Home এইমাত্র আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ডিসেম্বরে

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ডিসেম্বরে

SHARE

দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তারা মনে করে কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই তারা কিছু পায়। এই আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে নেতাকর্মীদের সচেতন থাকতে হবে। জনগণের আস্থায় যেন ফাটল না ধরে সেজন্য তাদের সজাগ থাকতে হবে। মানুষের পাশে থেকে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে।

পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, কেউ আর ব্যাহত করতে পারবে না। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে উঠবেই।

শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। যথাসময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে গতিশীল রাখার জন্য নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি বলেন, নিয়মিত দলের সম্মেলন হবে। এ জন্য সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২০-২১ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সকল অর্জনের অগ্রবর্তী দল। দেশের সব অর্জনের পেছনে এই দলের অবদান রয়েছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছে। মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করতেই জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করেছেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশকে গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য যে, যখনই এদেশ এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।

পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসক এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন শুরু হয়। যে দল সংগ্রাম করে, ত্যাগ স্বীকার করে, মানুষের কল্যাণ করে এবং যাদের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়, তারা ক্ষমতায় থাকলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। মানুষ কিছু পায়। সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে তারা দেশের উন্নয়ন করে না। দেশের মানুষের নয়, তারা কেবল নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে।

টানা দুই মেয়াদে দেশ ও মানুষের কল্যাণে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র এক দশকেই উন্নয়ন ও অগ্রগতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য সরকার পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করাই সরকারের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যাদের সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক নীতিমালা রয়েছে। শুধু সরকারে থাকতে নয়, বিরোধী দলে থাকতেও অর্থনৈতিক নীতিমালা তৈরি করেছি, যাতে ছিল আগামীতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কী কী করব, দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব। ক্ষমতায় এসে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই দেশকে আমরা উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এই নীতি নিয়েই দেশ পরিচালনা করছে। সব দেশের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। বিদেশি বিনিয়োগে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় দেশ। সারাবিশ্বের মানুষ এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা প্রশ্ন করে, এত অল্প সময়ের মধ্যে এ দেশ এত উন্নয়ন করল কীভাবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। সেটাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হবে। সেই সময়ের আগেই দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে তার আগেই এটা সম্ভব হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলীয় সভাপতি বলেন, দেশের প্রতি আওয়ামী লীগের দায়িত্ব অনেক। আওয়ামী লীগ সেই দায়িত্বে অবহেলা করে না। অন্য যারা উড়ে এসে ক্ষমতায় জুড়ে বসে আর ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সেই ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে চায়- তাদের দেশ ও জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্ব থাকে না। তারা জনগণের সম্পদ লুটেপুটে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে।

প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর তার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এতে অংশ নেন।

জাতীয় সম্মেলন ডিসেম্বরে : কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে মেয়াদ শেষে অক্টোবরে নির্ধারিত সময় এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হলেও এখন তা দু’মাস পেছানো হয়েছে। বৈঠক শেষে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ অন্য সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক-সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং বেশ কিছু সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়।