Home আন্তর্জাতিক ইসরায়েলি সেনারা ঢুকে পড়ায় গাজার কেন্দ্রস্থল ছাড়ছে ফিলিস্তিনিরা

ইসরায়েলি সেনারা ঢুকে পড়ায় গাজার কেন্দ্রস্থল ছাড়ছে ফিলিস্তিনিরা

10
0
SHARE

জাতিসংঘ বলছে, গাজার কেন্দ্রস্থলে শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইসরায়েলি সেনারা ঢুকে পড়ার কারণে ওই এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ ফিলিস্তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের পূর্বাঞ্চলের দিকে চলে এসেছে ইসরায়েলি ট্যাংক।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সম্প্রতি তাদের স্থল অভিযান সম্প্রসারিত করেছে মূলত বুরেইজ এবং পার্শ্ববর্তী নুসেইরাত ও মাঘাজি শরণার্থী শিবিরকে টার্গেট করে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজা জুড়ে বেশ কিছু মানুষ নিহত হয়েছে।
গত সাতই অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের বন্দুকধারী সদস্যদের একটি আন্তঃসীমান্ত হামলার জের ধরে এই যুদ্ধ শুরু হয়। ওই হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। এ ছাড়া আরও ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত ১১ সপ্তাহের যুদ্ধে গাজায় ২১ হাজার ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উপত্যকার একটি বিস্তৃত এলাকা খালি করার ঘোষণা দিয়েছে। এই এলাকার মধ্যে গাজার কেন্দ্রস্থলে থাকা বুরেইজ ও নুসেইরাত শরণার্থী শিবির রয়েছে। এই এলাকার প্রায় ৯০ হাজার বাসিন্দা এবং ৬১ হাজার গৃহহীন বাসিন্দাদেরকে দক্ষিণাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ শহরের দিতে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ হুশিয়ার করে বলেছে যে, তাদের আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই কারণ দেইর আল-বালাহ এরইমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
৬০ বছর বয়সী ওমার বলেন, তিনি তার পরিবারের আরো কমপক্ষে ৩৫ জন সদস্যদের সাথে বুরেইজ শিবির থেক পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি ফোনে বলেন, ‘সেই সময় চলে এসেছে, আমার মনে হয়েছিল এটা কখনোই হবে না, কিন্তু মনে হচ্ছে বাস্তুচ্যুত হওয়া অবশ্যম্ভাবী।’ ‘এই নৃশংস ইসরায়েলি যুদ্ধের কারণে আমরা এখন দেইর আল-বালাহতে একটি তাবুতে বসবাস করছি।’
জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ এর গাজা বিষয়ক পরিচালক টম হোয়াইট বলেন, আরও বেশি মানুষকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফা শহরের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। ‘তার মানে খুবই ছোট একটি উপত্যকায় আরো বেশি মানুষ আসছে যাদেরকে ধারণ করার ক্ষমতা এর নেই।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রাফায় একটি ভবনে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় ২০ জন নিহত হয়েছে। ওই ভবনটিতে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঘোষণা করেন যে, মাঘাজি শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছে। এই শহরটি বেইত লাহিয়া থেকে উত্তরাঞ্চলে এবং খান ইউনিস থেকে দক্ষিণে অবস্থিত।
সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে বেইত লাহিয়ায়। ফিলিস্তিনি মিডিয়া বলছে, সেখানে চারটি আবাসিক ভবন ধ্বংস করার সময় অন্তত ৩০ জন মারা গেছে।
স্থানীয় টেলিভিশন সাংবাদিক বাসেল খেইর আল-দিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েড প্রেস-কে বলেছে, তার পরিবারের ১২ জন সদস্য এদের মধ্যে একটি ভবনের ধ্বংস্তুপের নিচে আটকে পড়েছে এবং তারা সবাই মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের আরো ৯ জন প্রতিবেশীও নিখোঁজ রয়েছে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, খান ইউনিসের আল০আমাল হাসপাতালের কাছে একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি গোলার আঘাতে অন্তত ১০ নিহত হয়। এর আগের দিন একই ধরণের আরেকটি ঘটনা এই হাসপাতালের সামনে ঘটে এবং এতে প্রায় ৩১ জন মারা যায়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, শহরটি ‘হামাসের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের একটি প্রধান কেন্দ্র।’
তিনি বলেন, তৃতীয় দিনের মতো বুরেইজ এলাকায় যুদ্ধ করছে ইসরায়েলি সেনারা। তিনি আরো বলেন, তারা ‘অনেক সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহৃত অবকাঠামো ধ্বংস করছে।’
বাসিন্দারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, বৃহস্পতিবারও তীব্র যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো ঘনবসতিপূর্ণ বুরেইজ শিবিরে উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে ঢুকছে। হামাস একটি ভিডিও পোস্ট করেছে যেখানে বলা হচ্ছে যে, হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনা এবং যানকে টার্গেট করছে।

অন্যদিকে আইডিএফ বলেছে, রোববার মাঘাজিতে বিমান হামলার সময় ‘বেসামরিক নাগরিকদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে’ তার জন্য তারা অনুতপ্ত। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ওই হামলায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছিল।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধবিমানগুলো ‘দুটি টার্গেটকে লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছিল যেগুলোর পাশেই হামাসের যোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছিল।’
ইসরায়েলে হাজার হাজার কিশোর-কিশোরী একটি বিক্ষোভে অংশ নেয় যেখানে এখনো হামাস ও গাজার অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে বন্দী শতাধিক জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে নতুন পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানায়। এদের মধ্যে অনেকেই গত সাতই অক্টোবরের হামলার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের সদস্য।
‘“আমি কিবুৎজ কাফার আজা থেকে এসেছি,’ বিবিসিকে বলেন শিরি খিয়ালি। ‘৭ অক্টোবরের দিন আমি সেখানে ছিলাম। আমার মানুষদের অপহরণ করা হয়েছে। আমরা তাদের ফেরত চাই। আমরা তাদের এখনই ফেরত চাই।’
নতুন আরেকটি চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা আলোচনা চলছে। এই চুক্তির আওতায় একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যাতে আরও জিম্মিকে উদ্ধার করা যায়। গত মাসে এ ধরণের একটি চুক্তির মাধ্যমে ১০৫ জন জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। যাইহোক, হামাস এরইমধ্যে জনসমক্ষেই জানিয়েছে যে তারা শুধুমাত্র একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি নিয়েই আলোচনা করবে।
আলাদাভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কের কাছ থেকে নতুন একটি আহ্বান এসেছে এবং তিনি দখলকৃত পশ্চিম তীরে ‘বেআইনি’ হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ গত সাতই অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরের বাসিন্দা ও ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৩০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর খবর যাচাই করে দেখেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্র এই প্রতিবেদন নাকচ করে দিয়েছেন এবং তিনি একে হাস্যকর বলে উল্লেখ করে এটি ইসরায়েলিদের প্রধান নিরাপত্তা হুমকিকে খাটো করবে বলে মন্তব্য করেছেন।
খবর বিবিসি