Home জাতীয় পদ্মা সেতু আমাদের বঞ্চনার পরিসমাপ্তির উপাখ্যান: শ ম রেজাউল

পদ্মা সেতু আমাদের বঞ্চনার পরিসমাপ্তির উপাখ্যান: শ ম রেজাউল

57
0
SHARE

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুখের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ সেতুর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প গড়ে উঠবে, শিল্পের সঙ্গে সঙ্গে টাউনশিপ গড়ে উঠবে। পদ্মা সেতু শুধু সেতু নয়, এটি আমাদের বঞ্চনার পরিসমাপ্তির উপাখ্যান। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন এ অঞ্চলে রেল যোগাযোগ না থাকার বিদ্রূপের পরিসমাপ্তি।

আজ শনিবার (১১ জুন) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘পদ্মা সেতু: দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন বুনন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথ বলেন। বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-ঢাকা এ সেমিনারের আয়োজন করে।

মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের কারণে আমাদের জিডিপিতে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ উত্তরণ ঘটবে। আঞ্চলিক জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ উন্নয়ন ঘটবে। পদ্মার অপর পাড়ে কৃষিজ সামগ্রী তথা পেয়ারা, আমড়া, মাল্টা, শাকসবজি, মাছ এগুলোর প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এতদিন গড়ে ওঠেনি। যাতায়াত ব্যবস্থার সংকটের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে কেউ শিল্প স্থাপনে যেতে চাইত না। অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও দক্ষিণাঞ্চলে এতদিন কিছুই গড়ে ওঠেনি। এখন পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে যুক্ত হবে। এর ফলে ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হবে। এসব দেশে রফতানির সুযোগ তৈরি হবে। ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও বৃহত্তর বরিশালের অনেক শিল্প স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তিনি আরও যোগ করেন, পদ্মায় একটি ব্রিজের প্রয়োজনীয়তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জাপান সফরকালে তাদের বলেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের কারণে এটি আর আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, তারপর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর পূর্বে ও পরে অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে।

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়ার সময় প্রচণ্ড ঝড় এসেছে। বিশ্ব ব্যাংক টাকা বরাদ্দ না হওয়া সত্ত্বেও বলেছে এখানে দুর্নীতি হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে আর্টিকেলে দুর্নীতির অভিযোগ সাপোর্ট করে বলেছেন এটা না করাই উত্তম। কানাডার কোর্ট মামলার জাজমেন্ট দিয়ে বলল মুখরোচক কথা শোনা ছাড়া অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই এবং যে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি, তা গালগল্প মনে হচ্ছে। অথচ এ গালগল্পের ভিত্তিতেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজের টাকায় আমরা পদ্মা সেতু করব। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস এবং সততার বিজয় গাঁথা বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর মত ভূপেন হাজারিকা সেতু দোতলা সেতু নয়। পদ্মা সেতু যতটা প্রশস্ত ভূপেন হাজারিকা সেতু ততটা প্রশস্ত নয়। বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা ও অস্থিতিশীল নদী পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণের প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ ভূপেন হাজারিকা সেতুর চেয়ে অনেক বেশি ছিল। পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয়িত তিনগুণ অর্থ ভূপেন হাজারিকা সেতুতে ব্যয় করতে হয় নি। বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের যন্ত্রপাতি পদ্মা সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির অবস্থা হয়েছে, যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। যারা উন্নয়ন পরিপন্থী, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের পক্ষে না থেকে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন বুননের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে থাকতে হবে।

বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তারিকুল ইসলাম মাসুমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব সৈকতের সঞ্চালনায় সেমিনারে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল, বরগুনা পৌরসভার মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নিজাম উদ্দিন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মানিক লাল ঘোষসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা সেমিনারে বক্তব্য দেন।

সেমিনারে ‘পদ্মা সেতু: যা সেতুর চেয়েও বড়’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক।