংখ্যা মাত্র দুই হওয়ায়, সৌম্যের দলে জায়গা পাওয়াও এখন প্রায় নিশ্চিত। আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েসও মিডল অর্ডারে ভালো করেছেন বিপিএলে। শুধু ৪৪২ রান-ই করেননি, সেগুলো তুলেছেন ১৩২.৩৩ স্ট্রাইকরেটে। কিন্তু হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নির্বাচকদের হাত থেকে মিডল অর্ডারে রাখার মতো সম্ভাবনা কেড়ে নিয়েছে।

মিডল অর্ডারের দুশ্চিন্তা কমানোর একটি নাম হতে পারেন মেহেদী। এই অলরাউন্ডার ১২ উইকেটের সঙ্গে বিপিএলে ২৫৩ রানও করেছেন। তিনে বা চারে নেমে তাঁর পিঞ্চ হিটিং ঢাকার বেশ কাজে লেগেছে। আফিফ ও মেহেদীকে একসঙ্গে নামানো হলে দুজনের একজনকে তাই ব্যাটিং অর্ডারের শুরুতে নামাতে পারবে বাংলাদেশ।