আবারও রাশিয়ার কাছ থেকে আবারও গ্যাস কেনার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তির জন্য সমঝোতার অংশ হিসেবে রাশিয়ার পাইপলাইন গ্যাস কেনা আবারও শুরু করা উচিত কি না কি না তা নিয়ে আলোচনা করেছেন ইউরোপীয় কর্মকর্তারা। আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকটি সূত্র ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছে।
২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ইউক্রেনের মাধ্যমে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ইউক্রেন তার ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে গ্যাস পরিবহনের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য নতুন কোনো আলোচনা করতে রাজি না হওয়ায় এই সরবরাহ বন্ধ করতে বাধ্য হয় রাশিয়া। ফলে অস্ট্রিয়া, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি ইউক্রেনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত এই গ্যাস থেকে বঞ্চিত হয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তি চেয়েছেন। মূলত তার অবস্থানের কারণেই পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে মস্কোর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইইউকে আরও বেশি মার্কিন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার জন্য চাপ দিয়েছেন। কিন্তু এটি রাশিয়ার পাইপলাইনের গ্যাসের তুলনায় অনেক ব্যয়বহুল।
আলোচনার বিষয়ে জানেন এমন তিন ইউরোপীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জার্মানি ও হাঙ্গেরির কিছু কর্মকর্তা এই ধারণাকে সমর্থন করেছেন। পাশাপাশি অন্যান্য কিছু দেশও এতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এসব দেশ এই প্রস্তাবকে ইউরোপের জ্বালানি ব্যয় কমানোর একটি উপায় হিসেবে দেখছে।
তবে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালুর বিষয়ে প্রাথমিক এই আলোচনা ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনের সমর্থক ইইউ দেশগুলো বলছে, এমন সিদ্ধান্ত যুদ্ধ চলাকালে পুতিনকে আরও বেশি শক্তিশালী করবে।
ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস রপ্তানি পুনরায় শুরু হলে মস্কোর রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। যুদ্ধের আগে রাশিয়ার পাইপলাইন গ্যাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট জ্বালানি সরবরাহের প্রায় ৪০ শতাংশ নিশ্চিত করত ও জার্মানি ছিল সর্ববৃহৎ আমদানিকারক।
এদিকে, রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনার বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তি করতে আগ্রহী কিছু মার্কিন এলএনজি রপ্তানিকারকের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, ইউক্রেনীয় ট্রানজিট পুনরায় শুরু হলে তাদের পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।
ইউরোপীয় কমিশনের জ্বালানি বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা দিত্তে ইউল ইয়র্গেনসেন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। সেখানে তিনি এলএনজি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন ও দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাব্য সরবরাহ নিয়ে আলোচনা করবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়ার সব জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বাতিলের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ইইউয়ের জ্বালানি কমিশনার ড্যান ইয়র্গেনসেন আগামী মার্চে এই লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন।
তবে ইউরোপের ভারী শিল্প খাতের সংকট গভীর হওয়ায় সস্তায় জ্বালানি সংগ্রহের প্রয়োজন বেড়েছে। ইউরোপে গ্যাসের দাম সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি। ২০২৪ সালে রাশিয়ার পাইপলাইন গ্যাস মোট সরবরাহের প্রায় ১০ শতাংশ ছিল। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউক্রেনের মাধ্যমে ইইউতে গ্যাস প্রবাহের অনুমতি দেওয়া একটি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে তা অর্ধেক কমে গেছে।
রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহকারী একমাত্র পাইপলাইন এখন তুরস্কের মধ্য দিয়ে চলা ‘তুর্কস্ট্রিম’। এই পাইপলাইন হয়ে হাঙ্গেরিতে বছরে প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন বা ৭০০ কোটি ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা হয়। বুদাপেস্ট ও রাশিয়াপন্থী স্লোভাক সরকার ইউক্রেনকে গ্যাস ট্রানজিট পুনরায় চালু করতে ইইউয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এই বিষয়ে এক শীর্ষ ইইউ কর্মকর্তা বলেন, শেষ পর্যন্ত, সবাই চায় জ্বালানি খরচ কমুক।