Home এইমাত্র মিয়ানমার সীমান্তে ৬১ কিমি ‘সীমান্ত সুরক্ষা সড়ক’

মিয়ানমার সীমান্তে ৬১ কিমি ‘সীমান্ত সুরক্ষা সড়ক’

468
0
SHARE

মিয়ানমার সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে নাফ নদীর তীর ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে ৬১ কিলোমিটার লম্বা ‘সীমান্ত সুরক্ষা সড়ক’। ১৪১ কোটি টাকার এ সড়কটি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম থেকে উখিয়ার পালংখালী হয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ গিয়ে থেমেছে। পাঁচটি প্যাকেজে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পুলিশ, বিজিবি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, ৬১ কিলোমিটারের আন্তর্জাতিক নাফ নদী বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তকে বিভক্ত করে রেখেছে। কয়েক বছর আগে নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে (রাখাইন রাজ্যে) কাঁটাতারের বেড়া ও সীমান্ত সড়ক তৈরি করেছে মিয়ানমার। এরপরও নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ১৮টি অরক্ষিত সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার বড় চালান ঢুকছে বাংলাদেশে। প্রতিবছর ইয়াবা বিক্রির বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে মিয়ানমারে। মাঝেমধ্যে অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটছে।
টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্তের বাসিন্দা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুণ রশিদ সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্ত সড়কটি নির্মিত হলে মাদক-অস্ত্র চোরাচালান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ সীমান্তের সব অপরাধ দমনে বিজিবি জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে। বাড়বে সীমান্ত নিরাপত্তাও। বিশেষ করে বিজিবির টহল জোরদার হলে স্থানীয় ১০ হাজার জেলে নাফ নদীতে মাছ ধরার নিরাপত্তা পাবে।
প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে আরও ৩৫০ কোটি টাকার কাজ
২০ ফেব্রুয়ারি সকালে উখিয়ার পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে গিয়ে দেখা গেছে, নাফ নদীর তীর ঘেঁষে চলছে সীমান্ত সড়কের কাজ। শ্রমিকেরা নদীর তীর থেকে কাদামাটি কেটে সড়কে ফেলছেন। এক্সকাভেটর দিয়ে সেই মাটি চাপা দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের পাহারা দিচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা। উলুবনিয়া সীমান্তে একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। এতে লোকালয়ের জায়গাজমি ও চিংড়ি প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে স্থানীয়েরা জানান।
নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। এপার থেকে ওপারের (মিয়ানমার) কাঁটাতারের বেড়া এবং সেখানকার সীমান্তরক্ষীদের নজরদারি চোখে পড়ে।
কাজের ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, নকশা অনুযায়ী সড়ক নির্মাণকাজ চলছে।
স্থানীয় আঞ্জুমানপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুলতান আহমেদ বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। গত দুই মাস কাজে ধীরগতি ছিল। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাজের গতি বেড়েছে। সড়কটি নির্মিত হলে এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে যাবে।
পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬১ কিলোমিটারের সড়কে এখন মাটির কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি ২১ শতাংশ। চলতি সালে কাজ শেষ করার কথা ছিল। আমরা আরও এক বছর সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছি। কারণ বিজিবির চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্পটিতে আরও নতুন কিছু প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে। এ জন্য আরও ৩৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে একটি সংশোধিত প্রকল্প ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
পাউবোর তথ্যমতে, ২২ ফুট প্রস্থের এই সীমান্ত সড়কে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা ছিল না। এখন সেখানে ইটের রাস্তা হবে। তবে বিজিবির দাবি, ইটের রাস্তার পরিবর্তে পাকা সড়ক নির্মাণ। তা ছাড়া ৬১ কিলোমিটারের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ আড়াই কিলোমিটার সড়কের পূর্ব পাশে (নাফ নদীর অংশে) বসানো হবে সিসিব্লক। সড়ক যানবাহন চলাচল উপযোগী করতে অন্তত ৩১টি স্লুইসগেট ভেঙে নতুন করে তৈরি করতে হবে। ৬১ কিলোমিটারে স্লুইসগেট আছে ৪৬টি। রাতের বেলায় পুরো সড়ক আলোকিত রাখতে স্থাপিত হবে অন্তত ৫০০ স্ট্রিট লাইট। সড়কে গাড়ি পার্কিং ও নিরাপত্তার জন্য তৈরি হবে ৫০টির বেশি বিজিবি চৌকি। সব মিলিয়ে প্রকল্পে নতুন করে যোগ হবে আরও ৩৫০ কোটি টাকার কাজ। এরপর সড়কের পূর্ব পাশে নির্মিত হবে কাঁটাতারের বেড়া।
১ ফেব্রুয়ারি সীমান্ত সড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। এ সময় পাউবো ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।