Home এইমাত্র ঘনিষ্ট বন্ধুই গলা কেটে হত্যা করে ইমাম দিদারুলকে

ঘনিষ্ট বন্ধুই গলা কেটে হত্যা করে ইমাম দিদারুলকে

427
0
SHARE

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু জবাই করে হত্যা করে সোনারগায়ের মসজিদের ইমাম দিদারুল ইসলামকে। হত্যার সাথে জড়িত ইমাম দিদারুলের বন্ধু ওয়াহিদুজ্জামানকে মাদারীপুরের শিবচর থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সে খুলনার নড়াইলের কলাবাড়ীয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (টুকু) শেখের ছেলে।

বুধবার সকালে তাকে সোনারগাঁও নিয়ে এসে হত্যাকান্ডের কিছু আলামত উদ্ধার করে। ইমাম দিদারুলকে হত্যার সময় ঘাতক ওয়াহিদুজ্জামের পরনের রক্তমাখা লুঙ্গি এবং ইমামকে কোমল পানীয় পান করার অচেতন করার কাজে ব্যবহৃত কোক কোলার বোতল উদ্ধার করে। ওয়াহিদুজ্জামান মাদারীপুর শিবচর থানা এলাকায় একটি মসিজদের ইমাম।

ঘাতক ওয়াহিদুজ্জামান পুলিশকে জানায়. ইমাম দিদারুলের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে আর্থিক লেনদেন হয় তার। এর মধ্যে স্বর্ণের বার বেচা-কেনার ব্যবসাও ছিল তাঁদের। স্বর্ণের বারের ব্যবসা নিয়েই দ্বন্ধ শুরু হয় ইমাম ও তার বন্ধু ওয়াহিদুজ্জামনের সাথে। পরে ইমাম দিদারুল ব্যবসা থেকে সরে আসতে এবং বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে দেওয়া টাকা তার বন্ধুর কাছে ফেরত চায়। এতেই তাকে হত্যা করতে পরিকল্পনা সাজায় সে বন্ধু।

পরিকল্পনা মতে, হত্যাকান্ডের আগের দিনও দিদারুলের সঙ্গে দেখা করে তার সঙ্গে চা খেয়ে হত্যার পরিকল্পনা সাজিয়ে যায় ঘাতক বন্ধু। পরে হত্যাকান্ডে দিন এশার নামাজের পর রাতের খাবার প্রস্তুত করার সময় দিদারুলকে কিছু নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হয়। এতেই দিদারুল অচেতন হয়ে পড়েন।

দিদারুল অচেতন হয়ে পড়লে তাকে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে একটি চিরকুট লিখে ফেলে রেখে দরজায় তালা দিয়ে ঘাতক পালিয়ে যায়। এর আগে কুমিল্লায় হত্যাকারী ও দিদারুল একইসঙ্গে পাশাপাশি মসজিদে ইমামতিও করেছেন। কিলিং মিশনে সেই বন্ধু একাই অংশ নেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গত ২২ আগস্ট সোনারগাঁ মল্লিকপাড়া গ্রামের নারায়ণদিয়া বায়তুল জালাল জামে মসজিদের ইমাম দিদারুল ইসলামকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত দিদারুল খুলনার তেরখাদা থানার রাজাপুর এলাকার আফতাব ফরাজির ছেলে। এর আগে গত ২৬ জুলাই তিনি মল্লিকপাড়া গ্রামের ওই মসজিদটিতে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান।

দিদারুলের পারিবারিক সূত্র জানায়, দিদারুল তার এক বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসা করবে বলে বিনিয়োগের জন্য দুটি গবাদীপশু কিছুদিন আগে বিক্রি করে। এছাড়াও সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকার কাছাকাছি সে বিনিয়োগ করবে বলে পরিবারকে জানিয়েছিল।

জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এই টাকা থেকেই তার বন্ধুকে বিনিয়োগের জন্য টাকা দেয় দিদারুল। পরে অবৈধ ব্যবসা করবে জেনে সেখান থেকে সরে আসতে চাওয়ার পাশাপাশি নিজের টাকাও ফেরত চায় দিদারুল। আর এতেই পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করা হয়।

আরেকটি সূত্র জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানা গেছে, হত্যাকান্ডের পর ফরিদপুরের দিকে গাঁ ঢাকা দেয় সে বন্ধু। হত্যকান্ডের পর থেকে নিজের পরিচয়ও একের পর এক গোপন করে সে। পুলিশ তার সঠিক পরিচয় খুঁজে বের করে পরে তাকে গ্রেফতার করে।

ওয়াহিদুজ্জামান গ্রেফতারে মধ্য দিয়ে সোনারগাঁয়ে ইমাম দিদারুল খুনের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ক্লু-লেস এই হত্যাকান্ডের পুরোটাই ছিল সুপরিকল্পিত। ইতিমধ্যে পুলিশসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দিদারুল হত্যার নেপথ্যে ছিল তারই একজন বন্ধু। ওই বন্ধু অর্থ সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই নির্মমভাবে হত্যা করেছে ইমাম বন্ধুকে।

হত্যাকান্ডের পর জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) নির্দেশে ক্লু-লেস (কোনো ক্লু ছাড়াই) এ মামলার তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে আসামিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, ক্লু-লেস এ মামলাটির বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের কারণেই এখন তারা কাউকে কিছু জানাতে চাচ্ছেন না। এদিকে এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বুধবার বিকেল সংবাদ সম্মেলন করবেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ।