Home এইমাত্র ২৬ বছরেও মশার সঙ্গে পেরে ওঠেননি ঢাকার মেয়ররা

২৬ বছরেও মশার সঙ্গে পেরে ওঠেননি ঢাকার মেয়ররা

361
0
SHARE

৩৩ বছর ধরে নানা প্রতিশ্রুতি পেয়েও তা ভঙ্গ হওয়ায় মনঃকষ্টে ভুগেছেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বহু পঠিত ও বহুশ্রুত ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতা সেই দুঃখের আখ্যান। এই রাজধানীর উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে একাধিক মেয়র এসেছেন। তাঁরা বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নগরবাসী তাতে আশ্বস্ত হয়েছেন। ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছেন বারবার।
মোহাম্মদ হানিফ, সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র। আর আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন বিভক্ত সিটি করপোরেশনের মেয়র—এই চারজন নব্বইয়ের দশক থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র। তাঁদের প্রত্যেকের নির্বাচনী ইশতেহারে মশা নিয়ন্ত্রণ, যানজট নিরসন, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অগ্রাধিকার পেয়েছিল। কিন্তু তাঁরা এসব সমস্যা সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারেননি। উল্টো দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তা বাড়ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন আগামী ১৭ মে পর্যন্ত (পূর্ণ পাঁচ বছর) দায়িত্ব পালন করবেন। তারপর দায়িত্ব নেবেন নবনির্বাচিত মেয়র ফজলে নূর তাপস। তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারেও মশকনিধন, যানজট নিরসন, পরিচ্ছন্নতা প্রাধান্য পেয়েছে। এখন তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর কতটা সফল হবেন, তা ভবিষ্যৎই বলবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম। এর আগে আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালের উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন তিনি। তাঁদের দুজনেরই নির্বাচনী ইশতেহারে মশকনিধন, যানজট নিরসন, পরিচ্ছন্নতা প্রাধান্য পেয়েছে।
নগরবিদেরা বলছেন, নির্বাচনের আগে মেয়র প্রার্থীরা যানজট নিরসনসহ এমন অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এর অধিকাংশ সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আর যেসব প্রতিশ্রুতি সরাসরি সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়নের কথা, সেগুলোতেও তাঁরা অনেকাংশে সফল হতে পারেননি। তাই আগে নিজ সংস্থার কাজগুলো ঠিকমতো করতে হবে।
মশকনিধন
১৯৯০ সালের আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ‘ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন’ নামে পরিচিত ছিল। পরে নাম পরিবর্তন হয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন করা হয়। ১৯৯৪ সালের ৩০ জানুয়ারি নগরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
মোহাম্মদ হানিফ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগের দিন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জনসভা করেছিলেন। এই জনসভায় তিনি নির্বাচনী ইশতেহার বা চারটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী পরিকল্পনা ছিল অন্যতম।
২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকা নির্বাচিত হন। তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে ছয়টি বিষয়কে তিনি অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৪ নম্বরে ছিল মশকনিধন। সাদেক হোসেন খোকা নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকায় অ্যারিয়াল স্প্রে করে মশকনিধনের পরিকল্পনা করা হয়। সে সময় পরিবেশবাদীদের তীব্র বিরোধিতার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি।
পরে ২০১৫ সালের এপ্রিলে নির্বাচনী ইশতেহারে মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন দক্ষিণ সিটির বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। কিন্তু তাঁর সময়কাল ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকাসহ সারা দেশে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় তা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনকে হিমশিম খেতে হয়েছে। দক্ষিণ সিটির মশার ওষুধের মান, কেনাকাটায় অনিয়ম, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলাসহ অনেক বিষয় নিয়ে সেই সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন নাগরিকেরা। সরকারি হিসাবে, ওই বছর রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১১১ জন মারা যান।
চলতি অর্থবছরে মশকনিধনে ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ডিএসসিসি। তবে এখন পর্যন্ত মশকনিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম বা অন্য কোনো কর্মসূচি হাতে নেয়নি সংস্থাটি। এডিস মশার উপদ্রব বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ডিএসসিসি।
নতুন মেয়ররা মশার বিরুদ্ধে যা করবেন বলছেন
ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই সিটি পাচ্ছে নতুন মেয়র। তবে এখনো এ দুজন দায়িত্ব নেননি। দায়িত্ব নিয়েই মশার বিরুদ্ধে লাগবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। মশা মারাকে তাঁদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মন্তব্য করেছেন প্রথম আলোর কাছে।
ডিএনসিসির মেয়র পদে বিজয়ী মো. আতিকুল ইসলাম ঢাকায় মশার উপদ্রপ কমাতে ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) পদ্ধতি গ্রহণ করতে চান। যদিও তিনি বলেছেন, এটা হঠাৎ করেই হবে না। ২০০৮ সালে কলকাতায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়। এটা একটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে ১১ বছর সময় লেগেছে। গত বছরও ডেঙ্গু হয়েছে কলকাতায়। জরিমানার ব্যবস্থা করা। কোথাও আবর্জনা ফেললে জরিমানার বিধান রাখতে হবে। যাঁর যাঁর বাড়ি পরিষ্কার রাখতে জোর দিতে হবে। র্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করতে হবে। কেউ যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, তবে তার বাসার চারদিকে গিয়ে স্প্রে করে আসতে হবে।
