যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে নতুন করে শুরু হয়েছে দাবানল। তীব্র বাতাসের কারণে দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে অন্তত ২১ বর্গকিলোমিটার এলাকার গাছপালা ও ঝোপঝাড় পুড়ে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তরে গতকাল বৃস্পতিবার নতুন দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর এর গতি কমিয়ে দিয়েছে দমকলকর্মীরা।
এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম আগুনে বিধ্বস্ত অঞ্চলের জন্য ২.৫ বিলিয়ন ডলারের ত্রাণ প্যাকেজে স্বাক্ষর করেছেন। নতুন দাবানলটি দ্রুত গ্রাস করে শহরটির উত্তরাঞ্চলকে। আগুনের ভয়াবহতায় জারি করা হয় রেড-ফ্ল্যাগ সতর্কতা। সেইসঙ্গে অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
লস অ্যাঞ্জেলস থেকে প্রায় ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) উত্তরে হিউজ ফায়ার নামে পরিচিত এই আগুন অঞ্চলটির দমকল বাহিনীর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জ্বলছে এলাকাটি।
হিউজ অগ্নিকাণ্ড দ্রুত প্রায় ১০ হাজার ১৭৬ একর (৪১ বর্গকিলোমিটার) পুড়িয়ে ফেলে। কিন্তু এরপর সারা দিন ধরে আগুন কিছুটা স্থিতিশীল ছিল।
৪ হাজার দমকলকর্মী পানি, আগুন প্রতিরোধক, নানা সরঞ্জাম এবং পাইপ ব্যবহার করে আগুন আরো ছড়িয়ে পরা রোধ করতে সক্ষম হয়।
ক্যালিফোর্নিয়া বন ও অগ্নি সুরক্ষা বিভাগ (ক্যাল ফায়ার) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রণ, আগের দিনের ১৪ শতাংশ আগুন থেকে ২৪ শতাংশ বেড়েছে তবে, তা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
হিউজ অগ্নিকাণ্ডের ফলে সান্তা ক্লারিটার কাছে ক্যাস্টেইক লেক এলাকায় পাহাড়ি এলাকায় ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় ৩১ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আরো ১৬ হাজার লোককে সরিয়ে নেওয়ার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দমকলকর্মীরা তীব্র বাতাস এবং কম আর্দ্রতার সঙ্গে লড়াই করেছেন। আজ শুক্রবারও এটা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।
আগামীকাল শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি তুষারপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে তবে অন্যান্য ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সতর্ক করে বলেছেন, বৃষ্টির ফলে কাদা-মাটির ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। শহরটি থেকে ধ্বংসস্তূপ সরানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে মেট্রোপলিটন এলাকায় ইটন এবং প্যালিসেডসের আগুন টানা ১৭তম দিনের মতো জ্বলছে। পুরো এলাকা পুড়ে গেছে। ২৮ জন নিহত এবং প্রায় ১৬ হাজার কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ক্যাল ফায়ার জানিয়েছে, ইটনের আগুন ৯৫শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং প্যালিসেডসের আগুন ৭২শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
সেপুলভেদার আগুনও এ অঞ্চলে হুমকির সৃষ্টি করেছে, যা বৃহস্পতিবার ভোরে শুরু হয়েছিল। আগুন ৪৫ একর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও এই দাবানলের কারণে মহাসড়কের কিছু অংশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং কিছু লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়।
চলমান কার্যক্রম, দুর্যোগ পুনরুদ্ধার, ধ্বংসাবশেষ অপসারণ এবং অন্যান্য কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় সাহায্য প্রদান করা হবে। বেসরকারি পূর্বাভাসকারী অ্যাকুওয়েদার অনুমান অনুযায়ী, দুর্যোগের জন্য আরো বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল সাহায্যের প্রয়োজন হবে। যার জন্য ২৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে।
বুধবার ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ক্যালিফোর্নিয়া তার পানি ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন না করলে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে। হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি তারা পানি প্রবাহ ঠিক না করা পর্যন্ত আমাদের ক্যালিফোর্নিয়াকে কিছু দেওয়া উচিত না।’
সূত্র : রয়টার্স