Home রাজনীতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত অডিও ক্লিপ সুপার এডিটেড : নিক্সন

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত অডিও ক্লিপ সুপার এডিটেড : নিক্সন

143
0
SHARE

নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন এই তিন উপজেলা নিয়ে আমার নির্বাচনী এলাকা। চরভদ্রাসন থেকে আমার বাড়ি প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। নির্বাচন চলাকালে এমনকি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার সময় আমি চরভদ্রাসন এলাকায় যাইনি। ভোট শেষ হওয়ার পর প্রশাসনের তাণ্ডবে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের শান্ত করতে গিয়েছিলাম, সেটাও প্রশাসনের অনুরোধে।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার তিনজন টিএনওর সঙ্গে আমার ভাই-বোনের সম্পর্ক। এ নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী ছিল, সেই প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীরা কাজ করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত বক্তব্য ও ইউএনওর সঙ্গে কথা বলার অডিও ক্লিপ সুপার এডিটেড বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার যে বক্তব্য ও কথা প্রকাশিত হয়েছে, এটা পুরোপুরিভাবে এডিট করা। বেলা ১১টার দিকে আমি টিএনওকে ফোন করেছিলাম, আমার একজন কর্মী মাঠে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল, সেই অপরাধের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিজিপি ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সেই বিষয়টা অবগত করার জন্যই আমি ফোন করেছিলাম। যেটা ছড়ানো হয়েছে সেটা সুপার এডিট করা।

নিক্সন বলেন, আপনারা এখানে দেখতে পারবেন যে টিএনওর সঙ্গে আমার আলাপটা দেয়া হয়েছে। টিএনও একজন বিসিএস ক্যাডার। যদি আমার সঙ্গে টিএনওর কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া হয়, ওনি তো আইন সম্পর্কে সব জানেন। হাইকোর্টে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে, রায় আছে সেখানে কারও ফোনের রেকর্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া যাবে না। আমার টিএনও এত বোকা না, যে তিনি আইনের লোক হয়ে আইন ভঙ্গ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা দিয়ে ভাইরাল করবে। এখন পর্যন্ত আমার টিএনওর কোন বক্তব্য কিন্তু আসেনি।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, উনার সঙ্গে আমার এ রকম আচরণ করার কোন প্রশ্নই উঠে না। যে অডিও ক্লিপ বানানো হয়েছে, এটা পুরো ভিত্তিহীন। আপনারা চরভদ্রাসনের ইউএনকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি এমন কোন আচরণ করেছি কি-না। হ্যাঁ আমি, ফোন করেছিলাম একজনকে ধরে নিয়ে গেছে সেই বিষয়ে। আমার শত্রু পক্ষ ভয়েস এডিট করেছে।

এ সংসদ সদস্য বলেন, আপনারা জানেন কিছু দিন আগে ফরিদপুরে বরকত-রুবেলের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিয়েছিল আমি সর্ব প্রথম সমর্থন করেছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে অনেক বড় বড় নেতা আছেন সবাই এক হয়ে এই ষড়যন্ত্রটা করেছেন। এই যে আমার টিএনও আপা- উনার সঙ্গে আমার কিন্তু মধুর সম্পর্ক।

নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রশাসনের অনুরোধে নির্বাচনী এলাকার একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীদের কোন ধরনের গণ্ডগোল না করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দাবি করেন নিক্সন চৌধুরী।

নিক্সন চৌধুরী বলেন, চরভদ্রাসন উপজেলায় উপনির্বাচন পরিচালনার জন্য চারজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হলো। নির্বাচনের দিন দেখা গেল সেখানে ১৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট দেয়া হলো। এই ম্যাজিস্ট্রেটরা সারাদিন আমার নেতাকর্মীদের ওপর তাণ্ডব চালিয়েছে, নৌকার ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে নেতাকর্মীরা টিএনও কার্যালয়ে গিয়েছিল। প্রশাসন থেকে আমাকে রিকোয়েস্ট করে নিয়ে গেছে। আমি নির্বাচনে বিধি অমান্য করিনি। কারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নেতাকর্মী এবং ভোটারদের শান্ত করতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের বুঝিয়েছি।

