নির্বাচন কমিশন (ইসি) হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে এই তালিকার তথ্য তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তালিকা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছয় কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ১০৩ জন এবং নারী ছয় কোটি তিন লাখ ৫২ হাজার ৪১৫ জন।
এ হিসাবে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার ২৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৮ জন কম।
২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো তৈরি হওয়া ছবিসহ ভোটার তালিকায় পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি ছিল। সেবার মোট ভোটার ছিল আট কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৮ জন। এর মধ্যে নারী ছিল চার কোটি ১২ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৯ জন এবং পুরুষ ছিল তিন কোটি ৯৮ লাখ ২২ হাজার ৫৪৯ জন।
পরে ক্রমেই কমতে থাকে নারী ভোটার। এবার হালনাগাদের আগে পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটার ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৬ জন কম ছিল। অথচ বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা ১৬ লাখেরও বেশি।
এ ছাড়া এবারের খসড়া তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া ভোটার মোট ৯৯৪ জন।
হালনাগাদের আগে ছিল ৯৩২ জন।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, হালনাগাদের আগে দেশে মোট ভোটার ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। নতুন করে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন। ভোটার বৃদ্ধির হার ১.৫০ শতাংশ।
তিনি বলেন, দাবি, আপত্তি, নিষ্পত্তি শেষে আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এই সময়ের মধ্যে কারো কোনো দাবি বা আপত্তি থাকলে তা জানাতে পারবেন। দাবি আপত্তি জানানোর শেষ সময় ১৭ জানুয়ারি। এরপর আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হতে পারে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে সম্পূর্ণ ভোটার তালিকা যাচাই করা হবে জানিয়ে মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘পুরো ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ বছর যেটা হালনাগাদ হচ্ছে, সেটা যদি কেউ দেখতে চায় সেটাও হবে এবং আগেরটারও হবে।’
ডিসেম্বরের শেষে যদি সংসদ নির্বাচন হয়, তাহলে আপনারা যাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার করবেন তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কি না এবং আইন সংশোধন করে তাঁদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কি না—এমন প্রশ্নে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের আশা করছেন। আমরা এ জন্য সব সময় প্রস্তুত। ভোটার তালিকা প্রণয়ন করাও এক ধরনের প্রস্তুতি। আমাদের এ ভোটার তালিকাকে সন্নিবেশ করতে আইনি কোনো জটিলতা নেই। তফসিল ঘোষণার আগে একটা তালিকা প্রকাশ করা হবে, সেই তালিকায় আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ও বাদ পড়া ভোটার যাঁদের পাওয়া যাবে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করব।’
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম কত দিন চলবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ভালোভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে ৩০ জুনের মধ্যে এটা সম্পূর্ণ করতে পারব।’
আইন অনুযায়ী কোনো বছরের ভোটার হালনাগাদের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে পরের বছরের ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয় ২ মার্চ। সে হিসেবে চলতি বছরের ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষে আগামী বছরের ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানান ইসি সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘যদি এর আগে জাতীয় নির্বাচন হয়, প্রয়োজন হলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৭ করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কী ভাবছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৭ বছর বয়সে ভোটার নিয়ে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক কোনো মতৈক্য হয়, কোনো সিদ্ধান্ত আসে, যদি সংবিধানে পরিবর্তন আসে, আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
বলা হচ্ছে, বিদ্যমান ভোটার তালিকা সঠিক নয়। আজ যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করলেন তা সঠিক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকা সঠিক নয় বলে সাধারণ মানুষের মাঝেও এ ধরনের একটা পার্সেপশন আছে। আমাদের বাড়ি বাড়ি যাচাই করতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো এটি। আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, ভোটার তালিকা যে বিতর্কিত বলছি, শুদ্ধতার অভাব বলছি, এটা মূলত তিনটি কারণে হচ্ছে। প্রথমত, মৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়া; দ্বিতীয়ত, দ্বৈত ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা; আর তৃতীয়ত, বিদেশি নাগরিক প্রতারণার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়েছে কি না এটি নিশ্চিত করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের মাঠ পর্যায় থেকে অনেক সময় তথ্য পাই, যখন আমাদের তথ্য সংগ্রহকারী বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ করতে যান, তখন সেখানে স্থানীয় কোনো ব্যক্তি আমাদের সহায়তা করেন না। দেখা যায় নিজের লোকদের বয়স বাড়িয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন। আবার দেখা যায়, অন্য কারো ১৮-১৯ বছর হলেও ভোটার তালিকাভুক্ত হতে দেয় না। এর বাইরেও আরো অনেক ধরনের কারণ আছে। এরই মধ্যে আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার দুটি বিভাগ পরিদর্শন করেছেন। আমরা কমিশনাররাও পরিদর্শনে বের হবো। আমাদের ডিজি এনআইডিসহ ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি, ভোটার তালিকার বিষয়টা নিয়ে একটা সন্তুষ্টির জায়গায় পৌঁছাতে পারব।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে ওভারলেপিং হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তা মনে করছি না। কারণ সংস্কার কমিশন যেই প্রস্তাব দেন না কেন, একটা ভোটার তালিকা তো লাগবে। ভোটার তালিকা ছাড়া তো আর ভোট হবে না। আমরা মনে করি না যে ভোটার তালিকা নিয়ে আমরা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হবো।’