Home রাজনীতি গণতন্ত্র নস্যাতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি: কাদের

গণতন্ত্র নস্যাতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি: কাদের

222
0
SHARE

বিএনপি গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবসে এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন।

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে যে দেশদ্রোহী অপশক্তি স্বৈরচার আইয়ুব-মোনেমের পক্ষে তথা বাঙালির স্বাধীনতা এবং মুক্তির বিপক্ষে ছিল তাদের উত্তরাধিকার আজও বাংলাদেশের গণতন্ত্র-উন্নয়ন অগগ্রতি-মুক্তি ও সমৃদ্ধির পথে প্রধান অন্তরায়। সেই অপশক্তির প্রতিভূ‚ বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে ব্যাহত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। স্বৈরশাসনের গর্ভে জন্ম নেওয়া বিএনপি গায়ে গণতন্ত্রের আস্তিন জড়ালেও তাদের আস্তিনের মধ্যেই রয়েছে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরা দানবীয় রূপ। স্বৈরতন্ত্রের প্রতিভূ‚ বিএনপির গোপন অভিপ্রায়ে রয়েছে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার নানামুখী ষড়যন্ত্রের নীলনকশা। নির্বাচনে অংশ না নেওয়া, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, নির্বাচন কমিশন ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিকরণে অনীহা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, দেশবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকা সেই নীলনকশারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এবং তাদের দল বিএনপি ভুল রাজনীতির কারণে এখন চরম দুর্দিনের ছায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন। নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতায় বিএনপি আজ গভীর সংকটে নিপতিত। রাজনৈতিক দৈন্যতায় চরম দুর্দিনের কালো অন্ধকারের হতাশা-অবসাদ জেঁকে বসেছে তাদের মনে। সেই সংকট ঢাকতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিকে দুর্দিনের আষাঢ়ে গল্প শোনানোর পাঁয়তারা করছেন। বিভিন্ন সময় বিএনপি শাসনামলের দুঃসহ নির্যাতন-নিষ্পেষণ এখনো দেশবাসীর স্মৃতিতে দগদগে ক্ষতের স্মারক বহন করছে। বাংলার জনগণ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও চরম অনিশ্চয়তার দুর্বিসহ সময়ে ফিরে যেতে চায় না। সেই অন্ধকারময় সময় কাটিয়ে বাংলার জনগণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে আলোকজ্জ্বল আগামীর পথে এগিয়ে চলেছে। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কালজয়ী নেতৃত্বে স্বৈরতন্ত্রের প্রতিভূ‚ বিএনপি-জামায়াতের সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা এবং পারিপার্শ্বিক সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা জয় করে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত অভিষ্টে পৌঁছাবেই, ইনশাআল্লাহ।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ২৪ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। এই দিনে তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতনের লক্ষ্যে দুর্বার গণআন্দোলন শহীদ হন কিশোর মতিউর রহমান, রুস্তমসহ অনেকেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে দিনটি অনন্য গুরুত্ব বহন করে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়দফা ভিত্তিক আন্দোলনে সোচ্চার হয় সমগ্র জাতি। ছয়দফা দাবির আন্দোলন দমন করতে স্বৈরাচার আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুসহ অনেককে গ্রেফতার করে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়াই ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দুরভিসন্ধি। প্রহসনের এই বিচারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলে বাংলার জনগণ। ছয়দফা ভিত্তিক আন্দোলনের আদর্শকে ধারণ করে ছাত্রলীগসহ চারটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলে এবং ১১-দফা দাবি ঘোষণা করে। ছয়দফা ভিত্তিক ১১-দফা দাবিতে ছাত্রসমাজের সমস্যাকেন্দ্রিক দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংক্রান্ত দাবিসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ’৬৯-এর ১৭ই জানুয়ারি দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসভা ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (আসাদ) নিহত হলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। আন্দোলনের দাবানল সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে ২৪ জানুয়ারি অভূতপূর্ব গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার আইয়ুব খানের পতন ঘটে। ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যুত্থান বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও বেগবান করে তোলে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, একইভাবে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তৎকালীন আরেক স্বৈরশাসক চট্টগ্রামের লালদিঘীর ময়দানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গণহত্যা চালায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রাণ রক্ষায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে। সেদিন পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ২৪ জন বা তার অধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করে এবং আহত হয় কমপক্ষে দুই শতাধিক নেতাকর্মী। তাই দিনটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে নৃশংসতম কালো দিন।