Home খেলা ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ আটে সুইজারল্যান্ড

ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ আটে সুইজারল্যান্ড

SHARE

ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে অন্যরকম একটি রাত উপভোগ করলো ফুটবলবিশ্ব। গোল উৎসব আর নাটকে পরিপূর্ণ দুই ম্যাচে দুর্দান্ত জয় পেয়ে শেষ আটে নাম লিখিয়েছে স্পেন ও সুইজারল্যান্ড। ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে উঠেছে স্পেন। অন্য ম্যাচে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে সুইজারল্যান্ড।

চিত্রনাট্য আর নাটকীয়তা ভরা ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ডের ম্যাচটিতে ফ্রান্স একটা সময় ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৩-৩ সমতা ফেরায় সুইজারল্যান্ড। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালেও সেখানে সময় থাকায় পেনাল্টি শ্যুটআউটে গড়ায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ। যেখানে ৫-৪ ব্যবধানে জয় পেয়ে শেষ হাসি হাসে সুইজারল্যান্ড। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে বিদায় করে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটিয়েছে তারা। টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে জিতে ১৭ বছর পর কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে সুইজারল্যান্ড।

বুখারেস্টের ন্যাশনাল এরেনায় দারুণ আক্রমণে শুরুতেই এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। ১৫ মিনিটে সেফেরোভিচ বক্সের বাইরে থেকে লক্ষ্যে শট নেন। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বল যায় জুবেরের কাছে। ততক্ষণে বক্সে ঢুকে গেছেন সেফেরোভিচ। জুবেরের মাপা ক্রসে লাফিয়ে দুর্দান্ত হেড করেন তিনি, ফরাসি গোলকিপার হুগো লরিস বল আটকাতে পারেননি। শুরুতেই লিড নিয়ে ২০০৪ সালের পর প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখা শুরু হয় সুইজারল্যান্ডের।

প্রথমার্ধের শুরুতে পিছিয়ে পড়া ফ্রান্স কয়েক মিনিটের মধ্যে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও কাজে লাগাতে পারেনি। বেশিরভাগই কিলিয়ান এমবাপের পায়ে গিয়েছিল, কিন্তু ফরাসি স্ট্রাইকার সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি।

২৯ মিনিটে সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনাটি নষ্ট হয় ফ্রান্সের। আদ্রিয়ান র্যাবিওটের বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেয়া বুলেট গতির শট একটুর জন্য পোস্টের ডানদিক ঘেঁষে চলে যায়। ফলে প্রথমার্ধে বল ৫৪ ভাগ বল দখলে রেখে ৭টি শট নিলেও (লক্ষ্যে একটিও নয়) গোলের দেখা পায়নি ফ্রান্স। অন্যদিকে ৪ শটের একটিকে গোলে পরিণত করা সুইজারল্যান্ড ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে ব্যবধান দ্বিগুণ করার বড় সুযোগ পায় তারা। ৫২ মিনিটে ফরাসির বক্সে ঢুকেই বেঞ্জামিন পাভার্দের ফাউলের শিকার হন জুবের। সুইজারল্যান্ডের আবেদনে সাড়া দিয়ে ভিএআর যাচাই করে পেনাল্টি দেন রেফারি।

৫৫ মিনিটে পেনাল্টি কিক নিতে যান রিকার্ডো রদ্রিগেজ। বাঁ দিক দিয়ে কোনাকুনি নিচু শট নেন তিনি। বলের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্বল শট এক হাতে রুখে দেন লরিস। অধিনায়কের এই বীরত্বের পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ফ্রান্স।

মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করেন করিম বেনজেমা। পর্তুগালের বিপক্ষে জোড়া গোল করা রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ৫৭ মিনিটে চোখ ধাঁধানো গোল করেন।

এমবাপ্পের ছোট পাস থেকে দারুণভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করে কাজে লাগান বেনজেমা। পিএসজি স্ট্রাইকার বল বক্সের মধ্যে বাড়ান। কিছুটা পেছনে থাকা বল বাঁ পা দিয়ে টেনে সামনে নেন বেনজেমা, তারপর এগিয়ে গিয়ে বাঁ পায়ের শটেই লক্ষ্যভেদ। দুই মিনিটের মাথায় বক্সের ডানপাশে বল পেয়ে ক্লোজ রেঞ্জ থেকে হেডে আরও এক গোল তার।

আন্তোয়ান গ্রিয়েজমানের উঁচু শটে বল সুইশ গোলরক্ষক সমারের হাতে লেগে দূরের পোস্ট দিয়ে বের হওয়ার পথে ছিল, কিন্তু তার আগেই হেড করেন বেনজেমা। টানা দুই ম্যাচে জোড়া গোল করে গোল্ডেন বুট পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকলেন তিনি।

ম্যাচের ৭৫ মিনিটে সুইজারল্যান্ডকে দুই গোলে পেছনে ফেলে ফ্রান্স। কিছুটা জায়গা খুঁজে বের করে বক্সের বাইরে থেকে শক্তিশালী শটে স্কোর ৩-১ করেন পল পগবা।

কিন্তু ফ্রান্সকে সহজে ছেড়ে দেয়নি সুইজারল্যান্ড। ৮১ মিনিটে এমবাবুর চমৎকার ক্রস থেকে সেফেরোভিচের শক্তিশালী হেড জালে জড়ায়। আরেকটি গোলের জন্য বুক চিতিয়ে লড়াই করে গেছে ১৯৯২ সালের সেমিফাইনালিস্টরা। ফলও পেয়ে যায় হাতেনাতে। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে তৃতীয় গোল করে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেয় সুইশরা। গ্রানিত জাকার পাস ধরে প্রেসনেল কিম্পেম্বেকে বোকা বানিয়ে বক্সে ঢুকে ৯০ মিনিটে লরিসকে পরাস্ত করেন বদলি নামা মারিও গাভ্রানোভিচ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময় খেলা ৩-৩ ব্যবধানেই শেষ হয়।

বাড়তি ৩০ মিনিটের খেলাতেও দুই দল পা্ল্টাপাল্টি আক্রমণ করলেও কেউ গোল করতে না পারলে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টিতে।

প্রথম শটে সুইজারল্যান্ডের গাভ্রানোভিচ গোল করেন। ফ্রান্সকে স্বস্তি এনে দিয়ে গোল করেন পগবাও। দ্বিতীয় শুটে সুইশদের উল্লাসে মাতান ফ্যাবিয়ান স্কার। ফ্রান্সের পক্ষে দ্বিতীয় শটে ডানপ্রান্ত দিয়ে জালে বল জড়ান জিরুদ। মানুয়েল আকানজি ঠাণ্ডা মাথায় তৃতীয় শটে লক্ষ্যভেদ করে সুইজারল্যান্ডকে ম্যাচে রাখেন। তৃতীয় শট থেকে ফ্রান্সের হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন থুরাম। ভারগাসের শট ডান হাত দিয়ে লরিস ঠেকালেও বল রাখতে পারেননি। কিম্পেম্বে করেন ফ্রান্সের চতুর্থ গোল। লরিসকে ভুল দিকে পাঠিয়ে সুইশদের শেষ শটে সফল হন মেহমেদি। ফ্রান্সের শেষ শট নিতে আসেন এমবাপ্পে, তার উঁচু শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন সমার। তারপরই অঘটন ঘটিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে সুইশরা।

আগামী ২ জুলাই মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে সেন্ট পিটার্সবার্গে তাদের প্রতিপক্ষ স্পেন।