Home আইন আদালত বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করা ক্যাসিনো লোকমানের বিদেশে অঢেল অর্থ

বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করা ক্যাসিনো লোকমানের বিদেশে অঢেল অর্থ

207
0
SHARE

মোহামেডান ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো থেকে অঢেল টাকা কামিয়েছেন লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। ক্যাসিনোর প্রতিদিনের বস্তাভর্তি টাকা নিরাপদে রাখতে তিনি পাঠিয়ে দিতেন আরেক ক্যাসিনো মাফিয়া কাউন্সিলর সাঈদের কাছে। সাঈদ সেই টাকাগুলো বিদেশে পাচারের ব্যবস্থা করতেন। চার মাস অন্তর বিদেশে টাকা পাচার করা হতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জেরার মুখে লোকমান মাত্র ৪১ কোটি টাকার কথা কবুল করেছেন। বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার দুটি ব্যাংকে এই টাকা রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টদের কাছে বিদেশে টাকা পাচারের পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে। ক্যাসিনো সরঞ্জাম বাংলাদেশে কে এনেছে? জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তার এমন প্রশ্নের জবাবে লোকমান জানান, মোহামেডান ক্লাবের পক্ষ থেকে তিনি নিজেই ব্যবস্থা করেছেন। আর এসব সরঞ্জাম আনা হয়েছে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোম্পানির মাধ্যমে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের শীর্ষ তিনজন ক্যাসিনো মাফিয়ার মধ্যে মোহামেডান ক্লাবের সদস্য সচিব লোকমান হোসেন ভূঁইয়া অন্যতম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠজন লোকমান হোসেন ভূঁইয়া মোহামেডান ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন। আর ক্যাসিনোর সরঞ্জাম নিয়ে আসেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোম্পানির মাধ্যমে। ক্যাসিনোটি পরিচালনার জন্য তার সঙ্গে ছিলেন আরেক ক্যাসিনো মাফিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাউন্সিলর এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদ কমিশনার। এই সাঈদ কমিশনারের মাধ্যমে তিনি ক্যাসিনোর টাকা নিরাপদে বিদেশ পাচার করতেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উইংয়ের প্রধান ছিলেন এই লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীর রুমে টাঙানো বঙ্গবন্ধুর ছবি তিনি নামিয়ে ফেলেন। প্রকাশ্যে ছবিটি তিনি ভাঙচুর করেন। শুধু তাই নয়, এর কদিন পরই জাতীয় স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে লোকমানের লোকজন কালি মেখে দেয়। গত বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় রাজধানীর মণিপুরীপাড়ার বাসা থেকে লোকমানকে আটক করে র‌্যাব-২। এ সময় তার বাসা থেকে ছয় বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব-২ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গতকাল বিকাল ৫টায় তাকে তেজগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ তাকে আদালতে পাঠানো হবে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে।
এর আগে র‌্যাবের জেরার মুখে ভোল পাল্টানো লোকমান বলেন, ‘আমি অল্প টাকা পাই। দিনে মাত্র ৭০ হাজার। সেই হিসাবে মাসে ২১ লাখ। সব টাকাই তো নিয়ে যায় কাউন্সিলর সাঈদ ওরা।’

মোহামেডান ক্লাবের ক্যাসিনো ব্যবসার মূল কারিগরই ছিলেন লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। বাংলাদেশে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ক্লাবের ক্যাসিনো সামগ্রী এনেছিল ক্রীড়া এবং বিনোদন সামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালটেন্স লিমিটেড’। এটি পিআর অ্যান্ড কমিউনিকেশন ফার্ম হিসেবে ২০১৫ সালে নিবন্ধিত। ‘হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালটেন্স লিমিটেড’-এর ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হলেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বাকি ৫০ শতাংশের মালিক তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ফালুর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রভাবশালী এক ব্যক্তির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। তিনি নিজেকে সেই প্রভাবশালীর ‘দোস্ত’ বলে পরিচয় দেন। তার আনুকূল্যেই লোকমান হোসেন ভূঁইয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হন। মোহামেডান ক্লাবের সদস্য সচিবের পদও দখলে রাখেন। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মোহামেডান ক্লাবের খেলাধুলায় উন্নয়নের জন্য দুই দফায় ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকার কোনো হদিস মেলেনি। মোহামেডান ক্লাবের একচ্ছত্র ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন লোকমান হোসেন।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রথম ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে ক্যাসিনো মেশিন আসে ২০১৭ সালে মোহামেডান ক্লাবে। আর এ মেশিন আনার সব দায়িত্ব পালন করেন লোকমান। কোথা থেকে কীভাবে এই সরঞ্জাম আনা হচ্ছে, তা তিনি গোপন রাখেন। এর আগে হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালটেন্স লিমিটেডের সঙ্গে মোহামেডান ক্লাবের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৬ সালে।

জানা যায়, এই ডিজিটাল যন্ত্রগুলো ঢাকায় এসেছিল চীন থেকে। তারেক রহমানের কোম্পানিটি চীনের একটি কোম্পানিকে এসব পণ্য সরবরাহের দায়িত্ব দেয়। চীন থেকে ক্রীড়া সামগ্রী হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। সেখানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এসব সামগ্রী বের করা হয়।

জানতে চাইলে মোহামেডান ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ও বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান বাবু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আনার বিষয়টি লোকমান তার লোকজন নিয়ে করেছে। আর কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এনেছে, তা গোপন রাখে লোকমান। যে কারণে মোহামেডান ক্লাবের অনেকেই বিষয়টি জানতে পারেনি। পরে কোম্পানির নাম জানা গেলেও মালিক কে তাও অজানা থেকে যায়।