Home জাতীয় ঘুষ ছাড়া সেবা পান না ৮৯ ভাগ মানুষ: টিআইবি

ঘুষ ছাড়া সেবা পান না ৮৯ ভাগ মানুষ: টিআইবি

SHARE

ঘুষ ছাড়া সেবা পান না দেশের ৮৯ ভাগ মানুষ। আর দুর্নীতির শিকার ৭৫ ভাগ মানুষ কোথাও কোনো অভিযোগই করেন না। যে ২৫ ভাগ অভিযোগ করেন, তারাও মনে করেন, এর কোনো প্রতিকার নেই।

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জরিপে এসব বিষয় উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার টিআইবির নিজস্ব কার্যালয়ে ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেন প্রফেসর আফসান চৌধুরী। এ ছাড়া বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, অর্থনীতিবিদ ড. অনন্য রায়হান, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।

আফসান চৌধুরী বলেন, দুর্নীতি, তথ্যের অধিকার নিয়ে পরিচালিত জরিপে ১০০ জন মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন উচ্চবিত্ত, ৬০ মধ্যবিত্ত এবং ৩০ নিæ মধ্যবিত্ত। জরিপে দেখা গেছে, ঘুষ ছাড়া সেবা পান না দেশের ৮৯ শতাংশ মানুষ। তারা জীবনে কোনো-না-কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার। ৭৫ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার হলেও কোথাও কোনো প্রতিকার চায় না। যে ২৫ শতাংশ প্রতিকার চেয়েছে তাদের মত হল- প্রতিকার চেয়ে লাভ নেই।

অধ্যাপক আফসান চৌধুরী আরও বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেনÑ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লাভ নেই। কারণ যাদের কাছে অভিযোগ দাখিল করা হবে তারাই দুর্নীতিবাজ। এ জন্য মানুষ এ বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখায় না। তিনি বলেন, মানুষ বিপদে পড়লেও পুলিশের কাছে যেতে চায় না। তারা মনে করেন, পুলিশের কাছে গেলে ঝামেলা আরও বাড়বে।

তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জানেন মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে ২০ শতাংশের পরিষ্কার ধারণা আছে। জরিপে অংশ নেয়া ৬৫ শতাংশ মনে করেন, তথ্য জানার ফলে দুর্নীতি কমে। ১৫ শতাংশ মনে করে, বেসরকারি খাতেও দুর্নীতি হয়। দুর্নীতিবাজরা হল বিভিন্ন ব্যবসায়ী, যারা ভেজাল পণ্য বিক্রি করে।

অন্যদিকে জরিপে অংশ নেয়াদের ধারণাÑ রাজনৈতিক আন্দোলন তেমন কার্যকর নয়। কারণ বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ দুর্নীতিবাজ। এ কারণে সামাজিক আন্দোলনের প্রতি তাদের আস্থা বেশি। তাছাড়া তথ্য অধিকার আইন পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শও দেয়া হয় জরিপে।

আফসান চৌধুরী বলেন, তথ্য অধিকার আইন কার্যকর করার মাধ্যমে জনগণ সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শুধু বিচার দিয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা জরুরি। রাজনৈতিক দলের স্বচ্ছতার জন্য তাদের কাছ থেকে অবাধ তথ্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রতিনিধিদের একাংশের কাছ থেকে আইনের পরিপন্থী বক্তব্য আসছে। আর যারা আইন বাস্তবায়ন করছে, সেই পুলিশের ওপর মানুষ কতটা আস্থা রাখছে সেটি অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের মধ্যে ভীতির সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দল কলুষমুক্ত না হলে তথ্য অধিকার আইনের সুফল পাওয়া যায় না। তার মতে, একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য ৪টি বিষয় জরুরিÑ সুষ্ঠ নির্বাচন, মানুষের মৌলিক অধিকার, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। কিন্তু সেগুলো কতটা আছে তা বিবেচ্য বিষয়।

তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনে বেসরকারি খাতের তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি এ আইনের একটি বড় দুর্বলতা। তারচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছেÑ রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। মেগা দুর্নীতি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া ছাড়া করা সম্ভব নয়।

সুজন সম্পাদক আরও বলেন, তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে তথ্য কমিশন নিজেই। মানুষ তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন।

অর্থনীতিবিদ ড. অনন্য রায়হান বলেন, দেশে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা ভীষণভাবে সংকুচিত হয়েছে। সরকারি দল ছাড়া দেশে কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই। সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। আর সরকারের একাংশ এ কাজকে কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে নাগরিক সমাজ বিতর্কিত। সবাই বিভিন্ন স্বার্থে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে, মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। এ কারণে শাহবাগ এবং ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর মতো সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠছে। অনন্য রায়হান বলেন, তথ্য অধিকার আইন পরিপালন না করা হলেও এ আইনে সরকারের কোনো জবাবদিহিতার সুযোগ রাখা হয়নি। এটি আইনের একটি বড় দুর্বলতা।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে তথ্য পাওয়ার জন্য ৯৯ হাজার ২৩৮টি আবেদন জমা হয়েছে। গড়ে প্রতিবছর ১১ হাজারের বেশি আবেদন এসেছে, যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় খুবই সামান্য। তথ্য প্রদান ও গোপনীয়তা রক্ষায় ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।