জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের পরিবার শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদের পরিবার রংপুরে একটি মামলা করেছে। আমরা আগেও বলেছি লোকাল কোর্টে (স্থানীয় আদালতে) যতই মামলা হোক, যেহেতু এটা ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটি (মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ) তাই এ অভিযোগ যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসে তাহলে সেটা প্রপার আবেদন হবে।
’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আবু সাঈদের পরিবার নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রাইব্যুনালে এসেছে। তারা সেই ঘটনাগুলোর বর্ণনা দিয়ে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের কে কে এসেছেন জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ দিতে আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান এবং তার সঙ্গে ঘটনার সময় যেসব সহযোদ্ধা ছিলেন তারা এসেছেন।
তারা ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।’
দুই পুলিশকে হাজিরের নির্দেশ
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীর ইমাম হোসেন তাইম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) তানজিল আহমেদ এবং গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে হৃদয় হত্যা মামলার আসামি পুলিশ কনস্টেবল আকরামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুালে করা অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখাতে তাদের আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেছিলাম। শুনানি শেষে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আগামী ২০ জানুয়ারি তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
’
ভয়েস রেকর্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা নিরূপণের নির্দেশ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যায় সন্দেহভাজন জড়িত যাদের ভয়েস রেকর্ড বা অডিও প্রসিকিউশনের কাছে আছে, সেসব অডিওর বিশ্বাসযোগ্যতা নিরূপণ করতে অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য যাদের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে, সেসব অডিও রেকর্ডের অথেন্টিসিটি (বিশ্বাসযোগ্যতা) প্রমাণ করার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলাম। ট্রাইব্যুনাল আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যে সংস্থা আছে তাদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন।
’
এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অনলাইন ফোরাম থেকে অনেক রকম ভয়েস রেকর্ড পাচ্ছি। ভয়েস রেকর্ডগুলোর সূত্র, জিও লোকেশন এবং কনটেন্ট, টোন ঠিক কিনা বা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভয়েস কি না, তা নিরূপণের জন্য কোর্টে নির্দেশনা চেয়েছি। সিআইডির যে বিশেষায়িত ফরেনসিক ল্যাব আছে, সেই ফরেনসিক ল্যাবের তথ্য-উপাত্ত যাতে এখানে (ট্রাইব্যুনালে) পাঠানো হয়।
এক প্রশ্নে এই প্রসিকিউটর বলেন, ‘অনেকগুলো অডিও রেকর্ড আমরা জব্দ করেছি। সেই বিষয়ে কাজ চলছে। শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রীরই না, অনেকেরই ভয়েস রেকর্ড আছে। বেশ কিছু সমর্থিত এবং অসমর্থিত এবং অপ্রকাশিত।’
সংবাদ মাধ্যমে দুই প্রসিকিউটর এমন বক্তব্য দেওয়ার কিছুক্ষণ পর প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান ‘আইসিটি ল রিপোর্টস’ নামের হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপে লেখেন, ‘জুলাই-আগস্টে গণহত্যা : প্রসিকিউশনের হাতে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কলরেকর্ড সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফটি ভুলবশত করা হয়েছে। এই বিষয়ে আপাতত কোনো সংবাদ প্রচার না করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি। সব সাংবাদিক বন্ধুদের অতিসত্বর চিফ প্রসিকিউটরের রুমে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।’
এরপর প্রসিকিউশনে চিফ প্রসিকিউটরের রুমে গেলে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা হিউজ পরিমাণ ডিজিটাল অ্যাভিডেন্স কালেকশন করেছি। ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও। বিভিন্ন জায়গার কলরেকর্ড মেসেজ বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে, সংবাদমাধ্যম থেকে পেয়েছি। সেগুলো থেকে ডিজিটালি ফরেনসিক করে রিপোর্টের জন্য সিআইডিকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য একটি আবেদন করা হয়। আমাদের প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে তারা সার্টিফিকেশন দেবে।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘সেক্ষেত্রে উনারা (প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ ও প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা) কোনো বিশেষ ব্যক্তির নাম বলে থাকেন, সেটা কোনো বিশেষ ব্যক্তির না। আসলে সমস্ত অ্যাভিডেন্সের ব্যাপারেই পার্ট পার্ট করে ফরেনসিক টেস্ট করার জন্য তাদের (সিআিইডির) কাছে পাঠাচ্ছি। এ মর্মে কোর্টের কাছ থেকে আদেশ নিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের কোনো সংস্থার ব্যাপারে সহযোগিতা বা অসহযোগিতার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আমরা দিচ্ছি না। কারণ এটা একটা চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তথ্য সংগ্রহ চলছে। কাউকে এই মুহূর্তে দায়ী করার মতো অবস্থায় এখনো আমরা যায়নি। যদি কোনো সংস্থা সহযোগিতা না করে, আইনগত পদ্ধতিতে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয় আছে। সুতরাং এ ব্যাপারে কোনো ভুল-বোঝাবুঝি যাতে না হয়, সেটা আপনাদের সামনে ক্লিয়ার করছি।’