Home বিনোদন ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির অভিযোগে ১২ জন গ্রেপ্তার

ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির অভিযোগে ১২ জন গ্রেপ্তার

SHARE

রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত দুই দিনে (শনিবার থেকে রবিবার) পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০০ লিটার সয়াবিন তেল, পরিত্যক্ত দুটি ট্রাক ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।

আজ সোমবার মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংখ্যা বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মো. মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, মো. রাসেল, মো. জাহিদ, মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদ, মো. ইসমাইল হোসেন, মো. হিরা শেখ, মো. রফিক, মো. বাধন, চাঁন মিয়া, বেল্লাল চাকলাদার ও মো. আসলাম খাঁন।

ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা যায়, আব্দুল কাদের পেশায় একজন ট্রাক ব্যবসায়ী। তার মালিকানাধীন চারটি ট্রাক রয়েছে। গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার ট্রাক চালক মো. নয়ন ও হেলপার জামিরুল ইসলাম পাম অয়েল বোঝাই ৬০টি ড্রাম ট্রাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উদ্দেশে রওনা করে।

পথিমধ্যে গত ৩ জানুয়ারি রাত সারে ৩টার দিকে ধানমন্ডি মডেল থানাধীন মিরপুর রোডের হোটেল আড্ডার সামনে ৭-৮ জনের একটি ডাকাত দল দুটি মাইক্রোবাসে এসে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ট্রাকটি আটকায়। অতঃপর মাইক্রোবাস থেকে দুইজন ব্যক্তি লেজার লাইট ও ওয়াকিটকিসহ সাদা পোশাকে নেমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ট্রাকের কাগজপত্র দেখতে চায়।

পরে তারা জোরপূর্বক পিস্তল ঠেকিয়ে ড্রাইভার হেলপারসহ তেলবাহী ট্রাকটি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। পরে ড্রাইভার ও হেলপারকে জোর পূর্বক চেতনা নাশক ঔষধ সেবন করিয়ে হাত ও চোখ বেঁধে কেরানীগঞ্জের রসুলপুর এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ট্রাক ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বাদী হয়ে গত ৭ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি ডাকাতির মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলার ঘটনার ১৯ দিন পর গত ২২ জানুয়ারি রাত ৩টার দিকে একই কায়দায় ডাকাত দল মোহাম্মদপুর থানাধীন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ গেইটের সামনে থেকে ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেল বোঝাই একটি ট্রাক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এ নিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়।

মামলা তদন্তকালে ধানমন্ডি মডেল থানার একাধিক চৌকস দল গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর মগবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, মো. রাসেল ও জাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৯ ফেব্রুয়ারি ডাকাতির মূল হোতা জাকির প্রকাশ তৌহিদকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ আরশি নগর থেকে, ইসমাইল হোসেন, হিরা শেখ, রফিককে ঢাকা কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে, বাধনকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ পানগাঁও থেকে, চাঁন মিয়াকে মহাখালী এলাকা থেকে, বেল্লাল চাকলাদারকে ঢাকার শনির আখড়া থেকে এবং মো. আসলাম খাঁনকে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরবর্তীতে গ্রেপ্তার আসলাম খাঁন-এর স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে তার মুন্সিগঞ্জের বিসিক এলাকার গোডাউন থেকে ১০ টি তেল ভর্তি ড্রাম যার ওজন ১৮৫০ কেজি ও বাজার মূল্য আনুমানিক দুই লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা এবং ৩৬ টি খালি তেলের ড্রাম উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।

এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা নোহা গাড়ি, একাধিক বাটন ফোন ও একটি লুন্ঠিত ট্রাক উদ্ধার করা হয়।

থানা সূত্রে আরো জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডাকাতদলের মূল হোতা মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদ এর বিরুদ্ধে ১০টি, মো. জাহিদ-এর বিরুদ্ধে আটটি, মো. হিরা শেখ ও রফিক এর বিরুদ্ধে ছয়টি করে, মো. মঞ্জুরের বিরুদ্ধে পাঁচটি, মো. চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি ও মো. বেল্লাল চাকলাদারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে।

তারা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে আসছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তাদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। ডাকাতির পূর্বে নিদিষ্ট জায়গায় একত্রিত হয়। তারা ডাকাতির সময় সাধারণত বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। পরবর্তীতে ডাকাতি শেষে মোবাইল ফোন সীমসহ ফেলে দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যায়। ওই ডাকাতির সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারসহ আরো লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গ্রেপ্তারকৃত আসামি বেলাল চাকলাদার মতিঝিল ৯নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সক্রিয় নেতা। তার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি ও উত্তরা পশ্চিম থানায় আরেকটি হত্যা মামলা রয়েছে।