Home জাতীয় সীমান্তে প্রাণহানি শূন্যে নামিয়ে আনতে ভারত সম্মত : প্রধানমন্ত্রী

সীমান্তে প্রাণহানি শূন্যে নামিয়ে আনতে ভারত সম্মত : প্রধানমন্ত্রী

49
0
SHARE

সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করতে বাংলাদেশ-ভারত সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার গণভবনে সদ্য সমাপ্ত হওয়া ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধুরাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ভাষা ও সংস্কৃতির সাযুজ্যের কারণে আমাদের সম্পর্ক প্রগাঢ় হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালে সহায়তা ও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সহযোগিতা এ বন্ধুত্বকে বিশেষত্ব প্রদান করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারত অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছে।’

ভারত সফরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। লিখিত বক্তব্যে সেগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যার মাধ্যমে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত। ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তসীমান্ত রেল সংযোগে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে।’

চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দিতে ভারত সরকার পদক্ষেপ নেবে দেশটি জানিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, নদী দূষণ এবং অভিন্ন নদ-নদীর ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ এবং নদীর নাব্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রেলওয়ে সেবার মান বাড়াতে আইটি সলিউশন বিনিময় করা হবে বলে জানান তিনি।

২০২২ সালের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি নিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের কাজ শুরু করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

কোভিড মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর আমার এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সফরের পুরো সময় জুড়ে আমরা ভারতের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ও সৎ প্রতিবেশী হিসেবে সমতা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দুই দেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার লক্ষ্য করেছি।’

ভারতীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে, সংবাদমাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আমি বাংলাদেশের জন্য যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ্য করেছি তা অসাধারণ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই।’

ভারত সফরে সহযোগিতার যে সকল ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের একসঙ্গে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া অচিরেই একটি সমৃদ্ধিশালী অঞ্চলে পরিণত হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে নয়াদিল্লি যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি, অভিন্ন নদ-নদীর পানিবণ্টন, সীমান্তে হত্যা ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহযোগিতার বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব পায়।

নরেন্দ্র মোদি-শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হন।

সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী কিষান রেড্ডি, ভারতের আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি।

সফরের দ্বিতীয় দিন ৬ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সফরে শেখ হাসিনা রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া দিল্লিতে হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া দরগাহ পরিদর্শন করেন তিনি।

বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়িক ফোরাম আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও যুদ্ধাহত ভারতীয় সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ‘মুজিব স্কলারশিপ’ দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

চার দিনের সফর শেষে ৮ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।