বেশ কিছুদিন ঝিমিয়ে থাকার পর সক্রিয় হয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। মামলার আসামি ও অপরাধী গ্রেপ্তার বাড়িয়েছেন তাঁরা। গত সাড়ে চার মাসে কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা বেড়েছে আট হাজার ৪২৮ জন। সব মিলিয়ে দেশের ৬৮টি কারাগারে গত ২ জানুয়ারি বন্দি ছিল ৬৪ হাজার ৮৫৫ জন।
এর মধ্যে পুরুষ ৬২ হাজার ৩২৫ এবং নারী রয়েছেন দুই হাজার ৫৩০ জন।
গত বছর জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণগ্রেপ্তার শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৯ হাজার ৪৮। এরপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।
এরপর রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে আগে থেকে বন্দি থাকা বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরাও মুক্তি পান। বিপুলসংখ্যক মানুষ কারামুক্ত হওয়ায় গত বছর ২০ আগস্ট দেশের সব কারাগারে বন্দির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬ হাজার ৪২৭ জনে। অভ্যুত্থানের পরের ১৫ দিনে কারাগার থেকে বন্দি কমে ২২ হাজার ৬২১ জন।
মুক্তি পাওয়া ছাড়াও এর মধ্যে কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দিরাও রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকার পর গত বছর নভেম্বর মাস থেকে আবারও সক্রিয় হয় তারা। তাই কারাগারে বন্দির সংখ্যা বাড়তে থাকে। গত সাড়ে চার মাসে কারাগারে বন্দির সংখ্যা বেড়েছে আট হাজার ৪২৮ জন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স জাহাঙ্গীর কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে গণগ্রেপ্তারের কারণে বন্দির সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
৫ আগস্টের পর গণগ্রেপ্তার হওয়ারা জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বন্দি কমে যায়। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অপরাধী গ্রেপ্তারে সক্রিয় হওয়ার পর আবারও বন্দির সংখ্যা বাড়ছে।’
আরেক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে যে বন্দিরা রয়েছে তাদের বেশির ভাগই মাদক মামলার আসামি। ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছিলেন, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দির ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪০ হাজার ৯৩৭ এবং নারী এক হাজার ৯২৯ জন।
কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক যেসব মামলা হয়েছিল তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার এবং বন্দিদের জামিনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের জামিন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সরকারের এই উদ্যোগগুলোর কারণে জামিনের আদেশ পাওয়া সাপেক্ষে বন্দিরা কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে ও পরে বেশ কয়েকটি কারাগারে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। অন্তত আটটি কারাগার ভেঙে দুই হাজার ২০০ বন্দি পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে ৭০ জন জঙ্গি ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। পরে বন্দিদের অনেকেই ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে, একটি বড় অংশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনো পাঁচ শর মতো বন্দি পলাতক।