Home বিনোদন ‘অকেজো’ সেন্সর বোর্ড শুধু যন্ত্রণা দিতে পারে: ফারুকী

‘অকেজো’ সেন্সর বোর্ড শুধু যন্ত্রণা দিতে পারে: ফারুকী

29
0
SHARE

সেন্সর বোর্ড এখন অকেজো জিনিসে পরিণত হয়েছে এবং এটা এখন শুধু যন্ত্রণা দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে আয়োজিত চলচিত্র উৎসবের মুক্ত আলোচনায় এ মন্তব্য করেন ফারুকী। এ সময় আরও বক্তব্য দেন নির্মাতা আশফাক নিপুন ও মেজবাউর রহমান সুমন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন জহির রায়হান ফিল্ম সোসাইটি তিন দিনব্যাপী সিনেমা উৎসব ‘একান্নবর্তী’ আয়োজন করে।
যার শেষ দিন বৃহস্পতিবার এই আলোচনা সভা হয়।
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমি মনে করি, সরকারের এখন ভাবার সময় এসেছে যে সেন্সরের নামে শিল্পীদের গলা চেপে ধরে আদৌ তাকে রক্ষা করতে পারছি কি না? কারণ সে যেটার ভয়ে আছে সেটা আপনি, সেটা ফেসবুকে পাবেন, ইউটিউবে গেলে পাবেন। সেন্সর বোর্ড এখন অকেজো জিনিসে পরিণত হয়েছে। যেটা এখন মাত্র যন্ত্রণা দিতে পারে। ’
ফারুকী বলেন, ‘ইরানে একটা নির্দিষ্ট আইন আছে। আমাদের দেশে সেটা নেই। তাই আমরা জানি না আমাদের সীমা কতটুকু। আমরা জানি না কোন কথাটা বললে আটকে দেবে। আর কোন কথাটা বললে আটকে দেবে না। আপনি যদি সেন্সরশিপের নীতিমালা পড়েন। শুধু নির্ভর করবে সেন্সর বোর্ডে কে বসে আছে। সেন্সর আইন করা হয়েছিল কারণ কেউ যেন সরকারের সমালোচনায় এমন কিছু না বলে যেটাতে সরকার ঝামেলায় পড়ে। তো এখন সরকারের সমালোচনা করার জন্য কার এত ঠেকা পড়েছে কষ্ট করে সিনেমা বানাবে?’
‘এই অবস্থা থেকে মুক্তির একটাই উপায় দেশে যখন আইনের শাসন থাকবে। দেশে যখন সত্যিকারের মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। বিচার থাকবে, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে। তখন শিল্পী ও তাঁর গল্প বলার স্বাধীনতা পাবে। সমাজের অন্যান্য জায়গায় স্বাধীনতা নাই, কিন্তু সিনেমায় স্বাধীনতা থাকবে—এটা একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে যদি আমি প্রত্যাশা করি তাহলে আমি খুবই রোম্যান্টিক। এটার কোনো মানে নাই। ’ যোগ করেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
আমাদের শিল্পীরা তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না—এমন অভিযোগ করে এ নির্মাতা বলেন, ‘দায়িত্ব পালন না করলেও হতো, কিন্তু কখনো কখনো ভুল দায়িত্ব পালন করছেন। এটা যে কতটা বিপজ্জনক দিক সেটা আমাদের কোনো সর্বনাশ হয়ে যাওয়ার পরে আমরা টের পাব। এর মাধ্যমে আমরা শুধু যে আমাদের সর্বনাশ করেছি সেটা না। বরং সরকারকেও ভুল পথে যেতে উৎসাহিত করেছি। আমাদের দেশের সাহিত্যিকেরা, শিল্পীরা, থিয়েটার কর্মীরা থেকে যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। তাহলে বাংলাদেশ আরও সুন্দর হতো, সরকার তখন সচেতন হতো। ’
এ সময় নির্মাতা আশফাক নিপুন বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও এখন সেন্সরশিপ নেই। যেটা আছে সেটা হলো সেন্সর সার্টিফিকেশন। এটা ঠিক করে দেয় কোন বয়সের মানুষজন কোন কনটেন্ট দেখবে। সেন্সর বোর্ডটা যে কোনো রাষ্ট্র আরোপ করে দিতে চায় কারণ, হয়তো শিল্পের মাধ্যমে কথা বলতে পারা বা এই ক্ষমতা আছে যে এক সাথে অনেক মানুষকে তাড়িত করে বা ধাবিত করে যা রাষ্ট্র বা সিস্টেম হয়তো সেটা চায় না বা ভয় পায়। যার কারণে রাষ্ট্র এই সেন্সর নামে চালায়। ’
আশফাক নিপুন বলেন, ‘একজন দর্শক কাপড় কিনতে গেলে যেমন তাঁর পছন্দ মতো কাপড় কিনবে, সেখানে যেমন বাধাধরা কিছু নাই। ঠিক সিনেমার ক্ষেত্রেও কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। রাষ্ট্র যদি এখন বলে দেয়, কাপড় কেনার ক্ষেত্রে তুমি অমুক কাপড়টি পরতে পারবে না, নিতে পারবে, সেটা যেমন বেমানান, সিনেমার ক্ষেত্রেও যদি বলে দেয় তুমি এটা করতে পারবে না, ওটা দেখাতে পারবে না, এটা কেটে দিতে হবে, তাহলে সেটাও বেমানান। ’
বর্তমানে সিনেমা নির্মাতাদের রাষ্ট্র গ্রহণ করতে চায় না বলে মন্তব্য করেন আরেক নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, ‘সমাজে জনমত তৈরির একটি বড় মাধ্যম সিনেমা। সিনেমায় কমেডি, রাজনীতি ইত্যাদি উপস্থাপন করা হয় বিনোদনের জন্য। কিন্তু সেন্সরশিপ বলছে, রাজনীতি নিয়ে উপস্থাপন করা যাবে না। সেন্সরশিপের ভয়ে নির্মাতারা নিজেরাই একটি সেন্সরশিপ তৈরি করে নিয়েছে। এ জন্য সিনেমা নির্মাণের আগেই সেন্সরশিপের ভয়ে রাজনৈতিক অবস্থা বা পরিস্থিতি তুলে ধরা থেকে বিরত থাকে। ’
উৎসবের আরও একটি সেশন ‘আর্টিস্ট টক’–এ অংশ নেন অভিনেত্রী নাজিফা তুষি। অভিনেত্রী বলেন, ‘সিনেমা করতে হলে অনেক ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। অভিনয়কে ভয়ংকর ভালোবাসলে কেবল এদিকে আসতে হবে। অভিনয় করতে হলেও পড়াশোনা করা উচিত। শুধু কেবল পড়াশোনাই নয় অভিনয় করতে হলে সকল ইন্দ্রিয় সচল রাখতে হবে। অভিনয় ভালোবাসলে এটাকে চর্চা করা উচিত। প্রতিটি মানুষই সুন্দর। পৃথিবীতে মানুষ খুব একটা আলাদা হয় না। অনেক ভয়ংকর মানুষের পেছনের জীবনটাকে হয়তো আমরা দেখি না। কাউকে ভালোবাসতে হলে তার ভালো খারাপ দুটোকেই ভালোবাসতে হবে। ’