Home এইমাত্র দালালদের ধোঁকায় পড়বেন না: প্রধানমন্ত্রী

দালালদের ধোঁকায় পড়বেন না: প্রধানমন্ত্রী

291
0
SHARE

দালাল চক্রের অসততা সম্পর্কে বিদেশ গমনেচ্ছুদের সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দালালদের ধোঁকায় পড়ে কেউ কেউ তাদের ছেলেমেয়ে এমনকি স্ত্রীকেও বিদেশে পাঠিয়ে দেন।

স্বামী তার স্ত্রীকে বিক্রিও করে দেন। এ রকম অনেক ঘটনা আমরা পেয়েছি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি আহ্বান জানাব বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা আছেন, তারা যেন দালালদের ধোঁকায় না পড়েন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দালালরা গ্রামের অসহায় মানুষকে সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখায়। এ কারণে অনেকে সর্বস্ব বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দেন।’

প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশের মিশন প্রধান জর্জি জিগাউরি এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ এমপি বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিদেশগামী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য বীমা পলিসি কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এবং প্রবাসী কর্মীদের মেধাবী সন্তানদের মাঝে বৃত্তি প্রদান করেন। দিবসটি উপলক্ষে তিনি সরকার ঘোষিত ৪২ জন প্রবাসী সিআইপি’র মধ্য থেকে দু’জন সিআইপিকে সম্মাননা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী পরে অভিবাসী মেলার উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

বিদেশে গমনেচ্ছুদের প্রশিক্ষণ এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা জানার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে দক্ষ কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা এবং ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’কে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ভাষা শিক্ষার ওপরও আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। তাই ৯টি ভাষা দিয়ে একটি অ্যাপস তৈরি করে দেয়া হয়েছে যাতে তারা সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা শিখতে পারেন। ইংরেজির সঙ্গে অন্য আরেকটি ভাষা, অর্থাৎ যে দেশে যাচ্ছে সে দেশের ভাষা যেন শিখতে পারেন তার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালার আলোকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোকে (বিএমইটি) বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৬টি ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি এবং ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৫৫টি ট্রেডে ৬ লাখ ৮২ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৪১টি কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আরও ৫০টি টিটিসি নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৪৯৩টি উপজেলাতেই এটি করে দেয়া হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। কারণ মাঝে মাঝে দেখা যায় অনেকে ট্রেনিংয়ের নামে যায়, কিন্তু ট্রেনিং নেয় না। কিন্তু সেটা এখন নিতে হবে। এখন প্রশিক্ষণটা বাধ্যতামূলক। আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বলব- এটার ওপর আরও গভীরভাবে নজর দিতে। যেন সঠিক ট্রেনিংটা নিয়েই সবাই প্রবাসে যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনশক্তি রফতানি নির্বিঘ্ন করার প্রয়াসে অভিবাসন ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনসহ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার অংশ হিসেবে সারা দেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার এবং প্রায় ৮ হাজার পোস্ট অফিসের ডিজিটালাইজেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। এই ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে বিদেশে গমনেচ্ছুরা আবেদন করতে পারেন এবং তাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। আমাদের প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সেখান থেকে বেছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করে বিদেশে পাঠাবে, আমরা সে ব্যবস্থা করেছি।’

জনশক্তি রফতানিতে যুক্ত সংস্থাগুলোকে পুনরায় সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকেও বলব, তারা শুধু নিজেদের অর্থ উপার্জনের জন্য অযথা কর্মীদের বিদেশে যেন না পাঠায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশ গমনেচ্ছু নারী কর্মীদের জন্য সিমের ব্যবস্থা সরকার করেছে। যাতে মোবাইল ফোনে তারা দেশে যোগাযোগ করতে পারেন।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘সরকার যে স্মার্টকার্ড দিচ্ছে তা বিদেশ গমনকালে যেমন হয়রানি দূর করবে, তেমনি দেশে ফেরার সময়ও বিমানবন্দরের হয়রানি দূর করবে।’

তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে এমন কিছু কর্মচারী থাকে যারা বিদেশ ফেরত কর্মী দেখলেই কিছু টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে বা এ ধরনের প্রবণতাটা লক্ষ্য করা যায়।’

প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে আলাদা ডেস্কের ব্যবস্থা সরকার করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে সিসি ক্যামেরা এবং সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হবে। যাতে প্রবাস থেকে ফিরতে গিয়ে কেউ বিমানবন্দরে কোনোরকম হয়রানির শিকার না হন।’ তিনি বলেন, ‘অভিবাসী কর্মীদের ও তাদের পরিবারের সুরক্ষা প্রদানে ওয়েজআর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদান, চিকিৎসা অনুদান, প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতা এবং প্রবাসী কর্মীর সন্তানদের বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ বছর থেকে বিদেশগামী কর্মীদের স্বল্প খরচে বীমার আওতাভুক্ত করা হচ্ছে। এ বীমার পলিসি মূল্যের অর্ধেক সরকার থেকে প্রদান করা হচ্ছে। আশা করা যায়, এতে প্রবাসী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে- আমাদের জনসংখ্যার ৬০ ভাগের বয়সই হচ্ছে ১৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। এই যুব সমাজকে দক্ষ যুব সমাজে পরিণত করতে হবে। সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে দেশে-বিদেশে কাজে লাগিয়ে আমরা দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’