Home জাতীয় চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ

SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকদের বৈঠকে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘শ্রমিকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ১৭০ টাকা দৈনিক মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এখানে ব্যাখ্যা করা দরকার— চা শিল্পে বিভিন্ন সুবিধা প্রদাণ করা হয়, যেটা মালিক পক্ষ বহন করে। সেই ক্ষেত্রে যেটা আনুপাতিক হারে বেড়ে যাবে, যেমন— নগদ মজুরি ১৭০ টাকা, প্লাকিং বোনাস, কারখানা অধিকার, কাজের আয়— সেটা আনুপাতিক হারে বাড়বে। বার্ষিক ছুটি, বেতনসহ উৎসব ছুটি আনুপাতিক হারে বাড়বে। এগুলো সবগুলোতে টাকা দেওয়া হয়।’

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আরও বলেন, ‘অসুস্থাজনিত ছুটি, সেটাও বাড়বে আনুপাতিক হারে। ভবিষ্যত তহবিলে নিয়োগকর্তার চাঁদা, কাজে অনুপস্থিতি অনুযায়ী বার্ষিক উৎসব ভাতা সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে। ৫ শতাংশ প্রশাসনিক খরচ সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে। এছাড়া আরও রয়েছে ভর্তুকি মূল্যে রেশন যেটা দেয়, যেটা ২৮ টাকা দিয়ে কিনে, দুই টাকায় দেয় শ্রমিকদের।’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা সুবিধা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন। চা শ্রমিক পোষ্যদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়, রক্ষাবেক্ষণ, গরু চরানো, চৌকিদার ব্যয় এবং বিনামূল্যে বসতবাড়ি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ শ্রমিক কল্যাণ কর্মসূচি। এবং বাসাবাড়িতে উৎপাদন বাবদ আয়। এই সবকিছু মিলিয়ে যেটা পড়ে, সেটার হিসাব এখনো তাৎক্ষণিক করতে পারেনি। তবে দেখা যাচ্ছে, সেটা হয়তো সাড়ে চারশ থেকে পাঁচশ টাকা দৈনিক পড়বে। এটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাইকে কাজে যোগদান করার জন্য। যেহেতু উনি সবার কাছ থেকে শুনেছেন, তিনি বললে তাঁরা কাজে যোগ দেবেন।’

কায়কাউস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাদের (শ্রমিকদের) পক্ষ হয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মজুরি বাড়াবেন বলেছিলেন, সেটি উনি করেছেন। আগামীকাল থেকে যেন সবাই কাজে যোগ দেয়, সেই আহ্বান তিনি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আরেকটি কথা বলেছেন, শিগগিরই তিনি চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করবেন।’

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিকেল সোয়া ৪টায় বঙ্গভবনে চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব।

সিলেট বিভাগের বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকেরা ন্যূনতম মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণের দাবিতে কর্মবিরতি বা ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন। গত ৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে শ্রম অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনো মীমাংসা হয়নি। এ অবস্থায় আজ চা-বাগানের মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে হবিগঞ্জের ২৪টি চা-বাগানে শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার ১৮তম দিনের মতো শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করেন। বেলা ১১টা থেকে শ্রমিকেরা নিজ নিজ বাগানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

একই দাবিতে শুক্রবার ১৪তম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেন সিলেট ভ্যালির ২৩টি বাগানের চা-শ্রমিকেরা। গতকালও ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ ছিল। তবে ছিল না কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি।

চা-বাগানের শ্রমিকেরা বর্তমানে দৈনিক মজুরি পান মাত্র ১২০ টাকা। কয়েক মাস ধরে মালিকপক্ষের কাছে বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও মজুরি বাড়ানো হয়নি। সম্প্রতি নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বাড়ায় শ্রমিকদের অবস্থা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে। এ প্রেক্ষাপটে ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন সারা দেশের দেড় শতাধিকা চা-বাগানের শ্রমিকেরা। মাঝখানে দুদিন বিরতি দিয়ে পুরোদমে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা।

শ্রম অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়। এতে দুই দফায় মাত্র ২৫ টাকা বাড়িয়ে মজুরি ১৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়, যা স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাখ্যান করেন শ্রমিক নেতারা।

এদিকে, শ্রমিকদের একটা অংশ চা-বাগানের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে জানানোর দাবি জানিয়েছেন, যাতে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেন।