জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে আনার পর এবার আজাদ কাশ্মীরের দিকে নজর দিয়েছে ভারত। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এ অঞ্চলটিও নিজেদের দখলে নিতে চায় দেশটি। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কণ্ঠে শোনা গেল সেই সুর।
চলমান কাশ্মীর সংকটের মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, যদি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়, তাহলে এখন আর তা জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে হবে না, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হবে। রোববার হরিয়ানায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক সমাবেশে এ কথা বলেন রাজনাথ। খবর এনডিটিভির।
অক্টোবরেই বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে হরিয়ানায়। এদিন সেখানেই একটি জনসভায় যোগ দেন রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, ‘যদি পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা হয়, তাহলে এখন সেটা হবে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারতের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, আলোচনা শুরুর আগে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়া বন্ধ করতে হবে ইসলামাবাদকে।’ রাজনাথের এ কথার পরই বিজেপির সমর্থকরা দলীয় পতাকা উড়িয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন।
এর একদিন আগেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার প্রথমেই নয়- এই নীতি বজায় রেখেছে ভারত। কয়েক দশক ধরে এই নীতি বজায় রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে এ পরমাণু অস্ত্র নীতি পরিবর্তন করা হতে পারে বলে হুংকার দেন রাজনাথ সিং। জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে দরবার করেছে পাকিস্তান, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বার্তাকে তারই প্রতিক্রিয়া বলে মনে করা হচ্ছে।
রোববার প্রতিরক্ষামন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দরবারে গেছে। তারা বলছে ভারত ভুল করেছে।’
পাকিস্তানের সবসময়ের বন্ধুরাষ্ট্র চীনের পক্ষ থেকে আবেদনের পরই জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। যদিও পাঁচটি স্থায়ী এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্যের সেই বৈঠক কোনো প্রস্তাবনা ছাড়াই শেষ হয়, যা পাকিস্তানের জন্য বড় ধাক্কা। তবে এ পদক্ষেপের জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
বেশির ভাগ দেশই সহমত পোষণ করে যে, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহার করা এবং রাজ্যটিকে ভেঙে দিয়ে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের দ্বিপাক্ষিক বিষয়। সংলাপের মাধ্যমে তার সমাধান করা উচিত। কিন্তু কোনো সংলাপের ধারেকাছেও যায়নি দু’দেশ।
এএনআই রাজনাথ সিংকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘সবাই বলে, ৩৭০ ধারা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ দেশকে বিভক্ত করে ফেলবে। আমাদের বলা হয়েছিল, তারপর আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না বিজেপি। আমি আপনাদের জানাতে চাই, ভোটব্যাংকের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয় বিজেপি। জাতীয় অখণ্ডতার সঙ্গে যুক্ত রাজনীতির ওপর আমরা জোর দিতে চাই।’
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কাশ্মীরের হিন্দু শাসক হরি সিং ভারতের সঙ্গে থাকতে চাইলেন। কিন্তু কাশ্মীরের জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই ছিল মুসলিম। জনগণের বিরাট একটি অংশ চাইছিল পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে। এমনই এক দোলাচলে ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান সমর্থিত পাকিস্তানের পশতুন উপজাতিরা কাশ্মীর আক্রমণ করে। এই সুযোগে ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরে প্রবেশ করে। অপরদিকে কাশ্মীরের পাকিস্তান প্রান্ত দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্য প্রবেশ করে। প্রায় চার বছর যুদ্ধ চলার পর ১৯৫২ সালে জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতি হয়।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুসারে, কাশ্মীর থেকে উভয় দেশের সৈন্য প্রত্যাহার ও গণভোটের আয়োজনের কথা বলা হয়। ভারত গণভোট আয়োজনে অসম্মত হয়। তাদের ধারণা ছিল, মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরে গণভোট দিলে তারা পাকিস্তানের পক্ষেই যোগ দেবে। অন্যদিকে পাকিস্তানও কাশ্মীর থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে রাজি হয় না। ফলে উভয় দেশই তখন থেকে কাশ্মীরে সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে। পরবর্তী সময়ে কাশ্মীর নিয়েই ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালে দু’দেশের মধ্যে আবারও যুদ্ধ হয়।