Home আইন আদালত অবৈধ অস্ত্র : ফের শুরু হচ্ছে যৌথ বাহিনীর কঠোর অভিযান

অবৈধ অস্ত্র : ফের শুরু হচ্ছে যৌথ বাহিনীর কঠোর অভিযান

SHARE

অবৈধ অস্ত্রধারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনী শিগগিরই দেশজুড়ে আবারও সাঁড়াশি অভিযানে নামছে বলে জানা গেছে। অস্ত্র উদ্ধারে এবারের অভিযান হবে কঠোর। তথ্য সংগ্রহে সারা দেশে কাজ শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
দেশকে অস্থিতিশীল করতে কারা অস্ত্র সংগ্রহ করছে তাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করতে পাশের দেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জঙ্গি, সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশে গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়।
তবে কিছুদিন পর ওই অভিযান কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় নতুন করে আবারও গতি পাচ্ছে যৌথ বাহিনীর অভিযান।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, দেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
যাদের কাছেই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্র জানায়, আগে থেকেই সন্ত্রাসীদের হাতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের সময় থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র। আবার যাঁরা বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে অস্ত্র নিয়েছিলেন তাঁদের সহস্রাধিক অস্ত্রও বর্তমানে অবৈধ। ফলে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে দেশে বড় ধরনের কোনো নৈরাজ্যকর ঘটনা ঘটানো হয় কি না, তা নিয়ে সরকারের মধ্যে বাড়তি চিন্তা কাজ করছে।

অন্যদিকে এই ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিরা। এখনো পালিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন জঙ্গি গ্রেপ্তারের বাইরে রয়েছে। এ ছাড়া নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যদের হাতেও অস্ত্র রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী যাঁরা অস্ত্র জমা দেননি তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা রয়েছেন। ওই অস্ত্রগুলো বর্তমানে অবৈধ।

পুলিশ সদর দপ্তর সত্র জানায়, গণ-অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশের থানা, কারাগার থেকে পাঁচ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট হয়েছিল। এর মধ্যে উদ্ধার করা হয় চার হাজার ৩৫৮টি অস্ত্র। বাকি অস্ত্রগুলো উদ্ধারেও কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর।

সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেশে ৫১ হাজার ৭৫৮টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৮৪৫টি অস্ত্রের লাইসেন্স। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেওয়া লাইসেন্স স্থগিত করে অস্ত্র জমা দিতে বলেছিল বর্তমান সরকার। রাজধানীসহ দেশের ৬৪ জেলার থানাগুলোয় এসব অস্ত্রের মধ্যে জমা পড়েছে ৯ হাজার ১৯১টি। জমা পড়েনি এক হাজার ৬৫৪টি অস্ত্র। এই অস্ত্রগুলো বর্তমানে অবৈধ।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা মেজর মো. লুত্ফুল হাদী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে র‌্যাব সব সময় তৎপর। ওপরের নির্দেশনা পেলে সেভাবেই আমরা কাজ করি।’

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যা বললেন :

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থান নেন। তাঁদের দাবি সারা দেশে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাতে হবে। সেখানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত হয়ে তাঁদের আশ্বাস দেওয়ার পর তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

ওই সময় আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রসহ অবৈধ সব অস্ত্র উদ্ধারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে সরকার এবং এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান সাফল্য দেখা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে যাঁদের রাজনৈতিকভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল তাঁদের অনেকে অস্ত্র জমা দেননি। তবে লাইসেন্সকৃত বেশির ভাগ অস্ত্রই পুলিশ জব্দ করেছে। কিন্তু লুট হওয়া অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, যেগুলো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে।’