Home আন্তর্জাতিক কাশ্মির ইস্যুতে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি ইমরান খানের

কাশ্মির ইস্যুতে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি ইমরান খানের

SHARE

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তিনি চলতি সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘকে এই সতর্কবার্তা দেয়ার চেষ্টা করছেন যে, যদি আশু সমাধান না হয় তা হলে অবরুদ্ধ কাশ্মির উপত্যকা নিয়ে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে রয়েছে বিশ্ব।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে গত ফেব্রুয়ারিতে। ভারত ওই সময় পাকিস্তানে ঢুকে বিগত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে প্রথমবার যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালায়। দিখণ্ডিত ও বিতর্কিত কাশ্মির উপত্যকা নিয়ে এর আগে দু’বার যুদ্ধে জড়িয়েছে বৈরী এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
শান্তি প্রতিষ্ঠার নিদর্শন হিসেবে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আটক ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট অভিনন্দনকে ভারতে ফেরত পাঠালে উত্তেজনা কিছুটা কমে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদি সরকার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে গোটা কাশ্মিরকে অবরুদ্ধ করে রাখায় উত্তেজনা আবার বেড়েছে।

ভারত সরকার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের অন্যতম সামরিকায়িত উপত্যকাটি আরো ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করে। ইমরান খান বলছেন, যা কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী মোদির চিন্তার ফসল। পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ফ্যাসিস্ট বলে অভিহিত করেছেন।
ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটিতে এখনো কারফিউ জারি রয়েছে। কিন্তু ইমরান খান বলছেন, যদি একবার কারফিউ তোলা হয় তা হলে সেখানকার মানুষ তাদের ক্ষোভের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। ইমরান খান বলেন, ‘তারা রাস্তায় নেমে পড়বে। তার পর কী হবে? কারফিউ জারি রাখার কাজে বর্তমানে কাশ্মিরে মোট ৯ লাখ ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রয়েছে। আমি এই ভয়ে ভীত যদি তা হয় তা হলে সেখানে গণহত্যা শুরু হবে এবং পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’

নিজেকে কাশ্মিরিদের দূত (অ্যাম্বাসেডর) বলে ঘোষণা দেয়া পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘে বিশ্বনেতাদের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেই মূলত আমি এখানে এসেছি। আমরা একটা মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে আছি কিন্তু কেউ তা অনুভব করছে না।’
ইমরান বলেন, ‘এখন এই সময়ে দুটো পারমাণবিক শক্তিধর দেশ একে অপরের মুখোমুখি। গত ফেব্রুয়ারিতেও আমাদের (কাশ্মির ইস্যুতে) মুখোমুখি হতে হয়েছিল।’ এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কী হতে পারে তিনি তা ভাবতে বলেছেনে বিশ্বনেতাদের।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারিতে আমার দেশের সেনাপ্রধান ও বিমানবাহিনীর প্রধান আমাকে বলেন যে, ‘ভারতীয় বিমানবাহিনী আমাদের দেশে ঢুকে বোমা হামলা করেছে। আমরা এখন কী করবো?’ তারা আমাকে বলেন, ‘আমরা নাকি আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন।’
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষধের অধিবেশনে ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছেন।

ট্রাম্প মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশ তার প্রস্তাবে রাজি হলে তবেই এটি সম্ভব। পাকিস্তান রাজি থাকলেও ভারত বরাবরই মধ্যস্থতার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলছে, কাশ্মির তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ইমরান খান ভারতের সাথে আলোচনার বিষয়ে বলেন, ‘আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আমাদের হাতে আর কী উপায় আছে? আমরা কী করব? আমরা কী শুধু দুঃস্বপ্ন দেখে এই আশা করব যে কিছু ঘটেনি?’ উপায় না থাকলে নিজেদের মতো উপায় তৈরির কথা বলেছেন তিনি।
ভারত ১০০ কোটি মানুষের বাজার, তাই কাশ্মির ইস্যুতে কেউ কথা বলছেন না : কাশ্মিরিদের সহযোগিতা করতে গিয়ে বিশ্বনেতাদের সমর্থন আদায়ে হতাশ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হতাশা প্রকাশ করে ইমরান খান বলেন, কাশ্মির নিয়ে মোদির ওপর কোনো চাপই তৈরি হয়নি এখনো। এ নিয়ে তিনি দোষারোপ করেছেন আন্তর্জাতিক মহলকেই। তিনি বলেন, ভারতকে সারা বিশ্ব ১০০ কোটি মানুষের মার্কেট হিসেবে গণ্য করে। ফলে বস্তুবাচক চিন্তাধারার কাছে মনুষ্যত্ব দাম হারাচ্ছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কেউ ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মির ইস্যুতে কোনো কথা বলছেন না। আমি আন্তর্জাতিক মহলের ওপর হতাশ। এর পরও কাশ্মির নিয়ে হাল ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন ইমরান খান। তিনি বলেন, আমরা এ নিয়ে চাপ বজায় রাখব।

লেবার পার্টির প্রস্তাবে ভারতের ক্ষোভ : ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে হস্তক্ষেপের জন্য যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে লেবার পার্টির প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিস কুমার বলেন, লেবার পার্টির এই পদক্ষেপ আসলে ভোটার বাড়ানোর হাতিয়ার।
গত বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কাশ্মির নিয়ে একটি প্রস্তাব দেন লেবার পার্টি। দলটির নেতা জেরেমি করবিন বলেন, কাশ্মিরে ‘প্রবেশ’ করে জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

তবে রাভিস কুমার বলেন, লেবার পার্টির এখানে জড়ানোর কোনো মানেই নেই। তিনি বলেন, কাশ্মির নিয়ে লেবার পার্টির পদক্ষেপকে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। আমরা এ বিষয়ে অবহিত না হওয়ার জন্য মর্মাহত। নিশ্চিতভাবেই এটি আসলে ভোটার বাড়ানোর জন্যই করানো হচ্ছে। কাশ্মির নিয়ে লেবার পার্টির জড়ানোর কোনো কারণ নেই। করবিনের প্রস্তাবে বলা হয়। ভারত ও পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সাথে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। কাশ্মির নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে আছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ভারত কাশ্মিরকে দ্বিপক্ষীয় বিষয় বলে মনে করে। কোনো তৃতীয়পক্ষের এখানে ভূমিকা রাখার প্রয়োজন নেই।