তবে তিনি এ–ও বলেন, ‘এটা শুধু সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। যিনি ২০ তলায় থাকেন এবং তাঁর বাসায় যদি ডেঙ্গুর আলামত থাকে, তাঁকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমি স্বল্প মেয়াদে যে কাজটি করতে চাই সেটা হলো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা। আমাদের মশার লার্ভিসাইডের (মশার শূককীট নিধন) দিকে বেশি নজর দিতে হবে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এ জন্য কীটতত্ত্ববিদ দরকার। অদ্ভুত বিষয় হলো, সিটি করপোরেশনে কোনো কীটতত্ত্ববিদ নেই। এখন সিটি করপোরেশনে ১০টি অঞ্চল আছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে অন্তত ছয়জন কীটতত্ত্ববিদ লাগবে। তাঁরা বিভিন্ন অঞ্চলে থাকবেন। আর সিটি করপোরেশনের অফিসে থাকবেন দুজন।’
আরেকটি জরুরি বিষয়, ওষুধ যাঁরা ছিটাবেন, তাঁদের ছিটানো ঠিক আছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। আর যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, সেটার মান পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শুধু ওষুধ দিলেই তো হলো না। তাতে কাজ হচ্ছে কি না, তা তো দেখতে হবে। এ জন্য আমি তৃতীয় কোনো পক্ষকে কাজটি দিতে চাই। স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেব না। দেব বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে, যাতে এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনে বিজয়ী ফজলে নূর তাপস গত ২৪ জানুয়ারি প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মশকনিধন ঢাকাবাসীর মৌলিক নাগরিক সেবার মধ্যেই পড়ে। বছরে নির্দিষ্ট সময়ে নয়, এটা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ হবে। ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে। মশকনিধন কার্যক্রমও অত্যাবশ্যকীয় সেবা, এটি দৈনিক চালানো হবে। জুন মাসে মশার প্রকোপ বাড়ে। তাই গত বছরের মতো এবার যাতে মশার প্রকোপ না বাড়ে, সে জন্য বর্তমান মেয়রকে (সাঈদ খোকন) প্রস্তুতি নিতে হবে।
যানজট
গত দুই দশকে রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ হয়েছে। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরে যানজট বেড়েছে কয়েক গুণ। অথচ সিটি করপোরেশনকে যানজট নিরসনে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। রিকশার নিবন্ধন নিতে হয় সিটি করপোরেশন থেকে। ঢাকায় কত রিকশা চলে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বিশ্বব্যাংক বলছে, ঢাকার রাস্তায় কমপক্ষে আট লাখ রিকশা চলে। শহর দাপিয়ে বেড়ানো এসব অবৈধ রিকশা বন্ধে সিটি করপোরেশন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ঢাকায় এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ছয় কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। যানজটে ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। আর যানজটের কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। অথচ যানজট নিরসনে গত দুই দশকে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসিয়েছে সিটি করপোরেশন। এখন তা অকার্যকর। পুলিশের হাতের ইশারায় চলছে যানবাহন।
সব শেষ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নগরের গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো ও যানজট নিরসনে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। ১০ সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে। পরে তিনি সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। দুই বছরের মধ্যে ছয়টি কোম্পানির অধীনে নগরের গণপরিবহন চালুর ঘোষণা দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার অগ্রগতি নেই।
সাঈদ খোকন দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ফলে বাস রুট রেশনালাইজেশনের পরবর্তী কার্যক্রম কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে পরবর্তী মেয়রকে চলমান কার্যক্রমগুলো চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাঈদ খোকন। যদিও নবনির্বাচিত মেয়র ফজলে নূর তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘সচল ঢাকা’ বাস্তবায়নে যানজট কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অপরিচ্ছন্ন নগর
অপরিচ্ছন্নতা, দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ—তিন দশক ধরেই ঢাকার সঙ্গী হিসেবে আছে। মোহাম্মদ হানিফ, সাদেক হোসেন খোকা ও সাঈদ খোকন ঢাকার এই তিন সমস্যা সঠিকভাবেই চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। এসব সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ২৬ বছরে এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে উদ্যোগ ছিল না বললেই চলে। সাঈদ খোকন এসটিএস, ওয়েস্ট বিন স্থাপনসহ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনায় একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও তার সফলতা মেলেনি।
কয়েক বছর ধরেই ঢাকার বায়ুমান খারাপ হচ্ছে। চলতি বছর একাধিকবার বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার শীর্ষে উঠে আসে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসের বেশির ভাগ সময় ঢাকা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার শীর্ষ পাঁচে।
নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নগরে মশার উপদ্রব ও অপরিচ্ছন্নতা সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এই বিষয়ে সাবেক ও বর্তমান মেয়রের দক্ষতা, চেষ্টা বা আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। তাঁদের মধ্যে সুশাসন বা জবাবদিহি নেই। যাঁর যে কাজ, তাঁরা তা ঠিকমতো করেন না। তাই এখন নগরের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কোনো কাজ হবে না। তিনি আরও বলেন, যত দিন মেয়রকে জবাবদিহির আওতায় না আনা হবে, তত দিন করপোরেশনের কোনো কাজেই সফলতা মিলবে না। তাঁর সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঠিকমতো কাজ করবেন না। জনগণকেও পরিচ্ছন্নতা ও মশকনিধনে সতর্ক হতে হবে।
নগরের যানজট নিরসন মেয়রদের ‘ম্যান্ডেটে’ আসে না বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যানজট নিরসনের দায়িত্ব বিআরটিএ এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের। এই বিষয়ে মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনে ইশতেহার দেওয়ার কিছু নেই। তবে যানজট কমানোর অংশ হিসেবে সড়ক ও ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করা সিটি মেয়রের দায়িত্ব। তাঁকে আগে এই দায়িত্বটি পালন করতে হবে।