Home জাতীয় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

40
0
SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, এখন থেকেই তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে দেশের জনশক্তিকে মানিয়ে নিতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) ২৪তম জাতীয় সম্মেলন ও ৪৩তম কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে প্রযুক্তি,কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্সের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এই লক্ষ্যেই কিন্তু আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম এবং সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে করেছি এবং সেই সঙ্গে আমরা ট্রেনিং এবং শিক্ষার ব্যবস্থাও নিয়েছি।

তিনি বলেন, সব মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণিতে ১০০ নম্বরের কারিগরি বিষয় সব ছাত্র-ছাত্রীর জন্য বাধ্যতামূলক যেন হয় আমরা সে পদক্ষেপও নিয়েছি। ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে প্রতিটি মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসায় এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সও চালু করা হবে।

তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে, ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গে আরও ২৪টি টিটিসি যোগ করে কর্মকান্ড শুরু করা হয়েছে এবং আরও ৮৮টি টিটিসি স্থাপনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে সরকার। এসব টিটিসিতে মধ্য প্রাচ্যসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় বিশে^ আর কোন কোন দেশে শ্রমিক পাঠানো যায় যে জন্য তাঁর সরকার শ্রম বাজার খুঁজে দেখছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তাঁর সরকার তরুণ সমাজের প্রযুক্তি জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে ৪ বছরে উন্নীত করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আপনাদের বক্তব্যে জানতে পারলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই কোর্সকে ৩ বছরে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ৪ বছর তো আমিই করে দিয়েছিলাম। কাজেই এটাকে আরও বিশেষভাবে দেখা দরকার। আর এই কোর্স এভাবেই অব্যাহত থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, প্রযুক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ, আঞ্চলিক যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি,অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্যতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার ওপর সব থেকে জোর দিয়েছি।

বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা চমৎকার ভূমিকা রাখছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারপরও আমি বলব, যেসব প্রকল্প আমাদের একেবারে আশু শেষ করা প্রয়োজন আমরা সেগুলো দ্রুত শেষ করা। যেহেতু এখনই প্রয়োজন নেই, সেগুলো আমাদের ধীর গতিতে হবে। আমরা অহেতুক টাকা ব্যয় করব না। কিন্তু যেগুলো আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো আমরা করব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনোভাইরাসের পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। সমস্যা সমাধানে সংকট উত্তরণে চেষ্টা করা হচ্ছে। আজকে সারা বিশ্বে একটা দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি আমরা দেখতে পাচ্ছি, এর প্রভাব থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। তাই এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যার পক্ষে যা সম্ভব, তাই যেন উৎপাদন করে।

জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে কারিগরি বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলেও অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও আমুল পরিবর্তন আনতে হবে এবং ইতোমধ্যে আমরা এনেছি।’

একসময় বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে কারো কোন আকর্ষণ না থাকলেও এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাত্র ৭ শতাংশ লোক কারিগরি শিক্ষা নিতো। আজকে তা কিন্তু অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট শিক্ষার্থীর ৩০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করে শিক্ষার মূল স্রোতধারায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে নিয়ে আসারও পরিকল্পনা গ্রহন করেছি।

জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যখন যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন তখন দেশ পুনর্গঠনে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মাঠপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালনের কথাও জানান সরকার প্রধান। তিনি তাদের দীর্ঘদিন ধরে পূরণের অপেক্ষায় থাকা দাবি-দাওয়া সম্পর্কে অনুষ্ঠানে জানতে পেরে সেসবের মধ্যে সমাধানযোগ্যগুলো সমাধানকল্পে তাঁর মুখ্য সচিব এবং পিএমও সচিবকে দায়িত্ব দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তটি বিশে^ বাংলাদেশকে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। যে মর্যাদা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এ জন্য তিনি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শকে বুকে ধারণ করেই আমরা পথ চলেছি বলেই আজকে এই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি (নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের) এবং আজকে আমরা অন্তত এইটুকু দেখাতে পারি না আমাদের শক্তি আছে যে কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমাদের মর্যাদা নিয়েই আমরা বিশে^ মাথা উঁচু করে চলব।

সেভাবেই ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তোলাতেও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন যেন মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে তারা আগামীর পথ চলতে পারে। পাশাপাশি, বয়স না থাকার পরও গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ আঁকড়ে থাকতে না পেরে ড. ইউনূসের পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে বিশ^ব্যাংকের কাছে লবিং এবং পরবর্তী সময়ে বিশ^ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তাকে সফলভাবে মোকাবিলার কথাও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ’ প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে ‘বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ’ মুজিববর্ষের লোগোও হস্তান্তর করে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পেশাগত ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বরেণ্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে আইডিইবি স্বর্ণপদক প্রদান করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হালিম বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুর করিম খান এবং বাপেক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী আইডিইবি স্বর্ণপদক লাভ করেন।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।

আইডিইবি সভাপতি প্রকৌশলী এ কে এম এ হামিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শামসুর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে আইডিইবির বহুমাত্রিক কর্মকান্ডের ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।