Home জাতীয় মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ‘অমূলক’ : প্রধানমন্ত্রী

মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ‘অমূলক’ : প্রধানমন্ত্রী

27
0
SHARE

মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে এটাকে ‘অমূলক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি জাতীয় সংসদে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, কোথায়, কত দুর্নীতি হয়েছে তা স্পষ্ট করতে হবে। স্পষ্ট করে বললে তার জবাবও তিনি দেবেন বলে উল্লেখ করেন।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের এ সংক্রান্ত একটি সম্পূরক প্রশ্নে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ দিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে মোকাব্বির খান মেগা প্রকল্প ও কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগ করেন। সম্পূরক প্রশ্নে মোকাব্বির খান বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে আজকের সংকটে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই কেবল দায়ী নয়, আমাদের অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় আছে। আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা, মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাট এবং বিদ্যুৎ খাতে কুইক রেন্টালের ইনডেমনিটি এরকম অনেক কিছুই দায়ী। এর ফলাফল কী হয়েছে? ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সাধারণ মানুষের জীবনজীবিকা আজ ‍দুর্বিষহ। প্রধানমন্ত্রী এই সত্যতা স্বীকার করে ব্যবস্থা নেন বলে তাকে ধন্যবাদ জানাই।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ানো হবে। প্রয়োজনে মাসে মাসে সমন্বয় হবে। দাম বাড়াবেন বলেন না, বলেন সমন্বয় করা হবে। এতে সাধারণ মানুষ খুবই আতঙ্কিত। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অঙ্কটা বলেননি। কারণ বুঝতে পেরেছেন বাড়ানোর তুলনায় কমানোটা একেবারেই নগণ্য। এটি বললে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হবে।
পরে তিনি তার প্রশ্নে বলেন, নির্বাচনি বছরে (চলতি বছরে) জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হবে না- এই বিষয়ে আশ্বস্ত করবেন কি না? আর বিগত বছরে ইনডেমনিটির সুযোগ নিয়ে যেসব কুইক রেন্টাল হাজার হজার কোটি টাকা ‍মুনাফা লুটেছে তাদের ওপর ৫০ শতাংশ উইন্ডফিল্ড ট্যাক্স আরোপ করা হবে কি না?
মোকাব্বির খানকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে হচ্ছে আমাদের সংসদ সদস্য বিরোধী দলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যেসব অভিযোগ তিনি এনেছেন তা সম্পূর্ণ অমূলক। তিনি মেগা প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছেন। এই মেগা প্রকল্পের সুবিধাভোগী কারা? এদেশের সাধারণ মানুষ। এই মেগা প্রকল্প অন্য কোনও সরকার করতে পারেনি, আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করেছি। মেট্রো রেল- এটাও সাধারণ মানুষের যোগাযোগের জন্য। মেট্রো রেলে চলে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অল্প সময়ে আসতে পারছে স্বল্প খরচে। এটা সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। মাননীয় সংসদ সদস্য অনেক অর্থশালী- সম্পদশালী। গাড়িতে চড়েন। উনার এসব সমস্যা জানার কথা নয়।
এ সময় তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, মাননীয় স্পিকার আপনার মাধ্যমে মাননীয় সম্পূরক প্রশ্নকর্তাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, কোথায়, কত দুর্নীতি হয়েছে। সেই কথাটা তাকে এখানে স্পষ্ট বলতে হবে। যার জবাব আমি দেবো।