তিনি বলেন, আমি উপজেলা থেকে তাদের সরিয়ে ২ কিলোমিটার দূরে শান্ত করার জন্য হাত জোর করে অনুরোধ করেছি। আপনারা কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না, তারা সারাদিন যা করেছে তার বিচার আমি দেব।

ফরিদপুর জেলার ডিসি নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করার অপরাধে বিচার হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন নিক্সন।

তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় আমি জানাতে চাই, এই নির্বাচনে আপনারা খবর নিয়ে দেখবেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী একটা অভিযোগও করেনি যে- কেউ খারাপ আচরণ করেছে, নির্বাচনে কোন বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, কেউ হুমকি দিয়েছে, কেউ কোনো ভয়ভীতি দেখিয়েছে। তাহলে চারজন ম্যাজিস্ট্রেটের জায়গায় ইলেকশনের আগের দিন ১৩ জন কেন দেয়া হলো? তারপরও ১৩ জন দিয়েছে তাতে সমস্যা নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে এর জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু চারজনকে নির্বাচন কমিশনকে চাওয়ার চিঠি আছে, ১৩ জনের কি সেই চিঠি আছে?

তিনি বলেন, সারা দিনে বিজিবি নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটরা যে অবস্থা করেছেন, এর মধ্যে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু নির্বাচনের দিন সকালে অনেক সেন্টারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মারমুখী অবস্থান নেয়। নিরীহ ভোটাররা ভীত হয়ে পড়ে। অনেক ভোটার ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অনেক সেন্টারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পেশকারদের ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বসে থাকতে দেখা যায়।

সংসদ সদস্য বলেন, আমার অনেক কর্মীকে বিনা কারণে আটক করে জরিমানা করেন। তিনজন নৌকার এজেন্টকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। বিষয়টা হলো ১৩ জন ম্যাজিস্ট্রেটকে আনা হয়েছে, অথচ বিগত দিনে যত নির্বাচন হয়েছে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের বেশি কাজ করেনি। প্রতিটা সেন্টারে বিজিবি সদস্যদের নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে যেন ভোটাররা না আসে। যেই কেন্দ্রগুলোতে নৌকার ভোটার বেশি সেখানেই তাণ্ডব চালিয়েছে। এর জন্য ডিসিরও বিচার চাওয়া আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী চর এলাকায়, সেখানে কোন তাণ্ডবও করে নাই। সেখানে কোন গ্রেফতারও নাই।

তিনি বলেন, উনারা আমার সমর্থনের প্রার্থীকে ঠেকানোর জন্য বিএনপির প্রার্থীকে জেতাতে ডিসি সাহেবের নেতৃত্বে এই তাণ্ডবগুলো চালানো হয়েছে। আমি কোন আইন ভঙ্গ করে থাকলে অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আইন তো ডিসিও ভঙ্গ করেছে। সে কি পারে ৪৮ ঘণ্টা অতিক্রম হওয়ার আগে আমার বাড়িতে টিএনওকে পাঠাতে? যদি আমার একার বিরুদ্ধে মামলা হয় তাহলে ডিসির বিরুদ্ধেও মামলা হবে।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ফরিদপুর জেলার ডিসিও আচরণবিধি ভেঙেছে বলে দাবি করেছেন এমপি নিক্সন।

নিক্সন বলেন, একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোনোভাবেই এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমার বাড়ি আসতে পারে না। আমার বাড়িতে হাজার হাজার মানুষ ছিলেন সবাই দেখেছে। টিএনও আপা নিজেও স্বীকার করবেন, যে ডিসি সাহেব নির্দেশ দিয়ে আমার বাড়ি পাঠিয়েছিলেন। তাহলে ডিসি সাহেবও আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।

তিনি বলেন, আমার ফোনে অনেক ক্লিপ আছে। ডিসি ও টিএনও আমার সঙ্গে কথা বলেছে এবং ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের ব্যাপারে অনেক রেকর্ডিং আছে, আমি তো সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে দিচ্ছি না। আমি তো হাইকোর্টের রোল অবমাননা করতে পারি না। যেই ক্লিপগুলো অনিয়ম করার জন্য ডিসি টিএনওকে প্রেসার করেছে, সেই ক্লিপগুলো আমার কাছে আছে। আমি জায়গা মতো সেই ক্লিপগুলো অবশ্যই দেব। যদি আমার দরকার মনে হয়।