Home আন্তর্জাতিক দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনার ভয়ংকর ছোবল

দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনার ভয়ংকর ছোবল

285
0
SHARE

করোনাভাইরাসের নতুন প্রাদুর্ভাবের স্থান দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আজ সোমবার দেশটি জানিয়েছে, আরও ১৬১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন সাতে পৌঁছেছে। এর আগে গত শনিবার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক দিনে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
কর্তৃপক্ষ জানায়, থাইনাম নামের একটি হাসপাতাল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর থেগুরের ধর্মীয় এক গোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
থেগু ও ছংগদুর কাছাকাছি হাসপাতালটিকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই হাসপাতালে বয়স্ক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া না যাওয়ায় ভাইরাসটি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
আজ বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৭৬৩। দেশটিতে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এক সপ্তাহের কম সময়ে সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০০ জনের বেশি মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলের শহর থেগুর একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায় থেকে গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই খ্রিষ্টান সম্প্রদায় শিনচেয়নজি চার্চ অনুসারী।
কোরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্রের (কেসিডিসি) আজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ১২৯ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন।
শিনচেয়নজি চার্চ অনুসারীদের মধ্যে প্রথম ভাইরাসটি ছড়ায় ৬১ বছর বয়সী এক নারী থেকে। ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বর নিয়ে তিনি থেগুতে কমপক্ষে চারটি কর্মকাণ্ডে যোগ দেন। শহরটিতে লোকসংখ্যা রয়েছে ২৫ লাখ।
থেগুর মেয়র ওয়ান ইয়ং-জিন জানান, আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার ৮৫ শতাংশ ওই সম্প্রদায়ের।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই সম্প্রদায়ের অনুসারীদের বড় একটি অংশ ফাউন্ডার্স ব্রাদারের মৃত্যুতে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শোকসমাবেশে অংশ নিয়েছিল।
শিনচেয়নজির সদস্যদের মধ্যে ৯ হাজার ৩০০ জনকে কোয়ারেন্টাইন (রোগ সংক্রমণের শঙ্কায় পৃথক রাখা) বা বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
দেশটিতে করোনাভাইরাসের উদ্বেগের কারণ হওয়ায় এক ভিডিওবার্তায় ক্ষমা চেয়েছেন সম্প্রদায়টির মুখপাত্র। তবে শুরু থেকেই তাঁরা স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছেন বলে জানান। তিনি রোগটি সংক্রমণের জন্য চার্চকে দোষারোপ করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, রোগটি চীনে ছড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘দয়া করে মনে রাখুন, শিনচেয়নজি চার্চ এবং এর সদস্যরা কোভিড-১৯-এর সবচেয়ে বড় শিকার।’
গতকাল রোববার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন করোনাভাইরাসের ব্যাপারে দেশটিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘লাল’ জারি করেছেন।
এর আগে টেলিভিশনে প্রচারিত জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর’ বলে উল্লেখ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছাং সিই-কান। ভাষণে তিনি দেশের মানুষকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ যেকোনো বড় আকারের সমবেত হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, সরকার মনে করে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করেছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ফেস মাস্ক মজুত করে রাখলে বা সদ্য নিষিদ্ধ কোনো সমাবেশে কেউ অংশ নিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ার করেন।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশটি শক্ত অবস্থান নিয়েছে। কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলগুলোর ছুটি আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। চীন থেকে আগত ব্যক্তিদের ওপর দুই সপ্তাহের নজরদারি আরও কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার টেক জায়ান্ট স্যামসাং রাজধানী সিউল থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পূর্বে গুমিতে তাদের স্মার্টফোন প্ল্যান্টের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। স্যামসাংয়ের একজন কর্মী আক্রান্ত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গুমি প্ল্যান্টে অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস২০ এবং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ মডেলসহ উচ্চমূল্যের ফোন তৈরি করা হতো।
আজ বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে ইরানে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে চীনের পর এটাই সবচেয়ে বেশি। ইরানে মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৪৩। এর বেশির ভাগই পবিত্র নগর কোমের বাসিন্দা। ইরাক, পাকিস্তান, আর্মেনিয়া এবং তুরস্ক ইরানের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আফগানিস্তান ইরানে আকাশ ও স্থলপথে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
গত বছরের শেষ দিকে করোনাভাইরাস চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে। চীনে ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। মারা গেছেন ২ হাজার ৪৪২ জন।