আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমরা আবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ১৪৭তম রিফ্রেশার কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। ফের মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে মত দেবো। তখন তাঁর মুক্তির মেয়াদ ফের বাড়বে।
আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, শর্তসাপেক্ষে মুক্ত থাকা অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার আবেদন বিবেচনার সুযোগ নেই। তাকে কারাগারে ফিরে তবেই আবেদন করতে হবে।
সিআরপিসির ৪০১ (১) ধারায় বলা আছে, যখন কোনো ব্যক্তিকে অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়, তখন সরকার যেকোনো সময় শর্ত ছাড়াই অথবা শর্তসাপেক্ষে শাস্তি স্থগিত করতে পারে অথবা তাকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তার পুরো বা যেকোনো অংশ স্থগিত করতে পারে।
উল্লেখ্য, সবশেষ গত ২৩ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে আগের দুটি শর্তে মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানো হয়। এরপর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। মোট পাঁচবার কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত মেয়াদে খালেদা জিয়া ঢাকার নিজ বাসায় থেকে তার চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এই সময়ে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না, এমন শর্ত দেওয়া হয়। দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ওই বছরের ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে ৬ মাস করে মুক্তি মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিচারকদের উদ্দেশে আনিসুল হক বলেন, ঋণখেলাপিরা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ঋণখেলাপিদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। এছাড়া মামলার শুনানিতে ঋণখেলাপিদের অযৌক্তিক সময় দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলে ঋণ খেলাপের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার পেতে প্রতিদিন লাখো মানুষ আদালতের বারান্দায় ধর্না দিচ্ছেন। আপনাদের দ্রুত বিচার (রায়) দিয়ে তাদের দুঃখ দূর করতে হবে।