Home জাতীয় গরিব রোগীদের চিকিৎসায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

গরিব রোগীদের চিকিৎসায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

45
0
SHARE

চিকিৎসকদের সাধারণ ও গরিব রোগীদের চিকিৎসায় আত্মনিয়োগের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রামে যেতে হবে, গ্রামের মানুষকে দেখতে হবে। রোগীদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট দিয়েছি, সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি, কিন্তু তারপরও চিকিৎসক ও নার্সের অভাব দেখা যায়। অনেক ডাক্তার ও নার্স জেলা, উপজেলা পর্যায়ে যেতে চান না। তাদের রাজধানীতেই থাকতে হবে, এমন নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। আশা করি, আমাদের ডাক্তাররা বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখবে এবং চিকিৎসা সেবা দিতে উপজেলা পর্যায়ে যাবেন।

আজ (বুধবার) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, উপজেলার হাসপাতালগুলো মাত্র ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ছিল। আমরা জনসংখ্যা ও রোগীর হিসাব নিয়ে অনেক হাসপাতাল ১০০ শয্যার করে দিয়েছি। জেলার হাসপাতালগুলো ১০০ শয্যার ছিল। রোগী কেমন আসে সেটার হিসাব করে কোথাও ২৫০ শয্যার এবং বড় বড় শহরগুলোতে ৫০০ শয্যা পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দিয়েছি। এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার আরও সুযোগ করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, অনলাইনেও চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায়। সেটা আরও জোরদার হওয়া দরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে যাতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন উপজেলার মানুষ যাতে চিকিৎসা সেবা পান, সেদিকে আরও নজর দিতে হবে।

গবেষণার ওপর নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা সাধন করা যায় না। এটির দিকে বিশেষ নজর দিতে অনুরোধ করবো।

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার জের ধরে পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘যার ফলে বিশ্ব অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম না। বাংলাদেশকেও কঠিন সময় অতিক্রম করতে হচ্ছে। যেখানে উন্নত দেশগুলো নিজেদের দেশ নিয়েই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের মতো দেশ, ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, ভৌগোলিক সীমারেখায় যেটা ছোট, কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বিশাল, সেখানে এই স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে তাদের সার্বিক সেবা দেয়া যে কত কঠিন দায়িত্ব, সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারি।’

বিশ্বের প্রতিটি দেশে নিত্যপ্রয়োজনীর সামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে বলা হচ্ছে। খাদ্য কেনার ক্ষেত্রে রেশন করে দেয়া হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো, আপনি আমেরিকা বলেন, ইংল্যান্ড বলেন, ইউরোপ বলেন, সেসব দেশে কিন্তু এই অবস্থা চলমান।’

এমন বাস্তবতায় মিতব্যয়, সঞ্চয় ও খাদ্য উৎপাদনের সমাধান দেখছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদেরও আরও মিতব্যয়ী হতে হবে। আমাদেরও নিজেদের দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ এই যে ধাক্কাটা এলো, একটা তো করোনা, তারপর যুদ্ধ—এর ফলে সামনে কিন্তু আরও বেশি কঠিন সময় আসবে।

‘আপনারা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় চিন্তা করেন, তখন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বিশ্বব্যাপী। এখনও কিন্তু সে রকম একটা সম্ভাবনা (আশঙ্কা) রয়েছে। সে জন্য আমাদের দেশের সব মানুষকে আমি এটাই আহ্বান করি, যার যেখানে এক ইঞ্চি জমি আছে, যে যা পারেন উৎপাদন করেন। যে যা পারেন ফসল ফলান। যে যা পারেন কিছু করেন। নিজেরা কিছু করে নিজের চাহিদা নিজে পূরণে উদ্যোগী হন।

খাদ্য নিরাপত্তা না থাকলে হাজার চিকিৎসা দিয়েও রোগী বাঁচানো সম্ভব নয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কারণ খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা—কাছাকাছি। একটার ওপর আরেকটা নির্ভরশীল। সে জন্য আমি সবাইকে এটা বলব যে জ্বালানি ব্যবহারে, বিদ্যুৎ ব্যবহারে, পানি ব্যবহারে সর্বক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।

‘মিতব্যয়ী হতে হবে। আর নিজেরা কিছু সাশ্রয় করতে হবে। নিজেদের সঞ্চয় বাড়াতে হবে। যেন যেকোনো দুঃসময় এলে আমরা তা মোকাবিলা করতে পারি। শহর-গ্রাম সর্বস্তরের মানুষকে আমি সেই আহ্বানটা জানাই।’