প্রধানমন্ত্রী এ সময়ে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ওয়ার্ড ব্যাংক তো পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। সেখানে কি কোনও দুর্নীতি হয়েছিল? দুর্নীতি হয়নি। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। এটা শুধু আমার কথা নয়, কানাডার ফেডারেল কোর্টের মামলার রায়েই বলা হয়েছে- সব অভিযোগ মিথ্যা। কোনও অভিযোগ সত্য নয়, সব ভুয়া। সেক্ষেত্রে কীভাবে বললেন দুর্নীতি হচ্ছে বাংলাদেশে। দুর্নীতি যদি সত্য হতো তাহলে এত অল্প সময়ে এসব প্রজেক্টের কাজ কি শেষ হতো? কোনোদিন হয়েছে?
মোকাব্বির খানকে উদ্দেশ করে সংসদ নেতা আরও বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। ওনার একটা সেকেন্ড হোমও আছে। সেই সেকেন্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম কত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে? সেখানে বিদ্যুতের দাম দেড়শ পার্সেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ভোগ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয়। নির্দেশনা নিয়ে তা মনিটরিং করা হয়। নিয়মের ব্যত্যয় হলে জরিমানা কর করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও সেই অবস্থা হয়নি।
সরকার দ্রুত ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কুইক রেন্টাল এনেছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, কুইক রেন্টালের কথা বলা হচ্ছে। এই কুইক রেন্টালের প্রয়োজন ছিল। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এনেছিলাম বলেই আমরা মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছিলাম। এখন আমরা প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। কুইক রেন্টালে যদি দুর্নীতি হতো তাহলে তো এত বিদ্যুৎ দিতে পারার কথা ছিল না। বিএনপির আমলে বিদ্যুতে দুর্নীতি হয়েছিল বলেই বিশ্বব্যাংক টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে দুর্নীতি করেছিল বলেই সেই টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের আমলে সেটা হয়নি। যেখানে বড় বড় মহারথিরা আমাদের দুর্নীতির খোঁজ পায়নি। সেখানে কিছু লোক ভাঙা রেকর্ডের মতো বলেই যাচ্ছেন- কুইক রেন্টাল, কুইক রেন্টাল।
তিনি বলেন, সব বিদ্যুত বন্ধ করে দেওয়া হতো এখন! আওয়ামী লীগ সরকার এসে যতগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছে সেই সবগুলো যদি বন্ধ করে দিই? কী অবস্থা হবে আপনাদের? বলেন? কয়েকদিন মাত্র লোডশেডিং দিয়েছিলাম। তাই চারিদিকে হাহাকার। সেই লোডশেডিং যাতে না হয় সেজন্য কুইক রেন্টাল আবার চালু রাখতে হয়েছে। নিজেরা ভোগ করবেন, আর বলার সময়ে অভিযোগ করবেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। কাজেই যারা এর পরে বেশি বলবেন তাদের বিদ্যুৎ চাওয়াটা বন্ধ করে দেবো। তখন দেখি কী হয়?
সরকারি দলের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু তার সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, বিভিন্ন দেশে দেখা যায় ধর্মীয় উৎসবে জিনিসপত্রের দাম কমানো হয় কিন্তু আমাদের এখানে বাড়ে। অসৎ ব্যবসায়ীদের অসৎ কর্মকাণ্ড এবং বেশি লাভ করার মানসিক রোগ থেকে মুক্তির জন্য ব্যক্তি মালিকানার পাশাপাশি সমবায়ী মালিকানা বিষয়টি সংবিধানে সন্নিবেশ করবেন কিনা না?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি ও সমবায়ভিত্তিক এই তিন ধরনের অর্থনীতি আছে। কাজেই সমবায়ভিত্তিক কিন্তু আছে। তবে আমরা ভোগ্যপণ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছি বিশ্বব্যাপী দারুন খাদ্যভাব দেখা দেবে। তার কিছু আভাসও আমরা পাচ্ছি। সে কারণেই আমি শুরু থেকেই সবাইকে আহ্বান করছি- প্রত্যেকে যার এক ইঞ্চি জমি থাকলেও চাষ করুন। যত অনাবাদী জমি আছে তা আবাদ করা হোক। ফসল, ফলমূল, তরি-তরকারি যে যা পারেন উৎপাদন করেন। গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতর বা কোয়েল যে যা পারেন লালন-পালন করেন। আমাদের খাদ্য চাহিদা যেন নিজেদের আওতায় রাখতে পারি। সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি। এই আহ্বানের পর সারা দেশে একট উৎসাহ দেখা দিচ্ছে। সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও দেশের মানুষ কিছু কিছু উৎপাদন শুরু করেছে।