Home জাতীয় অর্থপাচার করতেই শুভ্রা ও তার স্বামী যুক্তরাষ্ট্রে যান

অর্থপাচার করতেই শুভ্রা ও তার স্বামী যুক্তরাষ্ট্রে যান

107
0
SHARE

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস থেকে আত্মসাৎ করা টাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান ওকায়ামা ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক শুভ্রা রানী ঘোষ ও তার স্বামী সুব্রত দাস, তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে আত্মসাৎ করা ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচারে বারবার দেশত্যাগ করেছিল এই দম্পতি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সুব্রত দাস গত তিন বছরে পাঁচবার আমেরিকায় ভ্রমণ করেছেন।

অর্থ পাচারে এ দম্পতির বিদেশ ভ্রমণের বেশকিছু নথিপত্র এসেছে দুদকের হাতে। যার মাধ্যমে দুদক প্রাথমিকভাবে মনে করছে অর্থ পাচার করতেই তাদের এতবার বিদেশ ভ্রমণ। স্ত্রী দেশে ফিরলেও ফেরেননি স্বামী সুব্রত যদিও মামলার কথা জানতেন না সুব্রত ও শুভ্রা দম্পতি। সে কারণে দেশে ফিরেই দুদকের হাতে গ্রেফতার হলেন শুভ্রা রানী ঘোষ। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরায় বাস করেন শুভ্রা ও সুব্রত দম্পতি। তিন মাস আগে তারা আমেরিকায় যান। প্রাথমিকভাবে দুদকের কাছে শুভ্রা দাবি করেন, তিনি আমেরিকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। তবে দুদকের সন্দেহ মূলত আত্মসাৎ করা টাকা পাচার করতেই তাদের এতবার আমেরিকায় ভ্রমণ। আলোচিত পিকে হালদারের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করা ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রায় পুরোটাই গিয়েছে এই দম্পতির পকেটে।

সোমবার (২২ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরছিলেন আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) সহযোগী ও ওকায়ামা ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক শুভ্রা রানী ঘোষ। দেশে ফেরার পরই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে গ্রেফতার করে। তিনি ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলার অন্যতম প্রধান আসামি।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, শুভ্রা রানী ঘোষ দেশে ফিরছেন, এমন সংবাদ পেয়ে দুদকের একটি টিম বিমানবন্দরে আগে থেকেই অবস্থান নেয়। সোমবার সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

শুভ্রা রাণীকে গ্রেফতার করতে সোমবার (২২ মার্চ) সকাল থেকেই প্রস্তুত ছিল দুদক। বেলা ১২টায় দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে আটক করার পর বিমানবন্দর থেকে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে আসে। সেখান থেকে তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতারের পর শুভ্রা রানী ঘোষকে আদালতে তোলা করা হয়। আদালত তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ভুয়া ঋণের মাধ্যমে ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন শুভ্রা। পরে ওই টাকা ভুয়া কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করা হয়।

ভুয়া ঋণের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দায়ের করে দুদক। প্রতিটি মামলায় রিলায়েন্স লিজিং ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পিকে হালদার) আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলোর অন্য আসামিরা হলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, এমডি মো. রাশেদুল হক, ভারপ্রাপ্ত এমডি আবেদ হোসেন এবং প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সদস্যসহ পি কে হালদারের অন্যান্য সহযোগী।

এতে আরও আসামি করা হয়- দৃনান অ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান কাজী মমরেজ মাহমুদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজীব মারুফ, ইমেক্সোর প্রোপাইটর ইমাম হোসেন, লিপরো ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের দুই পরিচালক সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা সাহা, আর্থস্কোপ লিমিটেড চেয়ারম্যান প্রশান্ত দেউরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরা দেউরী, ওকায়ামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, আরবি এন্টারপ্রাইজের মালিক রতন কুমার বিশ্বাস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জি ও তার স্বামী পরিচালক বাসুদেব ব্যানার্জি।

এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক মো. নওশের-উল ইসলাম, পরিচালক নাসিম আনোয়ার, পরিচালক মো. নুরুজ্জামান, পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও জহিরুল আলমসহ মোট ৩৭ জনকে আসামি করা হয়।

এর আগে ২৫ জানুয়ারি পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ৫টি মামলা করে দুদক। মামলায় আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের নামে ৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, মেসার্স বর্ণ-এর নামে ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, রাহমান কেমিক্যালস লিমিটেডের নামে ৫৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ও মুন এন্টারপ্রাইজের নামে ৮৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করে দুদক। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল।

পিকে হালদার কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত ১১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী ছাড়াও পিকে হালদারের সহযোগী শঙ্খ বেপারী, রাশেদুল হক সর্বশেষ অবান্তিকা বড়াল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।