গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ দন্ড কবে কীভাবে কার্যকর হবে। আইনজ্ঞরা বলছেন, ভয়ঙ্কর এসব জঙ্গির দন্ড কার্যকরে এখনো আরও দুটি বিচারিক ধাপ শেষ করার সঙ্গে কিছু প্রক্রিয়াও অনুসরণ করতে হবে। তারা বলেন, বিচার বিভাগের বর্তমান মামলাজট বিবেচনায় স্বাভাবিক নিয়মে এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে আট থেকে ১০ বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তবে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই এসব জঙ্গির দন্ড কার্যকর সম্ভব হবে। কার্যকরের ক্ষেত্রে হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগে ফাঁসির দন্ড বহাল থাকতে হবে বলেও মন্তব্য তাদের।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায় কার্যকর হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না হাই কোর্ট তা কনফার্ম (অনুমোদন) করে। বিচারিক আদালতের রায় নথিসহ ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাই কোর্টে আসবে। ডেথ রেফারেন্স হিসেবে আসার পর এ মামলার দ্রুত শুনানি শুরুর চেষ্টা করা হবে। ডেথ রেফারেন্সে মৃত্যুদন্ড বহাল থাকলে এরপর আরও কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এ দন্ড কার্যকরে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাই কোর্টে আসার পাশাপাশি আসামিরা হাই কোর্টে জেল আপিল দায়ের করতে পারেন। এ আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে তারা আইন অনুযায়ী ৩০ দিন সময় পাবেন। আর যদি কেউ আপিল না করেন তাহলে তাদের ক্ষেত্রে শুধু ডেথ রেফারেন্সেরই শুনানি হবে। এরপর হাই কোর্টে মামলাটি শুনানির জন্য প্রথমেই মামলার পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথিসংবলিত বই) তৈরি করতে হবে। এটি তৈরি হলে প্রধান বিচারপতি যদি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই ডেথ রেফারেন্স মামলাটি শুনানির উদ্যোগ নেন, সে ক্ষেত্রেও শুনানি শুরু হতে প্রায় এক বছর লেগে যেতে পারে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি না করলে এ সময় আরও বেশি লাগবে।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, হাই কোর্টে শুনানি শেষে দেওয়া রায়ে আসামিদের ফাঁসির আদেশ বহাল থাকলে আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল দায়েরের সুযোগ পাবেন। হাই কোর্টের রায়ের পর তারা আপিল দায়েরের জন্য দুই মাস সময় পাবেন। এরপর মামলাজট আর বিচারব্যবস্থার ধীরগতির কারণে এ আপিলের শুনানি কত তাড়াতাড়ি বা কত দেরিতে হবে তা বলা সম্ভব নয়। আপিলের শুনানি শেষে আপিল বিভাগও আসামিদের ফাঁসি বহাল রাখলে তখন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানানোর সুযোগ পাবেন আসামিরা। এ রিভিউ দায়ের করার ক্ষেত্রে তারা এক মাস সময় পাবেন। এরপর রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে তা খারিজ হওয়ার পর আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের দিনক্ষণ গণনা শুরু হয়ে যায়। আদেশের কপি হাতে পেয়ে জেলকোড অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের ক্ষেত্রে ২১ দিনের আগে নয় এবং ২৮ দিনের পরে নয় বলে যে বিধান রয়েছে তা অনুসরণ করবে জেল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগও নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করলে তারপর আসামিদের ফাঁসি কার্যকর হবে। সুপ্রিম কোর্ট সূত্র বলছেন, হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয় সালের ক্রমানুসারে। বর্তমানে ২০১৪ সালের ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি চলছে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ৭৫০টি ডেথ রেফারেন্স মামলা। এসব মামলায় প্রায় ১ হাজার ৭৫০ জন ফাঁসির আসামি কারাগারের কনডেম সেলে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
আর গড়ে বছরে হাই কোর্টে ৬০-৭০টি ডেথ রেফারেন্স মামলার নিষ্পত্তি হয়। ফলে বিশেষ গুরুত্ব না পেলে হোলি আর্টিজান হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিচারপ্রার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে।