Home জাতীয় দেশে ৩ কোটি বয়স্ক মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দেশে ৩ কোটি বয়স্ক মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

29
0
SHARE

দেশের তিন কোটি বয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আজ বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে মানসিক স্বাস্থ্য রিপোর্ট প্রকাশ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কৌশলপত্র প্রণয়ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন
অনুষ্ঠানে সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেন সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই মানসিক স্বাস্থ্য যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, ততটা পায়নি। একটা মানুষ মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে না। মানসিক স্বাস্থ্যকে আমাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত। আমারা যতই হাসপাতাল এবং ওষুধের ব্যবস্থা করি না কেন, মানুষকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে না পারি, তাহলে সে শারীরিকভাবে ভালো থাকতে পারবে না, তখন সে পরিবার ও দেশের জন্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনা। এর আগে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বাংলাদেশে তেমন কাজ হয়নি, অটিজম বিষয়ে কেউ জানতোই না।
তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে দক্ষ জনবল বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। এটিও হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এই সমস্যার কারণে অনেকে চাকরি হারায়, দেশের প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়, অপরাধের মাত্রা বাড়ে। এমনকি উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ে এই মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা জানি মানসিক সমস্যায় বিশ্বে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে। প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। আর বাংলাদেশের ১৮ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক বা তিন কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে এই সমস্যায় ভুগছেন। যা অন্যান্য অনেক রোগেও এমনটা হয় না। আক্রান্ত এসব রোগীরদের বড় একটি অংশ শিশু।
তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকার নানামুখী ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা বলছি না যে, অনেকিছু করেছি; কিন্তু আমরা উপলব্ধি করছি। পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আরও উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় কাউন্সেলিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০০ উপজেলায় এনসিডি কর্নার রয়েছে, সেখানেও এই কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা থাকছে। তবে অনেককিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। শুধু যে সুযোগ-সুবিধার কারণে সমস্যা হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। সচেতনতায়ও এখনো নানা গ্যাপ রয়েছে।
এ সময় মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পরিবার থেকেই পরিবর্তন আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ।
সায়মা ওয়াজেদ বলেন, আমাদের শারীরিক চিকিৎসা নানা কর্মকৌশল থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ছিল না। এ জন্য নানা পরিকল্পনা আমরা করেছি। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটা উন্নত পরিবেশ দরকার। শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলেই হবে না, আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকেই এটি চালু করতে গবে। পরিবারেই তাকে যেন দুর্বল করে দেখা না হয়।
তিনি বলেন, আজ গর্ব করে বলতে হয় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বাংলাদেশের একটি কর্মকৌশল আছে, একটি আইন আছে। কিন্তু সবাই এগিয়ে না এলে, কাজ না করলে এগোবেনা। সবার আগে নিজেকের পরিবর্তন করতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছে। সেখান থেকে উন্নত দেশের কাতারে এসেছি, তাহলে কেন আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের মতো জায়গায় এগোতে পারব না?
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উন্নতি করতে চাইলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এখাতে ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের ৬০ ভাগই খরচ হচ্ছে ট্রেনিংসহ অন্যান্য কাজে। তাই বরাদ্দ বাড়ানো খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যে যে ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়, সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যে ই-স্কিন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে হবে। সেবার ব্যবস্থাপনা, মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি, ই-মেন্টাল হেলথ ও গবেষণাসহ প্রত্যকেটিরই কিছু না কিছু কাজ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের একটি ইনস্টিটিউট তৈরির পরিকল্পনা আমাদের আছে। যেখানে পোস্ট গ্রাজুয়েটের ট্রেনিং দেওয়া হবে সেখানে। ২০২০ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী অপারেশন প্ল্যান তৈরি হয়েছে। ৮ বিভাগে যে নতুন মেডিকেল কলেজ হচ্ছে সেখানেও মানসিক স্বাস্থ্য রাখা হয়েছে।