Home রাজনীতি মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে বিএনপি

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে বিএনপি

473
0
SHARE

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। তিন বছর মেয়াদি এই কমিটি এখন প্রায় ৯ মাস ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে বিএনপি। ছয় মাস পরপর দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার বিধান থাকলেও সেই নিয়মও মানছে না দলটি।

বিএনপি এখন ব্যস্ত অঙ্গসংগঠন ও জেলা বিএনপির ভাঙাগড়া নিয়ে। এসব কমিটিও হচ্ছে না নির্ধারিত সময়ে। এ নিয়ে দায়িত্বশীল নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপির হাইকমান্ড।

কার্যত, বিএনপি এখন না দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে না মনোযোগী দল গোছানোতে। দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল কবে হবে তারও নেই কোনো খোঁজখবর। বেশ কিছুদিন আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দিয়েছিলেন, শিগগিরই তারা বিএনপির কাউন্সিল করবেন। এরপরও কাউন্সিলের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বর্তমানে এ নিয়ে দলের ভিতর কোনো আলোচনাই নেই।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, বেগম খালেদা জিয়া প্রায় দুই বছর ধরে কারাগারে। তাকে মুক্ত করাই এই মুহূর্তে বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আইনি প্রক্রিয়ায় তার মুক্তির সম্ভাবনা কম। রাজপথের দুর্বার কর্মসূচিও নেই। এ দাবিতে ইতিমধ্যে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, কালো পতাকা প্রদর্শন বা প্রতীকী অনশনের মতো কর্মসূচিও পালিত হয়েছে
তাতেও কাজ হয়নি। রাজপথের কঠোর আন্দোলন ছাড়া বেগম জিয়ার মুক্তি মিলবে না। বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে কাউন্সিল করলে কর্মীরা তা ভালোভাবে নেবে না। এ প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী। লাখ লাখ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা। প্রতিকূল পরিবেশেও আমাদের জেলা পর্যায়ের কমিটির পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে আমরা কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। তাদের ২১তম কাউন্সিলে বিএনপির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কাউন্সিল যখনই হোক এবার আর কোনো ‘ঢাউস’ নির্বাহী কমিটি হবে না। ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটির পাশাপাশি অর্ধ শতাধিক উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগও এই ‘ঢাউস’ নির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির একাধিক নেতাকে জানিয়েছেন, এ ধরনের ঢাউস কমিটি দলকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ভবিষ্যতে যেন এমনটি না হয়, সে ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অনুরোধ করেছেন। জানা যায়, ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৪১ বছরে বিএনপিতে কাউন্সিল হয়েছে ছয়বার। ২৭ বছর পর কিছুদিন আগে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াও কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল ও তাঁতী দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দল সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনকেও নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এর মধ্যে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। এ দিকে আংশিক কমিটি দিয়ে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল বছরের পর বছর পার করছে। কিন্তু কমিটি আজও হয়নি। বিএনপিসহ অন্য অঙ্গ সংগঠনে কাউন্সিলে নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি তৃণমূল বিএনপির। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম চলছে। এটা চলবে। তবে দলকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে।
এদিকে, বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে কাউন্সিল না হলেও বর্তমান কমিটির শূন্য পদ পূরণের পক্ষেও মতামত রয়েছে বিএনপিতে। এরই মধ্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং বেগম সেলিমা রহমানকে নিয়োগের পরও স্থায়ী কমিটিতে তিনটি পদ শূন্য। এরই মধ্যে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান। আরও দুজন স্থায়ী কমিটির প্রবীণ নেতাও অসুস্থতার কারণে দলে সক্রিয় নন। শূন্য পদে ও নিষ্ক্রিয়দের বদলে নতুনদের নেতৃত্বের দাবিও অনেকের। শেষ পর্যন্ত কাউন্সিল না হলে শূন্যপদগুলো পূরণ করে দলে গতিশীলতা আনা হবে বলেও জানান বিএনপির একাংশ। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটি রাজনৈতিক দল মাঠে সক্রিয় থাকে দুটি উপায়ে। একটি হলো নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি দল গোছানোর মাধ্যমে। বিএনপিতে দল গোছানোর কার্যক্রম চলছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবি, কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত সব কমিটিই যেন কাউন্সিলের মাধ্যমে হয়। আইনি প্রক্রিয়ায় না হলেও আন্দোলনের মাধ্যমেই দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এরপর যত দ্রুত সময়ের মধ্যে কাউন্সিল করা উচিত।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন জোরদার করা। এ জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে তৃণমূল থেকে দল পুনর্গঠন চলছে। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেই জাতীয় কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি। ’