Home আন্তর্জাতিক জাপানে জনসংখ্যা বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ

জাপানে জনসংখ্যা বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ

32
0
SHARE

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, অভিবাসনে কড়াকড়ি এবং পরিবার ছোট রাখার প্রবণতা ইত্যাদি কারণে বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে। এ সবের ফলে পূর্বানুমানের চেয়ে দ্রুত হারে কমছে জাপানের জন্মহার।
এসব কিছুকে পেছনে ফেলেই বিশ্বব্যাপী জাপানের সুখ্যাতি অনেক, রেকর্ডের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। জন্মহার কমার দিক থেকে এরই মধ্যে নতুন একটি রেকর্ড যুক্ত করে ‘প্রবীণদের দেশে’ পরিণত হয়েছে জাপান।
জাপানের সরকারি হিসাব বলছে, দেশটির জনসংখ্যা ৪ বছর ধরেই কমছে। জাপানের জনসংখ্যা এখন ২০০০ সালের চেয়েও কমে গেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত জাপানের ওই সরকারি হিসাব বলছে, দেশটির জনসংখ্যা প্রায় শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ বা ২ লাখ ১৫ হাজার কমেছে। ২০২২ সালের ১ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী, জাপানের জনসংখ্যা ১২ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার। অবশ্য, এর মধ্যে জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাসরত বিদেশিরাও অন্তর্ভুক্ত।
সর্বশেষ এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটিতে এখন ১৪ বা তার চেয়ে কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের তুলনায় ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নারী-পুরুষের সংখ্যা বেশি। জাপানে ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নাগরিকের মোট সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ।
দেশটির জনসংখ্যার বড় একটি অংশই এখন প্রবীণ। এ অবস্থায় জনসংখ্যা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটির সরকার।
জনসংখ্যা বাড়াতে দেশটির সরকার আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে। প্রতিটি শিশু জন্মের পর তার অভিভাবককে ৪ লাখ ২০ হাজার ইয়েন দেওয়া হচ্ছে সরকারের তহবিল থেকে। অবশ্য, তাতেও কোনো লাভ হয়নি। ইতোমধ্যে এই প্রণোদনার পরিমাণ ৫ লাখ করার পরিকল্পনা করেছে দেশটি।
জাপানের স্বাস্থ্য ও শ্রমকল্যাণ মন্ত্রী কাৎসোনোবু কাতো গত সপ্তাহে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার কাছে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করলে কিশিদা তাতে সম্মতি দিয়েছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতেও কাজ হবে না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং চাকচিক্যময় জীবনধারণের জন্য যুব সমাজের বেশিরভাগই এখন জাপানের রাজধানী টোকিওর দিকে ছুটছেন। মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন শেষ করেই টোকিওতে এসে তারা পছন্দের জীবন বেছে নিচ্ছেন। ফলে, যুব সমাজ ভবিষ্যৎ পারিবারিক জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখা অনেকটাই ভুলতে বসেছে; বরং তারা ক্যারিয়ার গড়তেই বেশি মনোযোগী।
অনেকে বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন শুরু করলেও টোকিওর ব্যয়বহুল আবাসন, ব্যয়বহুল ডে কেয়ার সেন্টার, সেগুলো সন্ধ্যা ৬টায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওভারটাইম করতে না পারাসহ নানা কারণে সন্তান নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
সার্বিকভাবে বিষয়গুলো নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন জাপান সরকার। নাগরিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে সরকার এ বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতাও দিতে পারছে না।
সন্তান নিতে প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি সরকার টোকিও থেকে চাপ কমাতেও বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রণোদনা ঘোষণা দিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গত বছরের শেষে টোকিও মহানগর এলাকা ছেড়ে যাওয়া পরিবারকে তাদের শিশু প্রতি ১০ লাখ ইয়েন পর্যন্ত দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হতে যাচ্ছে।
সর্বশেষ প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জাপানে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ে সবচেয়ে কম জন্ম হয়েছে। রয়টার্সের মতে, গত বছর দেশটিতে ৮ লাখ ১১ হাজার ৬০৪ শিশুর জন্ম হয়েছে। এর বিপরীতে দেশটিতে ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৯ জন মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। যার ফলে দেশটির জনসংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে- যা দেশটির সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক জনসংখ্যা হ্রাস।