Home আন্তর্জাতিক ভারতের কুম্ভমেলায় পদদলিত হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু

ভারতের কুম্ভমেলায় পদদলিত হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু

SHARE

উত্তর ভারতের হিন্দু উৎসব কুম্ভমেলায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশে পদদলিত হয়ে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ১টার দিকে প্রয়াগরাজ জেলায় এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেলায় আগত লাখ লাখ পুণ্যার্থী জনতা গঙ্গাস্নানের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই গঙ্গা নদীর তীরে জড়ো হচ্ছেন। বুধবার সূর্য ওঠার আগেই স্নান শেষের বাধ্যবাধকতা থাকায় ব্যাপক ভিড় ছিল গঙ্গার তীরে।

উৎসবের বিশেষ নির্বাহী কর্মকর্তা আকাঙ্ক্ষা রানার মতে, প্রয়াগরাজ শহরে মহাকুম্ভ মেলায় একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথমদিকে ভক্তরা নদীর তীরে স্নানের জন্য ছুটে গেলে ভিড়ের মধ্যে পড়ে তীর্থযাত্রীরা পদদলিত হন। এ ছাড়া এ ঘটনায় আরো ৬০ জন আহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

হতাহতদের সংখ্যা প্রকাশ পেতে গতকাল দিনের বেশির ভাগ সময় লেগেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। অনেক তীর্থযাত্রী এখনো আত্মীয় ও বন্ধুদের খুঁজছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, আহত ৯০ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ জানিয়েছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, সেই ভক্তদের মধ্যে ৩০ জন মারা গেছে।
’ তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে ২৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী আয়েশা মিশ্র বিবিসিকে বলেন, ‘মানুষ সব দিকেই ছুটছিল। তারা চারপাশে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছিল। শিশুরা ভিড়ের কাছে পদপিষ্ট হচ্ছিল।’ ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি ভিডিও এবং ছবিতে দেখা গেছে, মাটিতে মানুষের ক্ষতবিক্ষত শরীর পড়ে আছে এবং তাদের মুখ কাদায় ঢাকা।
কিছু মানুষকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

প্রথম কয়েক ঘণ্টা ধরে মারা যাওয়া বা আহতদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। অনেকে প্রধান হাসপাতাল ঘেরাও করে এবং সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়।

উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, মানুষ গুরুতর আঘাত পেয়েছে কিন্তু মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেননি। প্রধানমন্ত্রী মোদিও সেখানে প্রাণহানির ঘটনা স্বীকার করলেও কতজন তা বলেননি।

তিনি বলেন, ‘আমি সব আহতের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’ তিনি এক্সের একটি পোস্টে ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
দুর্ঘটনার পরেও বিশাল জনসমাগম হচ্ছে সেখানে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে এ ঘটনার পরেও ৫০ মিলিয়নেরও বেশি লোক স্নান করেছে। গত বছরও উত্তর প্রদেশের হাতরাস জেলায় একটি ধর্মীয় সমাবেশের সময় ১২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

কর্মকর্তারা বলছেন, কুম্ভমেলার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু ভারতের বিরোধী নেতারা এ ঘটনা নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেছেন।

সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে একটি পোস্টে ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘অব্যবস্থাপনা এবং সাধারণ ভক্তদের পরিবর্তে ভিআইপি মুভমেন্টের ওপর প্রশাসনের বিশেষ মনোযোগ এই দুঃখজনক ঘটনার জন্য দায়ী।’

কিছু তীর্থযাত্রীও এই বিপর্যয়ের জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। আয়েশা মিশ্র নামের একজন প্রশ্ন তোলেন, ‘যেখানে এ ঘটনা ঘটেছে সেখানে কেন পুলিশের উপস্থিতি ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘তারা উৎসবের স্থানের শেষের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যখন আমাদের মধ্যে অনেকেই মাঝখানে পদপিষ্ট হন। আমরা এভাবে পবিত্র ডুব দিতে চাই না। সরকারের উচিত এই মুহূর্তে লোকদের বাড়িতে থাকতে বলা।’

সূত্র : বিবিসি